কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

উদয়াস্ত শ্রম দিয়েও সুবিধা করতে পারছেন না? ছবি: নূর

পরিমিত কাজ করেও পান দারুণ ফলাফল: ১৫টি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে!

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০১৭, ২১:৫৮
আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০১৭, ২১:৫৮

(প্রিয়.কম) আপনি নয়টা-পাঁচটা চাকরি করুন অথবা নিজের ব্যবসা নিজে চালান- অনেকটা শ্রম এর পেছনে চলে যায় নিশ্চয়ই। অনেকেই প্রচুর খেটে নিজের কাজটা করেন, কিন্তু দিনের শেষে প্রত্যাশিত ফলটা পান না। এতে অনেকে হতাশ হয়ে যান, মুষড়ে পড়েন এই ভেবে যে কাজটা তাকে দিয়ে হবে না। প্রতিদিন এই যুদ্ধ করতে করতে কি আপনিও ক্লান্ত? তাহলে জেনে নিন সুখবর। আপনার কষ্টের দিন শেষ হয়ে যাবে যদি আপনি সফল হবার জন্য ব্যবহার করেন এই ১৫টি বিজ্ঞানসম্মত উপায়-

১) সময়ের হিসেব রাখুন

একটি কাজে কতটা সময় ব্যয় করছেন এটার হিসেব রাখলে আপনার কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারবেন। কাজটা হতে পারে ইমেইল করা বা টাকাপয়সার হিসেব রাখা, এতেও সময়ের হিসেব রাখতে হবে। আপনি এটাও বুঝতে পারবেন আপনার কতটা সময় নষ্ট হচ্ছে। আপনি ফেসবুকে নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে যে সময় নষ্ট করছেন, সেটার কি হিসেব রাখছেন? কাজের সময়ে সবকিছুরই হিসেব রাখা জরুরী। 

২) প্রতি ৯০ মিনিটে একবার বিরতি দিন কাজে

প্রচুর কাজ সামলাতে গিয়ে আমরা অনেকেই একদম টানা ৮-১০ ঘণ্টা কাজে থাকি, মাঝে তেমন কোন বিরতিই নিই না। আমাদের শরীর কিন্তু এমন টানা কাজের জন্য প্রস্তুত না। আমাদের মস্তিস্ক কাজ করে ৯০ মিনিট বা ১২০ মিনিটের চক্র মেনে। এই সময় পর পর তাই আমাদের একটু বিরতি দেওয়া দরকার। এ কারণে আপনার দিনটাকে ৯০ মিনিটের টুকরোয় ভাগ করে নিন। এতে আপনার কাজে একটা সুন্দর ছন্দ চলে আসবে। কাজ করাটাও অনেক সহজ হয়ে আসবে। 

৩) অল্প একটু ঘুমিয়ে নিন

হ্যাঁ, গবেষণায় দেখা গেছে, বিকেলে ২০ মিনিট একটু ঘুমিয়ে নিলে তা আপনাকে আরও কর্মক্ষম করে তোলে। আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক দুটোকেই তরতাজা করে ফেলে এই বিশ্রাম। অতিরিক্ত কাজের চাপ কমিয়ে আপনাকে দীর্ঘায়ু করতেও তা উপকারী বটে! গুগল, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, সাচি অ্যান্ড সাচির মতো বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের কর্মচারীদের জন্য অফিসেই রেখেছে ঘুমিয়ে নেবার এনার্জি পড বা স্লিপ পড। 

জানালার পাশে

জানালার পাশে কাজ করুন। ছবি: নূর

৪) দিনের আলোয় কাজ করুন

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে দিনের আলোর সাথে রয়েছে কর্মচারীদের ঘুম, কাজ এবং জীবনচর্চার মানের সম্পর্ক। দেখা যায়, যারা দিনের আলোয় কাজ করে, তারা রাত্রে গড়ে ৪৬ মিনিট বেশি ঘুমায়। আর তাদের জীবনের মানটাও ভালো হয়।  এর পাশাপাশি তাদের শক্তি এবং দক্ষতাও বেশি হয়। এ কারণে চেষ্টা করুন জানালার পাশে বসে কাজ করতে। 

৫) আপনার ইন্টারনেট স্পিডের কথা ভাবুন

বস্টনের একটি অ্যানালাইসিস গ্রুপের মতে, যেসব শহরে ইন্টারনেট স্পিড বেশি সেখানে মানুষের কর্মদক্ষতাও বেশি। ব্যাপারটা আসলে বোঝা সহজ। একটা পেইজ লোড হবার জন্য যদি আপনাকে মিনিটের পর মিনিট বসে থাকতে হয় তাহলে আপনার কর্মদক্ষতা কমে যেতে বাধ্য। 

৬) প্রকৃতিকে ঘরের ভেতরে নিয়ে আসুন

গবেষণা বলে বাইরে সময় কাটানোর পর কাজ করলে তার ফল ভালো হয়। কাজের জায়গার আশেপাশে গাছপালা থাকাটা আপনার সৃজনশীলতা এবং কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারে। এর পাশাপাশি আপনার স্ট্রেসও কমাবে। 

কাজের পরিকল্পনা

কাজের পরিকল্পনা করে রাখুন। ছবি: রিপন

৭) আগের রাতেই দিনের পরিকল্পনা করে ফেলুন

আজ সারাদিন কী করবেন তার পরিকল্পনা যদি আগের দিন রাত্রেই করা থাকে তাহলে আপনি রুটিন মেনে কাজ করতে পারবেন এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন সহজে। এছাড়াও দিনের শুরুতেও এই পরিকল্পনা করতে পারেন। তালিকার একটি একটি করে কাজ শেষ করতে পারলে আপনার মেজাজটাও ভালো হতে থাকবে। আর সবগুলো কাজ গুছিয়ে শেষ করলে নিঃসন্দেহে সফল হবে আপনি।  এতে কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তাও অনেক কম হবে। 

