কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছোট ছোট হতাশাগুলোই যাবতীয় সুখের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে, ছবি: রিপন, প্রিয়.কম

আপনি কী মানসিকভাবে দুর্বল ও ক্লান্ত?

বুশরা আমিন তুবা
ফিচার লেখক, প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৮
আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৮

(প্রিয়.কম) আপনার কি কখনো সবকিছু ছেড়েছুড়ে যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকে হাঁটতে ইচ্ছে করে? কিংবা পুরনো আবাসস্থল ছেড়ে নতুন জায়গায় গিয়ে বসতি গড়তে ইচ্ছে করে সবকিছু ভালো হয়ে যাবে এ আশায়? এগুলো যদি আপনার সঙ্গে হয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে যে আপনার আত্মা এবং সত্তা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে। শুনতে হয়তো খুব আশ্চর্যজনক লাগতে পারে কিন্তু এটিই সত্য। জীবনের অনেক বাঁকেই আমরা এমন সকল জিনিসের সঙ্গে জড়িয়ে যাই যেগুলো ক্ষণিকের জন্য আমাদের আনন্দ দান করলেও আত্মায় পরিপূর্ণতা আনতে পারে না। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে বেঁচে থাকাটাই অনেক, কিন্তু আদতে কিন্তু এমন নয়!

আমরা কেউই নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে পৃথিবীতে পা রাখি না। আমরা প্রত্যেকেই ধীরে ধীরে বড় হই এবং বুঝতে ও জানতে শিখি যে আমরা আদতে কী চাই। জীবন আপনাকে যা যা দান করেছে, তা নিয়ে যদি আপনি কোনভাবেই সন্তুষ্ট থাকতে না পারেন, তবে বুঝতে হবে যে আপনার একটু বিরতির প্রয়োজন। নিচের লক্ষণগুলো তা-ই প্রমাণ করে যে আপনার মানসিক অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে এবং আপনার সাহায্যের প্রয়োজন।

আপনি আপনার ভুল থেকে শিখছেন না

আমরা মানুষ এবং ভুল থেকেই আমরা সকলে শিক্ষা অর্জন করি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভুল থেকে শেখার মধ্যেই বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা মস্ত বড় ভুল তখনই করি যখন বার বার ভুল করা সত্ত্বেও সেখান থেকে কিছু শিখি না। এতে করে আপনি নিজেকেই দোষারোপ করা শুরু করেন এবং নিজেকে ভুল বুঝতে থাকেন। এর পরিবর্তে, আপনি যা করতে পারেন তা হলো পূর্বে কৃত ভুল থেকেই শেখার চেষ্টা করুন এবং পরবর্তীতে একই ভুল যেন আর না করেন সেদিকে খেয়াল রাখুন।

অজুহাত প্রদর্শন করা  

আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে অজুহাত প্রদর্শন করলেই যেকোন ভুল কিংবা বিপজ্জনক পরিস্থিতি হতে আপনি উদ্ধার পেয়ে যাবেন। কিন্তু আসল কথা কী জানেন, এতে করে আপনার পরিস্থিতি আরো বিগড়ে যায়? আপনার মন এবং মনন মিথ্যা পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে না পেরে হাল ছেড়ে দেয়। আপনার আত্মা একদম নিখুঁত ও পরিশোধিত, মিথ্যা অজুহাতের সংস্পর্শে এনে এটিকে কলুষিত করবেন না।

ভবিষ্যতকে ভয় পাওয়া

ভবিষ্যত অনিশ্চিত। কিন্তু এটি জেনেও আমরা অজানা জায়গা ও মানুষের কথা চিন্তা করে অস্থির হয়ে পড়ি। আমরা মনে রাখি না যে, এতে করে আমরা নিজেদের বর্তমান সুন্দর সময়গুলো নষ্ট করছি। আগামীকাল কী ঘটবে সে ব্যাপারে নেতিবাচক ঘটনা মনের মধ্যে জড়ো না করে আজকের দিনটা পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করুন এবং বর্তমান সময়েই অবস্থান করুন। আপনার হৃদয় মুক্ত এবং নির্ভীক, তাকে সেভাবেই থাকতে দিন।

অতীতকে আঁকড়ে রাখা

অতীতে যা-ই ঘটেছে তা আপনি কোনভাবেই পরিবর্তন করতে পারবেন না। আপনার মন যদিও এটা জানে তবুও আপনি অতীতেই বসবাস করছেন। এতে করে, সামনের দিনে অগ্রসর হবার বদলে আপনি দিনের পর দিন নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে পিছু হটছেন। আপনি ভালোমতই নিজেকে এবং নিজের অতীতকে চেনেন। এটিকে আপন অবস্থানে থাকতে দিন।

নেতিবাচক আত্ম-বিশ্লেষণ

আপনিই নিজের সবচাইতে বড় সমালোচক এবং অনেক সময় সবচেয়ে মন্দ সমালোচক ও বটে। নিজের ব্যাপারে নেতিবাচক বলতে বলতে আপনি নিজস্ব আত্মাকে একেবারে বিষিয়ে তোলেন এবং স্বতস্ফূর্তমূলক চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নেতিবাচক ও নিন্দনীয় চিন্তায় ব্যয় করার চাইতে অন্যদিকে মনোনিবেশ করুন। ইতিবাচক ভাবনায় নিজেকে জড়িয়ে রাখুন, সময়গুলো ভালো কাটবে।

