কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সোহেল রানা ও তার ছেলে মাশরুর পারভেজ/ ছবি: শামছুল হক রিপন/ প্রিয়.কম।

বাংলাদেশের ছবি কোমায় নয়; এটা লাইফ সাপোর্টে রয়েছে: সোহেল রানা

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৫১
আপডেট: ১০ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৫১

(প্রিয়.কম) জনপ্রিয় নায়ক ও প্রযোজক সোহেল রানা। তার ছেলে মাশরুর পারভেজ। তার অভিনীত ‘অদৃশ্য শত্রু’ নামে একটা সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। নায়ক হিসেবে অভিনয়ের পাশাপাশি দুই পরিচালকের একজন ছিলেন তিনি। এবার তিনি আরেকটি সিনেমা নিয়ে দর্শকের সামনে আসছেন। তার পরিচালনায় নির্মিত এবারের সিনেমার নাম ‘রাইয়ান’। ছবিটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রেও অভিনয় করেছেন মাশরুর।

প্রথম সিনেমায় অ্যাকশন ইমেজে দেখা গেলেও এতে অন্য রূপে আসছেন তিনি। ১১ আগস্ট মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাটি। এই ছবি দিয়েই পূর্ণ পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটছে তার। বাবা সোহেল রানা সন্তানের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। গত কয়েকদিন আগে উত্তরার বাসায় ভর দুপুরে সিনেমা বিভিন্ন গল্প ও ‘রাইয়ান’ ছবি নিয়ে প্রিয়.কম এর সাথে গল্পের ঝাঁপি মেলে বসেছিলেন পিতা-পুত্র।

প্রিয়.কম: সোহেল রানা, আপনি বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ ছবির প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এরপর প্রযোজক, অভিনেতা, পরিচালক। ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে সফল। এদিকে আপনার ছেলে মাশরুর পারভেজের চলচ্চিত্রে যাত্রা ‘অদৃশ্য শত্রু’ নামে একটা সিনেমা দিয়ে। এরপর এখন ‘রাইয়ান’। এই সিনেমাতে যে নায়ক সেই আবার পরিচালক ও প্রযোজক। কাজগুলো কতটা কঠিন?

সোহেল রানা: সিনেমার কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি একটু বাস্তব জীবনে যাই। আমি এই প্রশ্নটার উত্তর সরাসরি দিতে চাই না। একটু অন্যভাবে দিতে চাই। আমার ছেলে যদি থাকে, আমি তাকে ভালোবাসি। তার জীবনযাপনের জন্য যা যা দরকার আমি তাকে তাই দিব। আমার মেয়ে যদি থাকে, তার শৈশব থেকে শুরু করে বড় হওয়া, তারপর তার বিয়ে, সবকিছুই বাবা-মাকে দেখতে হয়। আর আমার স্ত্রী। তার প্রতিও আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। মানে একজন মানুষকে কতো কিছুর দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমি মনে করি একজন মানুষ শুধু একটি কাজ করবে, বিষয়টি এমন নয়। প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা তিনটি আলাদা মাধ্যম হতে পারে। কিন্তু তিনটি সত্ত্বাতে কাজ করতে অসুবিধা কী?

প্রিয়.কম: একই প্রশ্ন করা হয় সোহেল রানার পুত্র ও ‘রাইয়ান’ ছবিটির নায়ক, পরিচালক ও প্রযোজক মাশরুর পারভেজকে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কাজটি করতে গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

মাশরুর পারভেজ: আমি শুধু তিনটি নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে কাজ করেছি। ছবির ক্রেডিটে লেখা আছে ব্রাকগ্রাউন্ট, পোস্টার সব জায়গায় আমার নাম থাকবে। আমি আমার বুকিং এজেন্টকে গিয়ে বলেছি, কীভাবে প্ল্যানিং করলে ভাল হয়। আমি সরাসরি হল মালিকদের সঙ্গে কথা বলি। এমন কী, পোস্টার ডেলিভারিটাও আমি করি। গল্প, সংলাপও আমার। এজন্য মানসিক অনেক যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়েছে।

একজন মানুষের সুস্থ জীবনযাপন অনেকভাবেই ব্যহত হয়। ছবির বাইরে যে সব ঝামেলা, বিশেষ করে ফিল্ম পলিটিক্স। এটার মুখোমুখি আমাকে হতে হয়েছে। কারণ এটা বাংলাদেশ। আমার বেশিরভাগ বন্ধুরা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমার বন্ধুকে আমি বলতে পারি না, ‘বন্ধু তোর আইডিয়া আছে? এখানে (ফিল্মে) আয়।’ আমি তাদের দোষও দেই না। তোমরা কেন দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছো? পরিস্থতিটা এতোই খারাপ। আমি সোহেল রানার ছেলে, আমাকে যদি এতোটা ভুক্তভোগি হতে হয়। তাহলে অন্যদের কী হবে?

