কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সাকরাইন উৎসবে মেতে ওঠেন তরুণ-তরুণীরা। ছবি: সংগৃহীত

প্রাণের উৎসব সাকরাইনে মাতল পুরান ঢাকা

খন্দকার মহিউদ্দিন
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:০১
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:০১

(প্রিয়.কম) পৌষের শেষ দিন পৌষ সংক্রান্তি। এই দিনে পুরান ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে চলে পিঠা বানানোর ধুম। আর প্রতিটি বাড়ির ছাদ থেকে উড়ানো হয় রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। ঘুড়িরা আকাশকে করে বর্ণিল আর ফানুসগুলো যত দূরে উড়ে যায়, তত যেন হয়ে যায় ঝিকিমিকি তারা!

উৎসবকে কেন্দ্র করে নানান আকারের অসংখ্য ঘুড়ি আর ফানুসের সঙ্গে থাকে আরও বিভিন্ন আয়োজন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উৎসব কমিটি না থাকলেও এই উৎসব বিনা ঘোষণায় হয়ে উঠেছে সামাজিক উৎসব। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ চলে আসেন পুরান ঢাকায় এই উৎসবে অংশ নিতে। তাদের মাঝে বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। পুরান ঢাকার স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গিয়ে উৎসবে মাতেন সবাই।

আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। আর তাই এই উৎসবকে ঘিরে সবার মাঝে থাকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। উৎসবটি স্থানীয়ভাবে ‘সাকরাইন’ নামে পরিচিত।

এবার সাকরাইন উৎসবটি হয় রোববার। এদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন নয়, পুরো কর্মদিস। তবুও উৎসবপ্রিয় মানুষের মনে এতটুকু বাধ সাধতে পারেনি ক্লান্তি। প্রিয়.কম-এর পক্ষ থেকে কথা হয় সাকরাইনে আসা এক তরুণীর সঙ্গে। তার নাম লুলু আল মারজানি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লুলু আল মারজানি বলেন, ‘আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ফেসবুকে জানতে পারি, আজকে সাকরাইন। জানার পরই আসার ইচ্ছা হয়। আর অফিসে বসেই ওই বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করি। সে আমাকে জানায়- চলে আসো কোনো অসুবিধা নেই। আমার আরও কিছু বন্ধু আসবে সেটাও জানতে পারি। আর তাই অফিস শেষ করে চলে আসলাম।’

প্রথমবারের মতো সাকরাইনে এসেছেন মারজানি। 'এখানকার মানুষ অসাধারণ। আমি আমার জীবনে এত ঘুড়ি একসাথে কোনোদিন উড়তে দেখি নাই। আর একসাথে প্রায় প্রতিটা ছাদে থেকে আতশবাজি ছাড়া হচ্ছে, এ এক অভাবনীয় সুন্দর অনুভূতি। এই উৎসবের অনুভূতি আসলে এখানে না এলে বোঝানো অসম্ভব’, বলেন এই তরুণী। 

‘আমার ঠিক পাশেই হয়ে গেল ফায়ারওয়ার্ক (মুখে কেরসিন তেল নিয়ে আগুন ছোড়া)। কী ভীষণ তাপ সেটার! খুবই ভয়ংকর কিন্তু রোমাঞ্চকর একটা দৃশ্য। আমার মনে হচ্ছিল- আমি নিজেই হয়তো এই কাজটা করে দেখতে চাই। পাশাপাশি একটা বিষয় এখানে বলে রাখা দরকার। তা হলো এখানে এই ছাদে দেড়শরও বেশি মানুষ থাকলেও কোথাও কোনো অপ্রীতিকর আচরণ আমি পাইনি’, যোগ করেন এই তরুণী।

সাকরাইনে এসেছেন তরুণ আছির ইন্তাছির সৈকত। তিনি একজন ইউটিউবার। এখানে কেন এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেকদিন যাবতই ফেসবুকে সাকরাইনের কথা দেখি। কিন্তু কখনো আসিনি। বন্ধুদের কাজ থেকে উৎসাহ পেয়ে আজ চলেই এলাম। আমার আজ রাতেই চেন্নাই যাওয়ার কথা। তবু এখানকার মজার মজার এক্টিভিটির কথা শুনে না এসে পারলাম না।’

‘অনেক ডিজে পার্টিতে গিয়েছি আমি, তবে এখানকার ডিজে পার্টি সম্পূর্ণ আলাদা। এত ছেলে-মেয়ে একসাথে আছে পার্টিতে কিন্তু কোনো অসদাচরণ নেই। ফায়ারওয়ার্কটাও ভালো লেগেছে। প্রচণ্ড শীত কিন্তু এর মাঝেও যতদূর চোখ যায় ছাদে ছাদে আগুন জ্বলছে, ফানুস উড়ছে পুরো এলাকা জুড়ে। এমন উৎসব হয় তা পুরান ঢাকায় না এলে কখনো জানতে পারতাম না’, বলেন সৈকত।

ঘুড়ি হাতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় শিশু অদিতিকে। জানায়, ঘুড়ি ওড়াতে তার খুব মজা লাগে। তার বাসার সবাই আছে এই অনুষ্ঠানে। সকাল থেকেই অনেক ঘুড়ি উড়িয়েছে সে।

উৎসবের আমেজ সারা পাড়ায়। তবে সবটাই দালানের ছাদে। সাউন্ড বক্সের কল্যাণে দূরন্ত মিউজিক, রকমারি আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে চারপাশ। রাত যত বাড়ে, তত যেন বাড়ে রঙ। শীত বুড়িকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রাণের উৎসব সাকরাইন প্রাণ সঞ্চার করে মানুষের মাঝে। 

প্রিয় ট্রাভেল/জিনিয়া/শান্ত  

প্রিয় ট্রাভেল সম্পর্কে আমাদের লেখা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে। যেকোনো তথ্য জানতে মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো লেখা পাঠাতে ক্লিক করুন এই লিংকে - https://www.priyo.com/post