প্রতীকী ছবি
রাইড শেয়ারিং নীতিমালা অনুমোদনে নতুন স্বপ্ন, তবে...
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:১০
(প্রিয়.কম) প্রায় এক বছর ঝুলে থাকার পর ১৫ জানুয়ারি অনুমোদন পেয়েছে ‘রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা’। ১১টি শর্ত আরোপ করে এই নীতিমালার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। নীতিমালার অনুমোদন পাওয়ায় আশার আলো দেখলেও কয়েকটি শর্তের ক্ষেত্রে সংযোজন-বিয়োজন চেয়েছেন দেশের অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
ওই কর্মকর্তাদের ভাষ্য, নীতিমালা অনুমোদনে দেশে নতুন একটি অধ্যায়ের জন্ম হয়েছে। কিন্তু এতে কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, নীতিমালায় দেশীয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাখা হয়নি কোনো পার্থক্য।
এ বিষয়ে ইজিয়ারের পরিচালক কামরুল হাসান ইমন বলেন, ‘এত দিন এটি (নীতিমালা) খসড়া আকারে পড়ে ছিল। কিন্তু বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ায় ভালো হয়েছে। নীতিমালার মধ্যে তিনটি শর্তের বিষয়ে আমার কথা রয়েছে। প্রথমত নীতিমালায় বলা হয়েছে অন্য একটি শেয়ার রাইডিং সেবা নিতে গেলে মাঝখানে অন্তত দুই মাস সময় ব্যবধান থাকতে হবে। আমার মতে, বাস্তবতার নিরিখে এটি কাজ করবে না। যারা রাইডার, তারা চাইবে বেশি সংখ্যায় রাইড যেন তারা পায়। আমাদের দিক থেকেও এটি ভয়াবহ কারণ আমাদের এখানে যাত্রী বেশি, কিন্তু রাইডার কম। আমার মতে, এটি ওপেন থাকা দরকার। রাইডার যখন তার মন চাইবে তখন সে সেটি ব্যবহার করবে।’
‘প্রতি বছর গাড়ি ও বাইকের জন্য যে এনলিস্টমেন্ট ফি রয়েছে, তা যদি কমানো হতো তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। আর তৃতীয়ত দেশে বিদেশি কোম্পানি অপারেট করছে। এখানে দেশি-বিদেশি কোম্পানিকে একই স্থানে রাখা হয়েছে। বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য আলাদা কোনো নীতিমালা করা হয়নি, যা আমাদের দেশীয় কোম্পানির জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ বাইরের ইনভেস্টরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমাদের দেশীয় ইনভেস্টরদের (উদ্যোক্তা) টিকে থাকা খুবই কঠিন। আমার মনে হয় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এগিয়ে যেতে পারে, এ নিয়ে আমাদের প্রতি ফোকাস করা প্রয়োজন।’
অ্যাপভিত্তিক পরিবহন নীতিমালায় কিছু বিষয় নেই উল্লেখ করে চলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান শুভ বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় বেশ কিছু বিষয়ে বলা হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে যাত্রী ও ড্রাইভারের রিস্ক কাভারেজ। ঝুঁকি ও দুর্ঘটনাতে যাত্রী বা ড্রাইভার কীভাবে ক্ষতিপূরণ পাবে, নীতিমালাতে এটি উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। ড্রাইভার এর ব্যাকগ্রাউন্ড/ভোটার আইডি কীভাবে চেক করা যায়, এটা উল্লেখ করে যেত। অন্ততপক্ষে পুলিশ ভেরিফিকেশনটা আবশ্যক করলে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি পেত। পুলিশ ভেরিফিকেশন ফি কিন্তু বেশি না।’
‘নীতিমালায় বলা হয়েছে, একসঙ্গে একাধিক অ্যাপে সেবা দেওয়া যাবে না। অ্যাপ পরিবর্তন করতে চাইলে দুই মাস পরে করতে হবে। এই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’
এদিকে মুভ-এর অপারেশনস ম্যানেজার চ্যানলি রোজারিও বলেন, ‘নীতিমালাটিকে আমরা ভালোভাবেই নিচ্ছি। কারণ আমাদের একটি গাইডলাইনের দরকার ছিল। কারণ আরও কয়েকটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান আসতে যাচ্ছে। হয়তো ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই সংখ্যা পঞ্চাশে চলে যাবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বাজারে আসবে, তখন একটি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়ে যাবে।’
অনুমোদিত নীতিমালার বিষয়ে রোজারিও বলেন, ‘উবার বাইরের কোম্পানি। তাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে পেরে উঠবে না। দেশীয় কোম্পানি হিসেবে আমাদের কিছুটা সাপোর্ট দেওয়া উচিত সরকার থেকে। নীতিমালার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে সহায়তা করছে সরকার। তবে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটি একটু কম হয়ে গেল।’
‘তবে আমরা উবারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। কারণ আমরা যদি উবারকে বিট করতে পারি, তবে আমরা এগিয়ে যাব। আর কোম্পানি পরিবর্তনের বিষয়ে যে কথাটি বলা হয়েছে, এতে বাইকাররা একটু প্রতিবন্ধকতায় পড়বে। কারণ তাদের বুঝতে সমস্যা হবে, তারা কোনটিকে বেছে নেবে। ফেয়ারের বিষয়টি নিয়েও একটু ভাবা যেত।’
রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় শর্ত
সম্প্রতি মন্ত্রিসভা অনুমোদিত রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় ১১টি শর্ত দেওয়া হয়। এগুলো হলো- রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য বিআরটিএ থেকে রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ এবং মোটরযান মালিককে রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নিতে হবে, রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের টিআইএন থাকতে হবে, পাবলিক বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হলে পাবলিক বা প্রাইভেট কোম্পানির সব ধরনের শর্ত মেনে চলতে হবে। যাত্রী চাহিদা, সড়কের নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি, রাইড-শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, সেবাদাতা মোটরযানের সংখ্যার ভিত্তিতে রাইড-শেয়ারিং সেবা এলাকা নির্ধারণ করবে বিআরটিএ। রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস এলাকায় অফিস থাকতে হবে। রাইড-শেয়ারিং সেবায় যুক্ত হতে বিআরটিএ নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী মোটরযান নিয়োজিত করতে হবে। ঢাকা পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত এলাকার জন্য কমপক্ষে ১০০টি, চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য কমপক্ষে ৫০টি এবং দেশের অন্যান্য শহর ও মহানগর এলাকার জন্য কমপক্ষে ২০টি বাহন থাকতে হবে একটি কোম্পানির। ব্যক্তিগত মোটরযান যেমন- মোটর সাইকেল, মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস এবং অ্যাম্বুলেন্সর রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় তালিকার্ভুক্ত হতে পারে। রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরযানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, ইন্সুরেন্স এবং তালিকাভুক্তির সনদ হালনাগাদ থাকতে হবে। রাইড-শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্তির সনদ পাওয়ার পর রাইড-শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, মোটরযানের মালিক ও চালকের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে হবে যেখানে সব পক্ষের অধিকার এবং দায়দায়িত্বের বিষয়ে উল্লেখ থাকবে। মোটরযান মালিক বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এক মাস আগে লিখিত নোটিস দিয়ে চুক্তির সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারবে। নির্ধারিত স্ট্যান্ড এবং অনুমোদিত পার্কিং স্থান ছাড়া কোনো রাইড-শেয়ারিং মোটরযান যাত্রী তোলার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে পারবে না। এই নীতিমালার অধীনে একজন মোটরযান মালিক একটি মোটরযান রাইড-শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় পরিচালনার অনুমতি পাবেন। ব্যক্তিগত মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর এক বছর পার না হলে রাইড-শেয়ারিং সেবায় নিয়োজিত করা যাবে না। বিআরটিএ এর ওয়েব পোর্টালে রাইড-শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতাধীন সব মোটরযানের তালিকা একটি শ্রেণিতে রাখতে হবে, যাত্রীর অভিযোগ জানানোর সুযোগও সেখানে থাকবে।
দেশে রাইড শেয়ারিংয়ের হাওয়া লাগে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ওই বছরের ৫ মে দেশে চালু হয় দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘চলো’। এর এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের মে মাসে দেশে যাত্রা শুরু করে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ‘স্যাম’। একই বছরের ২২ নভেম্বরে ঢাকায় যাত্রা শুরু করে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ‘উবার’। এর পর ডিসেম্বরে রাইড শেয়ারিংয়ে নামে ‘পাঠাও’। আলোচনা-সমলোচনায় আসায় দেশের মানুষের কাছে অ্যাপভিত্তিক এই রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রিয়তা পায় ২০১৭ সালের শুরু দিক থেকে। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
২০১৭ সালেই দেশে প্রায় গড়ে উঠেছে ১৫টির বেশি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে- পাঠাও, স্যাম, মুভ, চলো, ইজিয়ার, গাড়িভাড়া, আমার বাইক, ট্যাক্সিওয়ালা, সহজ রাইডস, বাহন, আমার রাইড, ঢাকা রাইডার্স, ঢাকা মটো, বিডিক্যাবস, লেটস গো প্যাসেঞ্জার। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে ১০টির (বাইক ও কারসহ) অধিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে পাঠাও, স্যাম, মুভ, ইজিয়ার।
প্রিয় টেক