সোহেল রানা ও তার ছেলে মাশরুর পারভেজ/ ছবি: শামছুল হক রিপন/ প্রিয়.কম

প্রিয়.কম: আচ্ছা, এতে কোয়ালিটি কোয়ান্টিটির একটি বিষয় চলে আসে কী, বলতে চাচ্ছি যে কোন একটি বিষয়ের হেরফের হতে পারে?

সোহেল রানা: আমার তো মনে হয় না। আর এর কারণও রয়েছে। আমরা যদি একজন কৃষকের কথা ভাবি, সে ধানটি চাষ করছে। সেটি কি এমনিই হয়ে যাচ্ছে? সে কি জমি চাষ করে না? বীজ বপন করে না?  বীজটা বড় হবে। এরপর চাষ করতে হয়। তাতে পানি দিতে হয়। সে বিষয়ে তার টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকতে হচ্ছে। আর যে কোন কাজ করতে গেলে কষ্ট করতে হবেই। পৃথিবীটা স্বর্গ নয়। ‘কুন ফাইয়া কুন’ বললেন আর হয়ে গেল।বিষয়টি তো তেমন নয়। অনেক ধাপ পেরিয়ে আসতে হয়েছে।

চলচ্চিত্র জগতের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় যেমন আগে ছিল শুধু হিরো। পরিচালনা সাধারনত করত না। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে প্রথম হিরো প্রযোজক হলাম আমি। একজন পরিচালককে ভালো টেকনিশিয়ান হওয়ার দরকার নাই। তবে সব বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। আর মানুষ কখনও একটি বিষয়ের জন্য কিছু করে না। সাথে আরও বিভিন্ন বিষয় জড়িত থাকে। কিছু লোক আছে যারা অল্প কিছু বিষয় নিজের হাতে রাখে। কিছু লোক আছে সে ধারায় বিশ্বাসী নয়। যারা সৃষ্টি করার মন নিয়ে আসে, তারা ব্যতিক্রম। সে ফিল্ম নির্মাণ করতে ভালোবাসে। যার কারণে সে পুরোপুরি সব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত থাকে।

আমি ত্রিশটি ছবি প্রযোজনা করেছি। আমি সব কাজ নিজে করি নি। ওর এই ভিন্নতাটা আমি পছন্দ করি। পৃথিবীর একেকজন পরিচালক একেক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে।  আমি এক রকম করেছি। আমার ছেলে আরেকরকম করেছে। আমি একভাবে ভালোবেসেছি। আমার ছেলে আরেকভাবে ভালোবাসে। আমি প্রথমে কাজ করেছি জনপ্রিয়তার জন্য। তারপর টাকা তারপর খ্যাতির জন্য। আমি কালচারকে বাড়ানোর জন্য, বাঙালি সংস্কৃতির জন্য কোন কিছু করি নাই। আমি এই তিনটাই পেয়েছি। আমার ছেলে এগুলো চায় না। সে শুধু ফিল্মকে ভালোবাসতে চায়।  

ছবিতে ব্যবসা হবে কি হবে না, এসব নিয়ে তার কোন আলাদা ভাবনা নেই। যদি বলি ছবি লোক দেখে না। ও বলবে না দেখুক। সে বলে, আমি ছবি নির্মাণ করি নিজের জন্য। এটা তার ভার্সন। যেটা আমার সঙ্গে যায় না। একজন পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনেতা হিসেবে বিষয়গুলো আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। আমি ফিল্মের হিরো হিসেবে চাইব আমার পিছনে সব সময় ৫০টা ক্যামেরা থাকুক। আর আমার ছেলের পিছনে দুটি ক্যামেরা থাকলে কিছুক্ষন কথা বললেই সে টায়ার্ড হয়ে যায়।

