কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সংগৃহীত ছবি

রিজার্ভ চুরি: সুইফট কম্পিউটারের আইডি, পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেন ভারতীয় নাগরিক

মেহেদী হাসান
সহ-সম্পাদক, বিজনেস এন্ড টেক
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০১৭, ১৮:৩৯
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭, ১৮:৩৯

(প্রিয়.কম) রিজার্ভ চুরির আগে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের সঙ্গে দেশীয় আরটিজিএস নেটওয়ার্কের সংযোগ ঘটানোর কাজ করতে এসে সুইফটের ভুয়া প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত হন ভারতীয় নাগরিক নিলাভান্নান। এরপরও ওপরের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাক অফিসে বসে চারদিন কাজের সুযোগ দেওয়া হয় তাকে। আর এই সুযোগেই তিনি রিমোট ডেস্কটপ সিস্টেমে কাজ করতে গিয়ে সুইফট কম্পিউটারটির ইউজার আইডি হাতিয়ে নেন। একই সঙ্গে সুইফটে অ্যাকসেস (প্রবেশাধিকার) রয়েছে— বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন আট কর্মকর্তার পাসওয়ার্ডও তিনি হাতিয়ে নেন বলে উঠে এসেছে সিআইডি’র তদন্তে।

সিআইডির মুখপাত্র ও অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোল্যা নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশি চক্রের সহায়তায় বিদেশি চক্র রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিলাভান্নান একবারের জন্যও বাংলাদেশে আসেননি। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন হওয়ায় এর বেশি বলতে চাননি তিনি।

সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাক অফিসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ২০১৫ সালের নভেম্বরে নিলাভান্নানকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্বাগত জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে নিলাভান্নান সুইফটের প্রতিনিধি পরিচয়ে আরটিজিএসের সঙ্গে সুইফট সিস্টেমের সংযোগের কাজ শুরু করেন। এর তিনদিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং (এবিডি) শাখার জিএম বদরুল হক খান নিলাভান্নানকে সুইফটের ভুয়া প্রতিনিধি হিসেবে শনাক্ত করে তাকে সুইফট কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস শাখার (পিএসডি) কর্মকর্তা রেজাউল করিম নিলাভান্নানকে সুইফট কক্ষের বাইরে বসিয়ে কাজ করানোর নির্দেশ দেন। পরে ব্যাক অফিসের এক কর্মকর্তা নিলাভান্নানকে রিমোট ডেস্কটপ সিস্টেমে কাজ করার সুযোগ করে দেন। এ সুযোগে নিলাভান্নান দূরনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় সুইফটের সুরক্ষিত কম্পিউটারে প্রবেশ করে সেটির অ্যাকসেস উন্মুক্ত করে দেন।

তদন্তে জানা যায়, ভুয়া সুইফট প্রতিনিধি হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর আরও চারদিন রিমোট ডেস্কটপ সিস্টেমে কাজ করেন নিলাভান্নান। এরপর পদ্ধতিটি বিচ্ছিন্ন না করেই দেশ ত্যাগ করেন তিনি। এ কারণে ৫ ফেব্রুয়ারি খুব সহজেই সুইফট সার্ভারে প্রবেশ করে ঠাণ্ডা মাথায় চুরির কাজটি সম্পন্ন করতে পারে অপরাধীরা। রিমোট ডেস্কটপ পদ্ধতি অর্থ চুরির দিন পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে বিদেশি ৩০ ব্যক্তি ও ১০টি সংস্থার জড়িত থাকার সব প্রমাণ এরই মধ্যে তারা পেয়েছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৩ কর্মকর্তার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণও পেয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে অন্তত আটজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। বাকি ১৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে সে বছর মার্চের শুরুতে। এরপর ১৫ মার্চ এ ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আদালতের নির্দেশে ওই মামলার তদন্তভার পেয়ে দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ শুরু করে সিআইডি। একটি অংশ রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত দেশীয় সূত্রগুলো নিয়ে তদন্ত করতে থাকে। আরেকটি অংশ রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশি সূত্রগুলো নিয়ে কাজ করছে।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল