কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

হোক সে বিখ্যাত হ্যারি পটার কিংবা ওয়াল্টার হোয়াইট, স্বপ্নীলের হাতের জাদুর ছোঁয়ায় সকলেই যেন একদম জীবন্ত হয়ে যায়! ছবি কৃতজ্ঞতা: সারাবান তাহুরা স্বপ্নীল।

অবিশ্বাস্য এই ছবিগুলো এঁকেছেন বাংলাদেশেরই এক মেয়ে! (দেখুন ছবিতে)

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:২২
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:২২

(প্রিয়.কম) ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তিনি তার বাবার কাছে আবদার করেছিলেন আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা বাবা খুব গম্ভীর গলায় উত্তর দিয়েছিলেন, "পড়ালেখা কর সেটাই কাজে দেবে, আর আর্ট সেটা এমনিই শিখে যাবে!" সেদিনে বাবার কথা ভীষণ রাগ আর জিদ কাজ করেছিল তার মনে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন জীবনেও আর ছবি আঁকা শিখবেন না তিনি, যতটুকু নিজে পারবেন ততটুকুই আঁকবেন। এরপর নিজে নিজেই শিখে ছবি এঁকে প্রথম যেদিন তার আঁকা ছবি বিক্রি করলেন সেদিন তার বাবার কাছে গিয়ে বলেছিলেন, "ঠিক করেছিলে আর্ট শিখতে না দিয়ে, শিখতে দিলে হয়তো জিদটা থাকত না আর আমি আজকের এই পর্যায়ে আসতাম না।" এই কথা বলে বাবা-মেয়ে দুইজনেই খুব হেসেছিলেন সেদিন।

স্বপ্নীল

যার গল্প করা হচ্ছিল তার নাম সারাবান তাহুরা স্বপ্নীল। বর্তমানে পড়ালেখা করছেন এআইইউবি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। তার ছবি আঁকাআঁকির শুরুটা হয় একেবারে ছোটবেলা থেকে যখন তিনি প্রথম হাতে রঙপেন্সিল ধরেছিলেন। তবে বাবার উপর অভিমান করেই আসল আঁকাআকির পর্বের শুরুটা হয় তার। এরই মধ্যে বিভিন্ন আর্ট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণও করেছেন স্বপ্নীল।

ছবি ১

ছবি আঁকাআঁকির শুরুতে তার মাথায় কাজ করত, আত্মীয় বা বন্ধুদের জন্মদিনে কোন কিছু উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য নিজের হাতে আঁকা ছবি দিবেন তিনি। যদিও প্রথম দিকে তার ছবি আঁকার হাত ছিল খুবই কাঁচা।

ছবি ২

স্বপ্নীল আগেই বলে দিয়েছেন ছবি আঁকা তিনি কখনোই শেখেননি। তবে এতো সুন্দর তিনি আঁকেন কীভাবে? তার মতে এইসকল ক্রিয়েটিভ দিকগুলো অনেকটা গড গিফটেড। স্বপ্নীলের আম্মু খুবই ক্রিয়েটিভ একজন মানুষ। তাই তার মতে, তার মায়ের কাছ থেকেই তিনি ছবি আঁকার এই দারুণ গুনটি পেয়েছেন।

ছবি ৩

তার ছবি আঁকাআঁকির জন্য তিনি আগে ব্যবহার করতেন গ্রাফাইট পেন্সিল, এরপর থেকে তিনি চারকোল দিয়ে ছবি আঁকা শুরু করেন। এখনও তিনি চারকোল দিয়েই ছবি আঁকছেন।

তার ছবি আঁকাআঁকির শুরুটা যদিও হয়েছে ছোট থেকেই, কিন্তু এমন প্রবলভাবে ছবি আঁকার উপরে তার নেশাটা এসেছে বিগত দুই বছর ধরে। একটা ছবি সম্পূর্ণ শেষ করতে প্রথম দিকে তার সময় লাগত ৫-৬ ঘন্টা অব্দি। তবে এখন একটা ছবি সম্পূর্ণ শেষ করতে তার সময় লাগে মাত্র ২-৩ ঘন্টা! মূলত তিনি পোর্ট্রেইট করতে ভালোবাসেন। বিভিন্ন মানুষের অথবা প্রাণীর ছবি আঁকতে পছন্দ করেন স্বপ্নীল।

ছবি ৪

যত্ন নিয়ে তৈরি করা প্রতিটা কাজ, প্রতিটা ছবিই তার নিজের কাছে অসম্ভব প্রিয় হবে এটা জানা কথা। তবুও স্বপ্নীলের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তার আঁকা ২০০ টি ছবির মাঝে কোন ছবিটা তার সবচেয়ে বেশী প্রিয়। তিনি বলেছেন, ড্যানিয়েল রেডক্লিফ (হ্যারি পটার) এর ছবিটি তার সবচেয়ে বেশী প্রিয়, পছন্দের এবং ভালোবাসার। এই ছবিটি সম্পূর্ণ এঁকে শেষ করতে তার সময় লেগেছিল ৬ ঘন্টা। এই ছবির ডিটেইলিং এর কাজ তিনি খুব যত্ন করে একদম নিখুঁতভাবে শেষ করেছেন।

ছবি ৫

আচ্ছা, বলতে পারেন একজন মানুষ তার কাজকে কতটুকু ভালোবাসতে পারেন? বেঁচে থাকার জন্যে একজন মানুষ নিঃশ্বাস নেয়, কারণ মানুষ বেঁচে থাকতে ভালোবাসে! ঠিক একইভাবে স্বপ্নীল ভালোবাসেন ছবি আঁকতে। ছবি আঁকার ব্যাপারটা তার কাছে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতোই!

ছবি ৬

তবে খুবই মজার একটা কথা জানান তিনি তার ছবি আঁকার প্রসঙ্গে। তার এই দূর্দান্ত ছবি আঁকার পেছনে কোন আর্টিস্ট এর অনুপ্রেরণা নেই! তার অনুপ্রেরণা তিনি নিজেই হতে চান। এমনকি নিজের কাজের ক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন তিনি। নিজেকে তিনি বলেন- এটা তার অন্যতম একটি দারুণ গুণ, যেটা তিনি কোনভাবেই হারাতে দেবেন না।

ছবি ৭

আর তার এই দূর্দান্ত গুণটিকে হারাতে দেবেন না বলেই, এই ছবি আঁকা নিয়ে তার স্বপ্ন অনেক বড়। দেশের অনেক বড় একজন আর্টিস্ট হবার ইচ্ছা আছে তার। সাইকাডেলিক আর্ট করেন এমন আর্টিস্ট দেশে খুব কম আছে বলে তার ইচ্ছা এমন আর্ট নিয়ে বেশী করে কাজ করা। এরই সাথে তিনি জানান যে, ছবি যেন একদম নিখুঁত হয় সেদিকেও তিনি লক্ষ্য রাখবেন সবসময়।

সম্পাদনা : রুমানা বৈশাখী