কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সাকিব আল হাসান ও বাংলাদেশ দলের একাংশ। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

সব হারিয়ে শেষ চেষ্টায় মাঠে নামছে ‘সাকিবের দল’

সামিউল ইসলাম শোভন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:০৩
আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:০৩

(প্রিয়.কম) ড্রেসিংরুমে সতীর্থদেরকে সিদ্ধান্তটা জানালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। টসে ঘোষণা দিলেন, টি-টোয়েন্টিতে এটাই শেষ ম্যাচ। ততক্ষণে সাকিব আল হাসানদের নতুন পরিকল্পনা তৈরি। যে কোন মূল্যে প্রিয় ‘মাশরাফি ভাইয়ের’ জন্য এই ম্যাচে জয় আনতেই হবে। শেষপর্যন্ত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের রাঙানো পারফরম্যান্সে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ছয় মাস পর মাশরাফির জায়গায় দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ যেন ধসে পড়া ভবনকে টেনে তোলার লড়াই।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফির অবসরের পর এই প্রথম ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ ফরম্যাটে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কলম্বোর সেই ম্যাচে মাশরাফি বিদায়ী উপহার হিসেবে লঙ্কানদের বিপক্ষে ৪৫ রানের জয় তুলে এনেছিল সাকিব-মুস্তাফিজরা। ব্যাট হাতে সাকিবের ইনিংস সেরা ৩৮ রানের পাশাপাশি বল হাতে তিন উইকেট ও বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের চার উইকেটের দাপটে উপল থারাঙ্গাদের বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ।

ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ছয় তারিখে। এরপর থেকে ছয় মাসেরও বেশি সময় কেটে গেছে। দলের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ সফরটিও ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। সিরিজটি ছিল হার ও জয়ের মাঝামাঝি পর্যায়ের। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় শুধুই হারের স্বাদ নিচ্ছে বাংলাদেশ। সেই হারগুলোও যেন একরকম অসহায় আত্মসমর্পণ। দুই টেস্টের পর তিনটি ওয়ানডে; সবগুলোতেই বাংলাদেশ হেরেছে বাজেভাবে। এমন অবস্থায়, নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে কেমন করবে বাংলাদেশ সেটা দেখতেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে পুরো দেশ। বিশেষ করে, অধিনায়ক যখন সাকিব তখন প্রত্যাশার হারও যেন খানিকটা বেশি।

ইতিহাস বলছে, এখন পর্যন্ত এই ফরম্যাটে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে একটি ম্যাচেও জয় নেই বাংলাদেশের। দলটির বিপক্ষে খেলা চার ম্যাচের দুটি দেশে ও দুটি দক্ষিণ আফ্রিকাতে খেলেছে এশিয়ার দলটি। অর্থাৎ, সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ব্লুমফন্টেইনে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত দশটায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় দফায় অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে শুরুতেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাকিবকে। দক্ষিণ আফ্রিকার দলটি যেখানে পুরোপুরি ‘টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট’, সেখানে নিজের দলে সাকিব পাচ্ছেন না সেরা তিন ক্রিকেটারকেই। প্রথমত, অবসরের কারণে দলে নেই মাশরাফি। অন্যদিকে, ইনজুরির কারণে পাওয়া যাবে না ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল ও পেস আক্রমণের সেরা অস্ত্র বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে। সেক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ে ওপেনিংয়ে সৌম্য-ইমরুল-লিটনদের উপরই ভরসা রাখছেন সাকিব। বোলিংয়েও তার ভরসা তাসকিন আহমেদ-রুবেল হোসেনরা।

দলে জ্যৈষ্ঠ ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতি দলকে ভোগাবে তা মানছেন। সে কারণেই পুরো ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে নতুনদের জন্য সুযোগ হিসেবেও দেখছেন দেশের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘একটু চ্যালেঞ্জিং তো হয়ই। আবার বাংলাদেশ থেকে এত দূরে খেলা হচ্ছে বলে টি-টোয়েন্টির জন্য আলাদা স্কোয়াডও আসে না। তাই যারা টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেছে, তারাই আছে এখন। স্বাভাবিকভাবেই দল নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি ভাবনার অবকাশ নেই। ১৪ জন ক্রিকেটার রয়েছে, তাদের ভেতর থেকেই নির্বাচন করতে হবে সেরা একাদশ। আমার কাছে মনে হয়, এটা আমাদের জন্য একটা ভালো সুযোগ। এ রকম পরিস্থিতি থেকে ভালো জায়গায় যেতে পারলে সামর্থ্যের একটা দিক দেখানো হবে।’

দলের একমাত্র টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট খেতাব পেয়েছেন সাব্বির রহমান। সঙ্গে মুশফিকুর রহিম এমনকি সাকিবকে নিজের পারফরম্যান্সের উপরও ভরসা করেই লড়তে হবে স্বাগতিকদের বিপক্ষে।

সবমিলিয়ে কতটা সুবিধা করতে পারবে তা নির্ভর করছে দলের মানসিক শক্তির উপর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হল, দুই টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে হারানোর পরও সাকিব-মুশফিকদেরকে সহজভাবে নিচ্ছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। এবি ডি ভিলিয়ার্সের ইনজুরিতে প্রোটিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নেওয়া জেপি ডুমিনিই এমনটা জানিয়েছেন।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন,  ‘আমরা জয়ের জন্য আত্মবিশ্বাসী। আমাদের যেমন ম্যাচ জেতানোর ক্রিকেটার আছে, তাদেরও আছে। ম্যাচটা সহজ হবে না। ফরম্যাট যত ছোট হয়, ম্যাচ তত কাছাকাছি চলে আসে। যে কোন সময় বাংলাদেশ ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। ওদের কিছু তরুণ ক্রিকেটার আমাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

ডুমিনি যেমন ভয় পাচ্ছেন বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাদের নিয়ে, তেমন সাকিব আত্মবিশ্বাস নিচ্ছেন তরুণদের কারণেই। ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টি বলেই যেন এমন সুযোগ পাচ্ছেন সাকিব। অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন স্বাভাবিকভাবেই।

সে কারণেই কিনা, পরিকল্পনার প্রশ্নে ‘টি-টোয়েন্টি’ সুলভ উত্তর সাকিবের, ‘যা করার তাই করব। আমার মনে হয় না এগুলো সবাইকে জানানোর খুব দরকার।’

প্রিয় স্পোর্টস/কামরুল