কে কি বললো তা নিয়ে তার মাথায় নেই। তবে ওর কাছে ছবি ভালো লাগতে হবে। আর এজন্য যে কষ্টটা সে দেয়, আমি দেখছি সে বিষয়টিকে ভালোবাসে। কারণ পৃথিবীর কোন পরিচালক এসে যাতে বলতে না পারে এটা এভাবে না করে ওভাবে করলে ভালো হতো। সেটা ভিন্ন মত হতে পারে। তবে এর জন্য আমার ছেলের সঙ্গে বিতর্কে আসতে হবে। পরিচালক হিসেবে বলব, সে একজন সুপরিচিত এবং বড় পরিচালক হবে। তবে আমি নিজেই জানি ওর ছবি চলবে না। আমার ছেলে বলে ওর পক্ষে কথা বলব। সেটা তেমন নয়।

যারা না বুঝে ছবি দেখে কিংবা তথাকথিত কিছু লোক ছবিটি দেখবে। আর না হলে যারা একেবারে বোদ্ধা, তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে। বাংলাদেশের তথাকথিত বাংলা ছবি নয় এ ছবি। ওর যে ছবি তার কাছে টেকনিক্যালি পৌঁছতে বাংলা ছবির অনেক সময় লাগবে। আর পৌঁছাতেও ঝামেলা হবে। এটা বাস্তবতা। ছবিটি যে চলবে। তাও না। আমি একজন পরিচালক হিসেবে বলব এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী ছবি।  

মাশরুর পারভেজ: অভিনয়ের ক্ষেত্রে একটু কমপ্রোমাইজ হয়। কারণ পরিচালনা করা ও অভিনয় করা এক সঙ্গে সম্ভব নয়। এটা আমি মানবো। তবে পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার ভিন্ন কথা। সেখানে একটু কমপ্রোমাইজ হয়। কিন্তু এটা সহ্য করতে হবে। মানুষ তো একটাই। অভিনয় করতে গেলে মাথায় সব সময় পরিচালনার চিন্তা থাকেই। তাই জোর করে একজন সহকারি পরিচালক রেখেছি। পারলে একজনও রাখতাম না। বিষয়টা হলো আমি এভাবে কাজ করি। বাবা ছয় মাসের মধ্যে একটি ফিল্মের কাজ শেষ করে ফেলত। একটি অসাধারণ ছবি তৈরি করেছে। এটা আমার স্টাইল। আমি অন্যভাবে করতে পারি না। আর আমি আমার পরবর্তী ছবি নির্মাণ করব তিন বছর পর। এর আগে নয়।

প্রিয়.কম: বাবা হিসেবে ছেলের মধ্যে কোন বিষয়টির ছায়া দেখতে পান?

সোহেল রানা: আমরা ছবি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম। আর ও কোন ছবিই দেখে না। তার তিন-চারজন পছন্দের পরিচালক হলে সে ছবি দেখে। আর না হলে না। সে একটা পাগল বলে আমি মনে করি। আর সব পাগলই জিনিয়াস। আর সেদিক থেকে আমার ছেলে জিনিয়াস। 

প্রিয়.কম: মাশরুর পারভেজ, আপনি আপনার বাবার কোন বিষয়টি মনে রাখার চেষ্টা করেন, সিনেমার নির্মাণ কিংবা অভিনয় করার ক্ষেত্রে?

মাশরুর পারভেজ: একটা বিষয় বলি, আমার যে আইটি ফার্ম রয়েছে সেটি আমার প্যাশন প্রজেক্ট না। সহজ ভাষায় বললে আমার টাকা লাগবে। সবার টাকা লাগে। আমার বাবার টাকা আছে-চাইলে দেয়। কিন্তু নিজের তো এ আর্থিক স্বাধীনতার একটি বিষয় থাকে। ফিল্মের ক্ষেত্রে আমি ছবিটির গল্প নিয়ে যখন অন্য প্রযোজকদের কাছে যাই, তারা আমার চিত্রনাট্য না পড়েই বলে নায়িকা কে? আমি বলি এইটা নায়িকা কিংবা হিরো ফোকাসড গল্প না।

তারপর এরা রিপ্লাই করত এই মেয়েটাকে নিলে ভালো হয়। এক কোটি টাকা দিব। এর বাইরে আর কোন কথা বলার সুযোগ থাকে না। আমি জানি টাকা নিলে অর্থনৈতিকভাবে আরও স্ট্রং থাকতাম। কিন্তু আমার সে ইচ্ছে নেই। কাজটা ভালো করা জরুরি। সেটাই ফ্যাক্ট। পরিবার থেকে ফিল্ম নির্মাণে কখনও বাধা দেয় নি। তবে আবার যে সহযোগিতা করেছে তাও নয়। আর ছবির মেকিংয়ে যখন থাকি তখন আব্বুর চিন্তা আসলে থাকে না।

প্রিয়.কম: আপনার নির্মাণের ফিলোসফিক্যাল জায়গাটি বলবেন?