আপনার দয়ালু মনোবৃত্তিকে দুর্বলতা হিসেবে প্রশ্রয় দেওয়া

আপনি যদি এমন ব্যক্তি হোন, যিনি মানুষকে সাহায্য করতে বেশ ভালোবাসেন কিন্তু বদলে কোন প্রতিদান নেন না এবং মানুষ আপনাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করে, তবে আপনি কিন্তু বেশ বড় ভুল করছেন। আপনি যেমন উত্তর কিংবা প্রতিদান আশা করেন, সে অনুরূপ কিছু না পেয়ে থাকলে আপনার মন ধরেই নেয় যে আপনি কোন একটা জায়গায় ভুল করেছেন। মানুষ যেন কোনভাবেই আপনার দয়ালু মনোবৃত্তিকে ব্যবহার করতে না পারে। নিজের মূল্য বুঝতে শিখুন এবং স্বপক্ষে কথা বলুন।

ইচ্ছার বাইরে কোন কাজ করা

আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে অনেক টাকা-পয়সা উপার্জন করে বিলাসবহুল বাড়িতে থাকলেই আপনার জীবনের সকল চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ হবে। রুপালী দুনিয়ার চলচ্চিত্রে এগুলো দেখতে কিন্তু বেশ লাগে। কিন্তু আপনি কী জানেন যে আপনার আত্মা অন্য কিছু চায় আপনার কাছ থেকে? আপনার মনোবৃত্তি এমন কিছুর সংস্পর্শে আসতে চায় যা আপনাকে সুখ ও শান্তি এনে দেবে। এ ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট রুটিনের ভেতরে আসার দরকার নেই। উদ্যমী এবং পরিশ্রমী হোন। তাতেই আপনার মঙ্গল।

নিজের সঙ্গে সত্যতা বজায় রাখুন

মাঝেমধ্যে অন্যের অনুরোধ রক্ষার্থে আমাদের এমন অনেক কাজ করতে হয় যেগুলো করার কোন ইচ্ছাই থাকেনা আমাদের। এ কাজ করার অর্থই হলো আপনি নিজের সঙ্গে সত্য ব্যবহার করছেন না। এমন কিছু কাজ করার চেষ্টা করুন যেটি করতে আপনি যথেষ্ট আনন্দিত বোধ করবেন এবং আপনার নীতির বিরোধ হবে না। অন্য কেউ যেন আপনার জীবনে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেদিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখুন।

মুখে ‘হ্যাঁ’ বললেও মনে মনে ‘না’ বলা

আপনার জীবনের সবচেয়ে গর্হিত অপরাধ এটি। আপনার আত্মা ও বিবেক অবশ্যই এটির দায়ভার বহন করে থাকবে। মনে মনে না চেয়েও অন্য কারো কথায় আপনি যদি কোন কাজ সম্পাদন করে থাকেন তবে আপনি নিজেই নিজেকে ছোট করছেন। সেটি আপনার জীবনে আদতে কোন ভালো লক্ষণ বয়ে আনবে না।

এমন কিছু আঁকড়ে রাখা যা আদতে আপনার কোন কাজে আসবে না

আপনি প্রচণ্ড যত্নে রাখেন এমন কোন মানুষ কিংবা কোন জিনিস সহজে ছেড়ে দেওয়া বড় দুষ্কর। কিন্তু সেটি বয়ে নিয়েও আপনি সে কষ্ট বাড়িয়ে চলছেন বহুগুণে। আপনার জীবনে কোন মূল্য রাখেনা এমন কোন বিষয় মনের মধ্যে রেখে দেওয়ার কোন মানে হয় না। ছেড়ে দিন। নিজে অন্তত ভালো মত বাঁচুন।

বিষাক্ত মানুষকে আপন করে নেওয়া

আপনার সঙ্গে অনেক সময় অবস্থান করেছেন এমন মানুষকে বিদায় জানানো খুব কষ্টের। কিন্তু সে মানুষ যদি ক্রমাগতভাবে আপনার জীবনে নেতিবাচকতা ছড়াতেই থাকেন তাহলে তাঁকে জীবনে রেখে শুধু শুধু কষ্ট পাবার কী দরকার? মনের দরজা খুলে দিন যেন তিনি স্বাধীনভাবে প্রস্থান করতে পারেন। এ ব্যাপারে হীনমন্যতায় ভোগার কিংবা ইতস্তত বোধ করার কোন প্রয়োজন নেই।

নিজেকে পর্যাপ্ত ভালো না বাসা

এটি সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। আপনি যদি নিজেকেই ভালোবাসতে না পারেন, তাহলে জীবনের যাবতীয় সত্যতা কিভাবে উপলব্ধি করবেন? আপনার মনন ভালোবাসা এবং আকর্ষণ খোঁজ করে সর্বত্র। জীবনের প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষেত্রকে ভালোবাসার চেষ্টা করুন। নিজেকে গ্রহণ করে নিন পরম সম্মানের সঙ্গে। উজ্জ্বলতায় ভরিয়ে দিন আশেপাশের সকল ক্ষেত্র।

এ লক্ষণগুলো কী আপনি দিনের পর দিন বয়ে বেরাচ্ছেন? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তবে আজ থেকেই নিজেকে শুধরে ফেলুন। নিজেকে ভালোবাসুন এবং সরবাগ্রে স্থান সিন। শুভকামনা রইলো আপনার জন্যে। 

সূত্র: MEAWW

প্রিয় লাইফ/ কে এন দেয়া