কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভর্তি দর্শক। ছবি: প্রিয়.কম

মিটছে না চার-ছক্কার আক্ষেপ

শান্ত মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:২৯
আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:২৯

(প্রিয়.কম, সিলেট থেকে) টি-টোয়েন্টি মানেই ধুন্ধুমার লড়াই। বলে বলে উত্তেজনা আর চার-ছক্কার ফুলঝুরি। গ্যালারিতে উপচে পড়া ভিড়, যাদের অপেক্ষা কেবল চার-ছক্কার ব্যাটিং শো দেখারই। ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টি বলে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়েও আগ্রহের শেষ নেই। সিলেটে শুরু হওয়া বিপিএলের টিকেট নিয়ে চলছে হাহাকার। হয়েছে মারপিটও। কিন্তু সেই লড়াইয়ের দেখা নেই।

চার-ছক্কার ফুলঝুরিও সাজাতে পারছে না দলগুলো। টি-টোয়েন্টি মানেই ধুন্ধুমার লড়াই- এই কথাটাও অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাঁচ ম্যাচ পরও দেখা যায়নি তেমন কোনও ইনিংস, যা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে প্রতিনিধিত্ব করে। একমাত্র ঢাকা ডায়নামাইটসের ২০০ পেরনো ইনিংসটি বাদ দিলে প্রতিটা ম্যাচে রান খরা দেখা গেছে। যেখানে হতাশার ছবি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যা ব্যাট চালাচ্ছেন ওই বিদেশিরাই।

কিন্তু তাতেও জমছে না বিপিএল। টি-টোয়েন্টির আমেজও ছড়াচ্ছে না। সবার মুখে মুখে ফিরছে ‘লো স্কোরিং’ শব্দটা। অবশ্য পাঁচ ম্যাচ শেষেই এমন মনে হওয়াটা অনেকের কাছে ঠিক নাও মনে হতে পারে। কিন্তু যে ফরম্যাটে ছোট-বড় দল বলে কিছু নেই, অত চিন্তারও জায়গা নেই, শুধু ব্যাটে ঝড় ওঠার কথা- সেই ফরম্যাটে ম্যাড়ম্যাড়ে পাঁচটি ম্যাচ হওয়ার পর আলোচনা উঠেই যাচ্ছে। 

সাজঘরে ফিরছেন ঢাকা ডায়নাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ছবি: প্রিয়.কম

সাজঘরে ফিরছেন ঢাকা ডায়নাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ছবি: প্রিয়.কম

অনেকেই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটের দোষ দিচ্ছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস তো বলেই দিয়েছেন, ‘উইকেট বেশ স্লো মনে হচ্ছে। এমন উইকেটে একটু হলেও সমস্যা হচ্ছে।’ কিন্তু প্রশ্নটা এখানেই। উইকেট কি তবে শুধু দেশি ক্রিকেটারদেরই ভোগাচ্ছে? বিদেশি ব্যাটসম্যানরা তো দিব্যি রান করে চলেছেন। পাঁচ ম্যাচ শেষে ৬টি হাফ সেঞ্চুরি হয়েছে। যার প্রত্যেকটি এসেছে বিদেশিদের ব্যাট থেকে।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস রনি তালুকদারের। রাজশাহী কিংসের ডানহাতি এই ওপেনারের করা ৪৭ রান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা ইনিংস। সেরা রান সংগ্রাহকের তালিকাতেও বিদেশিদের জয়জয়কার। সেরা ১০ রান সংগ্রাহকের তালিকায় প্রথম সাতজনই বিদেশি। দেশি যে তিনজন ব্যাটসম্যান এই তালিকায় আছেন, তাদের কারও রানই ৫০ ছাড়ায়নি।

তবে এসবের চেয়ে বড় আফসোসের জায়গার নাম লো স্কোরিং ম্যাচ। অনুষ্ঠিত হওয়া পাঁচ ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের ২০২ রানের ইনিংসটি বাদ দিলে ১৬০ পেরনো কোনও ইনিংস নেই। প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে ঢাকা ১৩৬ রানেই থামে। দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৫৪ রান তোলে রাজশাহী কিংস। তৃতীয় ম্যাচে ১৪৫ রানে গুটিয়ে যায় প্রথমে ব্যাট করা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। 

চতুর্থ ম্যাচে এসে ধুন্ধুমার ব্যাটিং দেখার সুযোগ হয়েছে সিলেট স্টেডিয়ামে হাজির হওয়া ১৮ হাজার দর্শকের। আগে ব্যাট করে রান পাহাড়ই গড়ে সাকিব আল হাসানের দল ঢাকা ডায়নামাইটস। সা্ত উইকেটে ২০২ রান তোলে বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু পঞ্চম ম্যাচে আবারও একই দশা। মঙ্গলবার দিনের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ১৪৩ রানেই শেষ হয়ে যায় চিটাগং ভাইকিংসের ইনিংস।

এসব ইনিংসই বলে দেয় ম্যাচে চার-ছক্কার কতটা ঝনঝনানি ছিল। পাঁচ ম্যাচে মোট চার হয়েছে ১০৫টি। কিন্তু ছক্কার সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন পর্যন্ত ছক্কার সংখ্যা ৫৫টি। এতেও স্বস্তি মিলতে পারত। কিন্তু এসব সংখ্যায় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের অবদান একেবারেই কম। ১০৫ চারের মধ্যে বিদেশিরাই হাঁকিয়েছে ৭৩টি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা চারের দেখা পেয়েছে মাত্র ৩২টি। ছক্কার হিসাবেও তাই। ৫৫টি ছক্কার মধ্যে বাংলাদেশিদের দখলে মাত্র ১৩টি।

চার-ছক্কার সংখ্যা এমনিতেই কম। সেভাবে রান না হওয়ায় ইনিংসে চার-ছক্কার সংখ্যাটা কম থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ‘অস্বাভাবিকভাবে’ ব্যর্থ হয়ে চলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ঘরের মাঠ, চেনা কন্ডিশন- তবুও খেই হারিয়ে চলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। কারও ব্যাটেই নেই রানের দেখা।