৮) জীবনে আনন্দের জায়গা রাখুন

আনন্দের আছে অনেকগুলো ইতিবাচক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া। এতে আমাদের মন যেমন ভালো থাকে তেমনি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও উন্নতি আসে। আমাদের কাজ করার শক্তি, শারীরিক সুস্থতা, কাজের উদ্যম এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ ভালো হয়। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়্যারউইকের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, আনন্দ মানুষকে ১২ শতাংশ বেশি কর্মক্ষম করে তোলে। এর জন্য খুব বেশি কিছু করতে হবে না আপনাকে। নিজের যত্ন নিন, ব্যায়াম করুন, ভালো খাবার খান, নিজের আশেপাশে ইতিবাচক মনোভাবের মানুষ রাখুন, সেটাই যথেষ্ট। 

৯) খবর থেকে দূরে থাকুন

সর্বক্ষণই ইন্টারনেটের সাথে আমরা যুক্ত, ফলে নতুন নতুন খবরও আমাদের কাছে চলে আসে দ্রুত। কিন্তু সমস্যা হলো, বেশিরভাগ খবরই নেতিবাচক। এ কারণে তা আমাদের কাজের উদ্যম কমিয়ে দেয়। আমাদের মেজাজের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে এবং কাজের মান উন্নয়নে বাধা দেয়। সর্বক্ষণ খবরের আওতায় থাকবেন না। বরং এ সময়ে আপনি জিমে যেতে পারেন, নতুন কিছু শিখতে পারেন বা পড়তে পারেন নতুন একটি বই। 

১০) বন্ধুর সাথে সময় কাটান

গবেষকেরা দেখেন, যেসব কর্মচারী খাবার সময়টা অন্যদের সাথে কাটায় তারা সপ্তাহের মাঝে ৩৫ শতাংশ বেশি কর্মক্ষম হয়। তাদের স্ট্রেসটাও কম হয়। অন্যদের সাথে আলোচনা করলে মস্তিষ্ক অনেকটা চাপ কমাতে পারে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আসে, সমস্যার সমাধান হয়। গুগলের মতো কোম্পানিগুলো ক্যাম্পাসের মতো কাজের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে যেখানে কর্মচারীরা একে অপরের সাথে সময় কাটাতে পারে। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন বা বাসা থেকে কাজ করেন, তবে বাসায় বন্ধুদের ডেকে এনে একসাথে লাঞ্চ করতে পারেন মাঝে মাঝে। 

১১) ইউটিউব দেখুন

হ্যাঁ, সত্যিই। অনেক সময়ে কাজের মাঝে অন্যদিকে কিছুটা সময় কাটালে কাজের গতি বাড়ে। কিছুটা সময় অন্যদিকে কাটালে পুনরায় কাজে মনোযোগ দেওয়াটা সহজ হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ইউটিউবের মতো ওয়েবসাইটে সময় কাটালে তা উপকারে আসে। অল্প কিছু সময়ে ইতিবাচক কিছু দেখলে আপনার মুড ভালো হবে, আবার আপনার কাজের সাথে সম্পর্কিত কিছু দেখলে সেটাও উপকারে আসবে। 

১২) তাপমাত্রা ঠিক রাখুন

ফিনল্যান্ডের গবেষকেরা দেখেন, ২১ থেকে ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার মাঝে কর্মীদের পারফর্মেন্স ভালো হয়। হেলসিংকি ইউনিভার্সিটি অফ টেকনলজিতে করা হয় এই গবেষণাটি। কর্নেল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা বলে যে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার মাঝে কর্মীদের কাজে ভুল হয় বেশি। সুতরাং কাজের ফলাফল ঠিক রাখতে চাইলে তাপমাত্রা ঠিক রাখুন। 

১৩) গুছিয়ে কাজ করুন

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউট কাজের অপরে অগোছালো জায়গার প্রভাব দেখেন। দেখা যায়, খুব বেশি অগোছালো জায়গা কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয়। আপনার মস্তিষ্ক শুধু ওই জঞ্জালের দিকেই মনোযোগ দেয় বেশি, কাজে নয়। আপনি নিজেই ভেবে দেখুন তো,  কোনো একটি ডকুমেন্ট খুঁজে পাচ্ছেন না বলে কি আপনার কাজটা শেষ করতে বেশি সময় লেগেছিল? আবার এই জিনিস খুঁজে পেয়ে তারপরে আবার মনোযোগ ফিরে পেতে কি সময় বেশি লাগে? এ কারণে কাজের জায়গাটা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুন যাতে সবকিছু হাতের কাছে থাকে এবং আপনার মস্তিষ্কও কাজে মন দিতে পারে সহজে। 

১৪) একটা একটা করে কাজ করুন

মস্তিষ্ক একই সাথে দুটো কাজ করে পারে না। মানুষ যখন “মাল্টিটাস্ক” করে, তখন বিভিন্ন কাজের মাঝে আমাদের মনোযোগ ছোটাছুটি করে, এতে উপকারের বদলে ক্ষতিই বেশি। তা আমাদের কাজের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। তাই একবারে একটি কাজেই মনোযোগ দিন। 

১৫) গান শুনুন

অতিরিক্ত শব্দ মনোযোগ নষ্ট করে ঠিক। কিন্তু সঠিক সঙ্গীত আপনার কাজের ক্ষমতা বাড়ায়। মনোযোগ বাড়াতেও সাহায্য করেন সঙ্গীত। বিশেষ করে ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক এক্ষেত্রে বেশি উপকারী। 

সূত্র: Entrepreneur

সম্পাদনা: রুমানা বৈশাখী