কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বিভিন্ন নামের একটি গ্রাফিক্স। ছবি : সংগৃহীত।

সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল নাম এবং কিছু নামের ভুল উচ্চারণ!

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৫৫
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৫৫

(প্রিয়.কম) নাম- একজন মানুষের প্রথম ও প্রধান পরিচয়। নাম ছাড়া কোনো মানুষের পরিচয় কল্পনা করা যায় না। ইসলামও মানুষের নামের বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব প্রদান করেছে এবং সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখার ব্যাপারে দিক-নির্দেশনাসহ বিভিন্ন পাথেয় বাতলে দিয়েছে। মুসলিমরা ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কোরআন-হাদিসের দিক-নির্দেশনা মেনেই নাম রাখেন কিন্তু এই মাঝে কারো কারো নাম রাখা এবং নামের উচ্চারণ নিয়ে সমাজে বেশ কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল নাম ও নামের ভুল উচ্চারণ নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

১. আব্দুন নবী- একটি ভুল নাম । আমাদের সমাজে কোনো কোনো মানুষের এই নাম বা এ ধরনের নাম শোনা যায়। এভাবে কারো নাম রাখা ঠিক নয়। আব্দুল্লাহ অর্থ আল্লাহর বান্দা আর আব্দুন নবী অর্থ নবীর বান্দা। কোনো মানুষ নবীর বান্দা হতে পারে না; মানুষ নবীর উম্মত। হ্যাঁ, আব্দুন নবী এর আরেকটি অর্থেরও অবকাশ আছে। তা হল, নবীর গোলাম, কৃতদাস। কিন্তু প্রথম অর্থ ওটাই যা আগে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়াও হাদীস শরীফে এসেছে- আল্লাহ ছাড়া কারো সাথে ‘আব্দ’ শব্দযুক্ত নাম নবীজী পরিবর্তন করে দিয়েছেন। প্রসিদ্ধ সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা.-এর নাম ছিল, আবদে আম্র (আমরের বান্দা)। কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে, তাঁর নাম ছিল, আব্দুল কা‘বা (কা‘বার বান্দা)। ইসলাম গ্রহণের পর নবীজী তাঁর এ নাম পরিবর্তন করে রাখলেন, আবদুর রহমান (রহমানের বান্দা-আল্লাহর বান্দা)।  [মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৭৩১, ৫৩৩৫; মুজামে কাবীর, তবারানী, হাদীস ২৫৩, ২৫৪]

আরেক সাহাবীর নাম ছিল আব্দুল হাজার (পাথরের বান্দা)। নবীজী শুনলেন- তাকে আব্দুল হাজার বলে ডাকা হচ্ছে।  তাকে ডেকে বললেন, তোমার নাম কী? সে বলল, আব্দুল হাজার। তখন নবীজী বললেন, বরং তুমি আব্দুল্লাহ (আল্লাহ্র বান্দা)।  [আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৮১১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ২৫৯০১] সুতরাং শুধু নবী শব্দই নয়, আল্লাহ ছাড়া আর কারো সাথে আব্দ শব্দ যোগ করে নাম রাখা ঠিক নয়।

২. আম্বিয়া খাতুন- একটি ভুল নাম। এভাবে কারো নাম রাখা ভুল। কারণ আম্বিয়া হল,নবী শব্দের বহুবচন। অর্থ নবীগণ। তাহলে এটা কি কারো নাম হতে পারে? কুরআনে কারীমের একটি সূরার নাম ‘আম্বিয়া’ এবং কুরআনের বহু স্থানে আম্বিয়া শব্দটি এসেছে। সে কারণেই হয়ত শব্দটি কারো পছন্দ হয়েছে এবং তার কন্যার নাম রেখে দিয়েছে আম্বিয়া। কিন্তু নামটি রাখার পূর্বে যদি কোনো আলেমকে জিজ্ঞেস করে অর্থ জেনে নেয়া হত তাহলে হয়ত এ বিপত্তি ঘটত না। সুতরাং যে কোনো শব্দ পছন্দ হলেই সেটি নাম হিসেবে গ্রহণ করব না। বরং নাম রাখার পূর্বে জেনে নেব এ শব্দটি পুত্র বা কন্যার নাম রাখা যায় কি না। সাথে সাথে নামের বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা জেনে নিব; কোন নাম আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়, কোন ধরনের নাম রাখা যাবে, কোনটা যাবে না ইত্যাদি।

৩. ফাতিমাতুয যুহরা- একটি নামের ভুল উচ্চারণ। ‘যাহরা’ (الزَّهْرَاءُ ) নবীকন্যা ফাতেমা রা.-এর উপাধি হিসেবে প্রসিদ্ধ। সে হিসেবে এ উপাধিসহ তাঁর নাম উচ্চারণ করা হয় এভাবে- ফাতিমাতুয যাহরা। যাহরা অর্থ- উজ্জ্বল, ফর্সা, উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী, লাবণ্যময়ী ইত্যাদি। তারিখ ও তারাজিমের (ইতিহাস ও জীবনীগ্রন্থ) বিভিন্ন কিতাবে ফাতেমা রা.-এর নামের সাথে সাথে তাঁর এই লকব (উপাধি) উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ এটি উচ্চারণ করে এভাবে- ফাতিমাতুয যুহরা। যাহরা (الزَّهْرَاءُ) শব্দের ‘ز’-এ যবরের স্থলে পেশ দিয়ে। এটি ভুল উচ্চারণ। সঠিক উচ্চারণ, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, যাহরা (الزَّهْرَاءُ), যুহরা নয়।

৪. মুআজ্জিম বা মুআজ্জেম- নামের ভুল উচ্চারণ । যিনি আযান দেন তাকে মুআয্যিন বলে। এছাড়া সমাজে অনেকের নামও রাখা হয়ে এই নামে। কিন্তু কিছু মানুষ এ শব্দটি উচ্চারণ করেন এভাবে -‘মুআজ্জিম’ শেষে ‘ম’ (আরবীতে ‘মীম’) দিয়ে। এটি এ শব্দের ভুল উচ্চারণ। সঠিক উচ্চারণ হল, ‘মুআয্যিন’। আযান শব্দ থেকেই মুআয্যিন শব্দটি এসেছে। আযান শব্দটির শেষে যেমন ‘ন’ (আরবীতে ‘নূন’) তেমনি মুআয্যিন শব্দের শেষেও ‘ন’ (আরবীতে ‘নূন’) হবে। সুতরাং মুআজ্জিম না বলে বলতে হবে মুআয্যিন। 

৫. মেহবুব, রেহমান, মেহমুদ- নামের বিকৃত উচ্চারণ। অনেকেই এ নামগুলোকে এভাবে উচ্চারণ করে বা লেখে। এভাবে বলা বা লেখা দুটোই ভুল। এগুলোর সঠিক উচ্চারণ যথাক্রমে ‘মাহবুব’, ‘রহমান’, ‘মাহমুদ’। এগুলো আরবী নাম। প্রতিটি নামের প্রথম অক্ষরে যবর। ওভাবে উচ্চারণ করলে যবরের স্থলে যের হয়ে যায় যা সম্পূর্ণ ভুল। আর ‘রহমান’ নামটি আল্লাহর নাম। এটি নামের দ্বিতীয় অংশ হিসেবে ব্যবহার হয় যেমন মাহবুবুর রহমান। বিশেষত এটা আল্লাহর নাম হওয়ার কারণে এ নামটির বিকৃত উচ্চারণ বড় ধরনের অন্যায়।

সূত্র : গবেষণা ম্যাগাজিন আল কাউসার

প্রিয় ইসলাম/শামীমা সীমা