কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয়: মিয়ানমার সেনাপ্রধান

হাসান আদিল
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:০১
আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:০১

(প্রিয়.কম) রাখাইনে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ অভিহিত করে তারা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয় বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। এর জন্য সাবেক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকেই দায়ী করছেন তিনি।

১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েলের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান। আলোচনা শেষে বৈঠক বিষয়ে ফেসবুকে নিজের পেজে একটি পোস্ট দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয়। নথিপত্র প্রমাণ করে, তারা রোহিঙ্গা নামেও পরিচিত ছিল না। ঔপনিবেশিক আমল থেকেই তারা ছিল বাঙালি। ঔপনিবেশিক আমলেই তারা এসেছিল। মিয়ানমার তাদের এ দেশে আনেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী নয়। একইসঙ্গে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হয়েছে।’

এর আগেও মিয়ানমারের সেনাপ্রধান রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে দাবি করে বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গারা স্বীকৃতি দাবি করছে ঠিকই, কিন্তু তারা কখনো মিয়ানমারের নৃগোষ্ঠী ছিল না। এটি ‘বাঙালি’ ইস্যু। আর এই সত্য প্রতিষ্ঠায় একতাবদ্ধ হতে হবে।’

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা একটি নৃগোষ্ঠীর নাম যাদের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ইসলাম ও ১০ ভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। রোহিঙ্গাদের আদি আবাসস্থল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। শত শত বছর ধরে রাজ্যটিতে বাস করা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি না দিয়ে মিয়ানমার সরকার এ জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, সর্বশেষ সহিংসতায় প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

১৯৪৮ সালে মিয়ানমারের স্বাধীনতার সময়ও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছিল। ১৯৬২-তে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করার পর নতুন করে সংকটের মুখে পড়ে রোহিঙ্গারা। ১৯৭৪ সালে সামরিক জান্তা ‘বিদেশি’ আখ্যা দেওয়ার পর ১৯৮২ সালে প্রণয়ন করা হয় নাগরিকত্ব আইন। আর এই কালো আইনের মাধ্যমে অস্বীকার করা হয় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব। নাগরিকত্ব হরণ করে তাদের অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। সাদা কার্ড নামে পরিচিত ওই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেওয়া হয় সীমিত কিছু নাগরিক অধিকার।

জাতিসংঘের সহায়তায় ২০১৪ সালে পরিচালিত আদমশুমারিতে রোহিঙ্গা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাধার মুখে পড়তে হয় রাখাইনের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের। তাদের শুমারি বয়কটের ঘোষণার মুখে সামরিক জান্তা সিদ্ধান্ত দেয় রোহিঙ্গা হিসেবে নিবন্ধিত হতে গেলে অবাঙালি হতে হবে। ২০১৫ সালে সাংবিধানিক পুনর্গঠনের সময়ে আদমশুমারিতে দেওয়া সাময়িক পরিচয়পত্র বাতিল করে সামরিক জান্তা।

পদ্ধতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত করা হয় মৌলিক অধিকার থেকে। চলাফেরা, বাসস্থান নির্মাণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, এমনকি চাকরির অধিকার থেকে আইনসিদ্ধভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের। 

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উৎখাতে ঘরবাড়ি, শস্য ও গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।

এদিকে, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কারণে দেশটির সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।

সূত্র: রয়টার্স

প্রিয় সংবাদ/শান্ত