মাশরুর পারভেজ: নির্মাণ করার সময় দর্শকদের কথাও ভাবি না। পরিচালকরা বাহবা দিবে, আমি কোন পরিচালকে খুশি করার জন্য বানাই না। আমি যে গল্পটা তিন বছর সময় নিয়ে লিখেছি। এটিকে কিন্তু ভিজুয়্যালি তুলে ধরতে হবে। একজন ফিল্ম মেকার হয়ে বিষয়টা আমার জন্য সারপ্রাইজিং। জিনিসটা এখন দেখতে কেমন? বাবা ভাল-মন্দ বলতে পারে। তবে তার আগে আমার কাছে ভালো লাগতে হবে।

প্রিয়.কম: সিনেমা নির্মাণের প্যাশনটা ছেলের মধ্যে কেমন দেখতে পান?

সোহেল রানা: আমি তাকে ইলাবোরেট করতে পারব না। কারণ সে ব্যতিক্রম। আমি ওকে বুঝতে পারি না। আমি ছবি বানাব জনপ্রিয়তা চাইব না। আমি ছবি বানাব ক্যামেরায় ছবি তুলতে চাইব না। আমি টাকা চাইব না। ওর মধ্যে আছে- আমি ছবি ভালোবাসি, বানাতে পছন্দ করি, আমার জন্য ছবি বানাব।

প্রিয়.কম: তরুণ নির্মাতাদের জন্য ছবি নির্মাণে কতটা সহায়ক বর্তমান ইন্ডাস্ট্রি?

সোহেল রানা: বর্তমান সময়টাকে অনেকে ঘোলাটে বলে ব্যাখ্যা করছেন। বিষয়টি তো ঘোলাটে করা হয়েছে। যা করছে সরকার। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে কিংবা কোন বাচ্চাকে তার মা যদি মেরে ফেলতে চায়, তাহলে কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না। সরকার বাংলা চলচ্চিত্রকে নিজেই কিল করতে চাইছে। তাই বাঁচাবে কে? এটা ঠিক হতে ছয় মাস সময় লাগবে। এখনকর সমস্যার সমাধান করার জন্য বিরাট কিছু করার দরকার নাই।

আমাদের দুভাগ্য আমরা সব সময় সৎ মা সুলভ সরকার পাচ্ছি সব সময়। আর সৎ মা কখনও ভালো মা হতে পারে না। তবে ব্যতিক্রম ঘটনা নেই আমাদের এখানে। যার কারণেই এ অবস্থা। নতুনরা নতুন চিন্তা নিয়ে আসবে। পুরানোদের সঙ্গে সম্মেলন ঘটাবে। হবে কী। ইতোমধ্যেই মৃত্যুপথযাত্রী। বাংলাদেশের ছবি কোমায় নয়; এটা লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত চাইবে ততক্ষণ পর্যন্ত এমন চলবেই।

আমি বিশ্বাস করি মানুষে যে যেটা পছন্দ করে সেটি করতে পারলে সে ভালো কিছু করবে। এর ভবিষ্যত কী তা আমি জানি। তারপরও বাধা দিচ্ছি না। আস্তে আস্তে সরকার পরিবর্তন হবে। একটা সরকার আসবে। সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও কালচারের দিকে মনোযোগ দেবে। এটা বুঝবে। তখনই পরিবর্তন হবে।

সোহেল রানা ও তার ছেলে মাশরুর পারভেজ/ ছবি: শামছুল হক রিপন/ প্রিয়.কম

প্রিয়.কম: নির্মাণ করতে গিয়ে আপনি কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?

