কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

পাহাড় ও বন কেটে নির্মিত হয়েছে রোহিঙ্গা বসতি। ফাইল ছবি

‘রো‌হিঙ্গাদের কারণে পরিবেশ-বনের ক্ষতি হাজার কোটি টাকা’

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:৪০
আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:৪০

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী পরিচালিত অভিযানে গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগসহ বহুমুখী নির্যাতন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে শুধু পরিবেশ ও বনেরই ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকা।

২৬ ডি‌সেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে সংসদীয় ক‌মি‌টির বৈঠক শেষে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এ তথ্য জানান পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্প‌র্কিত সংসদীয় স্থায়ী ক‌মিটির সভাপ‌তি ড. হাছান মাহমুদ

হাছান মাহমুদ বলেন, রো‌হিঙ্গাদের আগমনে এ পর্যন্ত শুধু ৩৯৬ কো‌টি অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কো‌টি টাকার গাছই কাটা হয়েছে। তবে প‌রিবেশ ও বনের অন্যান্য ক্ষ‌তি ধরে প্রায় হাজার কো‌টি টাকার সমান ক্ষ‌তি হয়েছে। এ জন্য মন্ত্রণালয়কে অচিরেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়ার তা‌গিদ দিয়েছে সংসদীয় ক‌মি‌টি।

তিনি বলেন, বনাঞ্চলের গাছের ৪০০ কোটি টাকায় নয়, এর সঙ্গে অন্যান্য ক্ষতি ধরলে তা কয়েক হাজার কোটি টাকার সমান। ইতোমধ্যে মধ্যে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের জন্য ৭ হাজার একর বনভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বা তাদের দখলে চলে গেছে। বন বিভাগকে বলা হয়েছে, আসলে কত কোটি টাকার বনাঞ্চল ক্ষতি হয়েছে। আর এই বন পুনরুদ্ধারে কত কোটি টাকার গাছ লাগাতে হবে, সেসব বিষয় নিরূপণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। 

প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। ফাইল ছবি

এ ছাড়া বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যার নিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর গণমাধ্যমে দেওয়া কথা উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, মন্ত্রী এর আগে গণমাধ্যমে বলেছেন কিছু বাঘ ভারতে বেড়াতে গিয়েছিল, আবার ফিরে আসায় সংখ্যা বাড়ছে। বাঘ কেনইবা বেড়াতে গেল, আর কেনইবা ফেরত এলো- এসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ সময় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্প‌র্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য নবী নেওয়াজ ও ইয়া‌ছিন আলী উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ছয় লাখ ৭২ হাজার মানুষ পালিয়ে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে; যাদের ৯০ শতাংশই নারী-শিশু ও বৃদ্ধ।

ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ৪ লাখ ৫০ রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে; যার মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারই নতুন। এসব শিশুর মধ্যে আবার অভিভাবকহীন ৩৬ হাজার ৩৭৩ শিশুও রয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। পালিয়ে আসা শিশু শরণার্থীদের বাইরেও প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ১০০ নবজাতক। 

বর্বর ওই অভিযানে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচার গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ

জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জেইদ আল রাদ আল হুসেইন বলেছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হয়তো গণহত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত করেছে। এর আগে তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো সহিংসতাকে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযানের জ্বলন্ত উদাহারণ (টেক্সটবুক এক্সাম্পল অব এথনিক ক্লিনজিং) বলে বর্ণনা করেছিলেন।

প্যারিসভিত্তিক মানবিক সাহায্য সংস্থা মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) জানায়, আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিসংতা ছড়িয়ে পড়ার এক মাসেই হত্যার শিকার হয়েছিলেন কমপক্ষে ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নাগরিক

বার্তা সংস্থা এপি জানায়,  মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে। এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বয়স ১৮-এর নিচে। সবচেয়ে ছোটজনের বয়স ছিল নয় বছর।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণের পর জানায়, ২৫ অগাস্ট সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর রাখাইনে মোট ৩৫৪টি গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে

প্রিয় সংবাদ/শান্ত