কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

‘রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের অগ্রগতি থামাতে পারবে না’

আয়েশা সিদ্দিকা শিরিন
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫৭
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫৭

(বাসস) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কখনো কোন সমস্যা দেখে ভয় পায় না এবং নির্মমভাবে তাড়িয়ে দেয়া কয়েক লাখ মিয়ানমারের নাগরিকের এই স্রোত সত্ত্বেও এদেশ এগিয়ে যাবে।’

যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময়) তার হোটেল কক্ষে শেখ হাসিনার মতবিনিময়ের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা বাঙ্গালী জাতি যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করি। ফলে কোন সমস্যা দেখা দিলে আমরা কখনো ভয় পাই না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বরং এই সমস্যা মোকাবেলা করার মাধ্যমে আরো এগিয়ে যেতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের একজন সিনিয়র প্রতিনিধির সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের মাধ্যমে এ সংকট সমাধানে নেপিদোর সাথে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশের জনগণ সব সময় মানবতায় বিশ্বাস করে। মানবিক দিক বিবেচনা করে মিয়ানমার ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হওয়া এসব লোকজনকে আশ্রয় দিতে আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। ফলে আমরা তাদেরকে (মিয়ানমারের জনগণ) বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে পারি না। আমরা ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে তাদের এই চরম দুঃসময়ে অতিরিক্ত ৫ থেকে ৭ লাখ লোককেও আমরা খাওয়াতে পারবো।’

এক্ষেত্রে ‘প্রয়োজন হলে আমরা দিনে এক বেলা খাবো এবং অপর বেলার খাবার চরম বিপদে পড়া এসব লোককে দেবো। আমরা ধনী না হলেও আমাদের হৃদয় অনেক বড় এবং আমাদের অবস্থান মানবতার পক্ষে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দুর্ভাগা রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহেনাকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজারে বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এবং তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা নারী ও শিশুদের কাছ থেকে তাদের বিভিন্ন লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনা শোনেন।

তিনি বলেন, জন প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ এবং তার দলের স্বেচ্ছাসেবকরা এসব লোকের ভোগান্তি দূর করতে কঠোর পরিশ্রম করছে।

তিনি বলেন, ‘কোন বৈদেশিক সাহায্যের অপেক্ষায় না থেকে আমরা সাধ্য অনুযায়ী তাদের থাকা, খাওয়া ও ঔষধের ব্যবস্থা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের জনগণের এ ধরণের বদান্যতা দেখে বিস্মিত হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্বাসঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা বিদেশে শরণার্থী হিসেবে তার নিজের জীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি ও আমার বোন ছয় বছর ধরে এ ধরণের জীবনযাপন করায় শরণার্থী জীবনের ব্যাপারে আমরা ভাল জানি।’

দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করেছি, আমরা পারি।’ 

বিশ্বব্যাংকসহ শক্তিশালী বিভিন্ন মহল থেকে ষড়যন্ত্র ও বিরোধিতার প্রেক্ষিতে নিজস্ব অর্থায়নে এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে তার সিদ্ধান্তের কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। মিথ্যা ও কাল্পনিক দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক এই সেতু নির্মাণে তাদের ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্ম সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল তার সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পে নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তায়নের চ্যালেঞ্জে আমরা বিজয়ী হয়েছি। 

শেখ হাসিনা বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল তার এবং তার পরিবারের ভাবমূর্তি ম্লান করতে অশুভ প্রচেষ্টা চালায়। তবে কানাডিয়ান ফেডারেল কোর্টে সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রমত্ত ও খরস্রোতা এ ধরনের নদীর ওপর বিশাল এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, ‘প্রমত্ত ও বৃহৎ এই ধরনের নদীর ওপর বিশাল সেতু নির্মাণ একটি বিরাট অর্জন।’

শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, জনগণের জন্য কাজ করি এবং প্রমাণ করেছি আমরা পারি।’ 

গত নয় বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন দেশের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করা যায়। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। আমরা ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই না। আমরা চাই আত্মমর্যাদা।’ 

দেশের সাম্প্রতিক বন্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যায় ডুবে গিয়ে শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তবে জনগণ যাতে কোনভাবে ভোগান্তির শিকার না হয় সে জন্য সরকার চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে। 

শেখ হাসিনা ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের পরিচালিত ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতার কথা তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে তারা ২৩৫ জন নিরীহ মানুষ এবং আইন-শৃঙ্খলা সংস্থার ২৬ সদস্যকে হত্যা করেছে। এমনকি শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং মহিলা স্কুল শিক্ষিকাকে তাদের পেট্রোল বোমা হামলা থেকে রেহাই দেয়নি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন তার দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য ১৪০ বার সময় নিয়েছেন এবং আদালত পরিবর্তনের জন্য ২৪ থেকে ২৫ বার আবেদন করেছেন। 

শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রবাসী নেতা-কর্মীদেরকে আগামী সাধারণ নির্বাচনে দলের বিজয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি বিদেশে তাদের কাজের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করার আহ্বান জানান। 

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ইউকে চ্যাপ্টার আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, ভাইস প্রেসিডেন্ট জালাল উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান এবং যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

প্রিয় সংবাদ/শিরিন