মাশরুর পারভেজ: আমি অনেক কিছুই সহ্য করতে পারি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে অনেক ধৈর্য্য শক্তি দিয়েছে। যেটা সবচেয়ে খারাপ লেগেছে আমাদের দেশে যখন কলকাতার ছবি মুক্তি পায় তারও ছয়মাস আগে বুকিং দিয়ে রাখতে পারে। যদিও না দেয় কোনক্রমে তারা যদি জানাতে পারে আগামী সপ্তাহে ছবি মুক্তি পাবে, শিডিউল খালি করে দেয়। আগে থেকে চুক্তি করা থাকে তাহলে ওদের চিনবে না। কিছু করবেই না। আমরা কিন্তু একটা স্ট্রাগলিং ইন্ডাস্ট্রি। আর এই সময়টাতে কেনো দেশীয় প্রডাক্টকে কেনো ডুবিয়ে রাখবেন? আমি সেটা বুঝি না। বিষয়টা হচ্ছে নিজের ঘরের সন্তানকে খাওয়া না দিয়ে রাস্তার কেউ বাসায় আসছে তাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।

প্রিয়.কম: ‘রাইয়ান’ ছবির গল্পটি একজন পরিশ্রমী নতুন চলচ্চিত্র লেখককে নিয়ে। যিনি সংগ্রাম করে চলেছেন সাফল্যের জন্য। গল্পটি মৌলিক। গল্পটির ম্যাসেজ দর্শকদের মধ্যে কতটা প্রভাব পড়বে?

সোহেল রানা: সারা পৃথিবীতে এটাই প্রচারিত ‘ফিল্ম ইজ দ্য রিয়েল মিডিয়া’। যেটা মানুষের উপর ম্যাসেজ ক্রিয়েট করতে পারে। মানুষকে পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু কথাটা হচ্ছে- সেটা হতে দিতে হবে তো। এখানে প্রেমের ছাড়া আর কোন ম্যাসেজ দেওয়ার ছবি তো বানাতে দেওয়া হয় না। এখানে একমাত্র ভূতের ছবি বানাতে পার। রাজনীতিবিদ খারাপ কিন্তু দেখানো যাবে না। পুলিশ ঘুষ খায় দেখাতে পারবে? কোন জায়গা তো ফ্রি দেওয়া হয় নি। তুমি ম্যাসেজ দিয়ে মানুষ বোঝাবে। এর বাইরে কিছু করতে পারবে না। সে সুযোগ নেই। এটা মিনিংলেস।

প্রিয়.কম: আপনার গল্প বলার ভঙ্গিটা ঠিক কেমন দেখবে দর্শক, পর্দায়?

মাশরুর পারভেজ: এই ছবিটা আসলে মানুষের মাথার উপর দিয়ে চলে যাবে। হাই থট ছবি। এটা ওইটাও না। পরিচালকের একটা ভঙ্গি থাকে। সে কারও না কারও জন্য কাজটি করে। যখন কেউ টার্গেট ছাড়া কাজ করে আর আউটপুটটা বের হয়। তখন সেটি বলা মুশকিল। অডিয়েন্স কিভাবে রেসপন্স করবে। আমি আসলে রিঅ্যাক্ট করবে। এটা স্ল্যো মুভি ছবি না। এটা আর্ট ফিল্ম না। এটা ফিল্ম। সেখানে ড্রামাটিক বিষয় থাকে। তবে আমার পরের ছবির নামও এ ছবির মধ্যেই রয়েছে। এ ছবিতে নতুনত্ব আছে। তবে আমার কথা হলো মানুষ কি আসলে নতুনত্ব চায়?

প্রিয়.কম: দর্শকদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

সোহেল রানা: বাংলা ছবির দর্শক যারা, আবার অনেকেই ছবি দেখে বলেন আবার না দেখেও বলেন ছবি ভালো না। তারা দয়া করে ছবিটি দেখবেন। দেখতে গিয়ে যদি মনে হয় ভাল না। তাহলে পোস্টার পাবলিসিটি ছাপিয়ে দেন। আর যদি ভাল হয়। তাহলে আপনার বন্ধুদের বলুন। এটা তথাকথিত বাংলা ছবি না। আমার মনে হয় আমি ১৫টি হল পাব। আর না হলে ১০। তবে আমার দাদার একটি কথা মেনে চলি। ট্রাই ফর দ্য বেস্ট। রেডি ফর দ্য ওরস্ট। পরের ছবিটা তিন বছর আগে আসবে না।

মাশরুর পারভেজ: বাবার কথার সূত্র ধরে আমিও একই কথা বলতে চাই। আর আমার মনে হয় সিনেমাটি দেখে কেউ বোর হবে না। এতটুকু ভরসা দিতে পারি।

প্রিয়.কম: প্রিয়কে সময় দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

প্রিয় বিনোদন/গোরা