কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রকৌশলী মইনুল হোসেন ও তার রচিত গ্রন্থের প্রচ্ছদ। ছবি : শামছুল হক রিপন,প্রিয়.কম।

পবিত্র কুরআন পড়া শিখুন মাত্র ২৭ ঘণ্টায়!

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৭, ১৩:১১
আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭, ১৩:১১

(প্রিয়.কম) পবিত্র কুরআনুল কারিম- লওহে মাহফুজের অধিপতি আল্লাহ মহানের কালাম। এর ভাষাশৈলী এবং শিল্পমান সবই একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব শান অনুযায়ী নির্মিত। পবিত্র কুরআন সংরক্ষণ করার দায়িত্বও মহান রাব্বুল আলামিন তার নিজ জিম্মায় রেখেছেন। এই মর্মে তিনি ইরশাদ করেছেন- ইন্না নাহনু নাজ্জালনাজ জিকরা ওয়া ইন্না লাহু লা হাফিজুন- আমিই নাজিল করেছি কোরআনকে এবং আমিই তার সংরক্ষণকারী। [সুরা হিজর, আয়াত-৯]

মহান আল্লাহর বান্দা হিসেবে পবিত্র কুরআন সংরক্ষণ, লিপিবদ্ধকরণ এবং কুরআন শেখার বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতি আবিস্কারের মহান কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে, পৃথিবীর মানুষ এমন সব কৃতিত্ব দেখিয়েছে, যুগ যুগ ধরে ইতিহাসে অধ্যায় আলোকিত করে রেখেছে যা। রাসুলের (সা.) স্বর্ণযুগ থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত- প্রত্যেক যুগেই এমন কিছু লিপিকারের আর্বিভাব-উপস্থিতি ছিল, যাদের একমাত্র কাজই ছিল পবিত্র কুরআন লিপি ও সংরক্ষণ করা এবং পবিত্র কুরআন শিখার পথ ও পদ্ধতি আবিস্কার ও সহজ করা। এরই ধরাবাহিকতায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় কুরআন ভাষান্তরিত হয়েছে এবং প্রায় প্রত্যেক ভাষাতেই আবিস্কৃত হয়েছে কুরআন শেখার অভিনব ও বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন পদ্বতি।

পবিত্র কুরআন শেখা ও শেখানোর বিভিন্ন মাধ্যম আবিস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরাও কোনো অংশে পিছিয়ে থাকেননি। বাংলা ভাষাতে বিভিন্ন পদ্ধতির কুরআন শিখার মাধ্যম আবিস্কৃত হয়েছে এবং প্রায় সবগুলো পদ্ধতিই কমবেশি মুসলমানদের মাঝে সমাদৃত হয়েছে। সহজভাবে খুব অল্প সময়ে পবিত্র কুরআন শেখার অভিনব ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি পদ্ধতি সংকলন করেছেন প্রকৌশলী মইনুল হোসেন। আর সংকলিত পদ্ধতিটির নাম ‘নূরানী পদ্ধতিতে ২৭ ঘণ্টায় কুরআন শিক্ষা’। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে মীনা বুক হাউজ। অভিনব এই আয়োজনটি নিয়ে কথা হয় জনাব মইনুল হোসেনের সাথে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি একজন প্রকৌশলী। কুরআন গবেষণা করা বা কুরআন নিয়ে কাজ করার ভাবনাটা আপনার মাঝে কিভাবে এলো? তিনি বলেন, ‘২০০৫-২০০৬ সালের দিকে আমার মনে হলো কুরআনটা আমার ভালো করে শেখা প্রয়োজন। তখন আমার একজন আপা আছে যিনি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল চালান। তিনি মাওলানা আব্দুল বাতেন নামের একজন আলেমেদ্বীনের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। উনার কাছেসহ আরো বেশ কয়েকজন আলেমেদ্বীনের কাছে আমি কুরআন পড়া শিখেছি। কিন্তু তার পড়ানোর পদ্ধতিসহ সব কিছু আমার যতটা ভালো লেগেছে অন্য কারো পড়ানোটা আমার কাছে ততটা ভালো লাগেনি। এরপর ২০১৩ সালের দিকে আমার আব্বা বলেন তুমি আমাকে কুরআন শিখাও। আমি তাকে কুরআন শেখাতে শুরু করলাম। একদিন আমার বাবা আমাকে বলছেন, আমার তো বয়স হয়েছে, অক্ষরের নাম আমার তা মনে থাকে না। তুমি আরবী হরফের নিচে বাংলায় উচ্চারণগুলো লিখে দাও। এরপরে আমার বাবা আমাকে বললেন, তুমি আমাকে কিছু হোমওয়ার্ক দাও। আমি বাজার থেকে কুরআন শিক্ষার অনেক বই কিনে আনালাম কিন্তু কোনোটাতে হোমওয়ার্কের কোনো বিষয় পেলাম না। সেই সময় আমি কিছুটা বিপদে পড়ে যাই। তখন আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে হোমওয়ার্কভিত্তিক কুরআন শিখার পদ্ধতি তৈরি করতে থাকি এবং বাবাকে পড়াতে থাকি। এভাবে কিছু দিন পড়ানোর পর আমার মনে হলো- আমি যদি এইগুলো দিয়ে একটা বই তৈরি করে তাহলে সাধারণ মানুষ যারা কুরআন শিখতে চায় তাদের কাজে লাগবে।

প্রিয়.কম :  আপনি তো বেশ কিছু বই ঘাটাঘাটি করেছেন তার পর আপনার বইটি তৈরি করেছেন। তো অন্যান্য বইয়ের থেকে আপনার বইয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কি?

মইনুল হোসেন : আমার বইটিতে আমি এমন অনেক বিষয় যুক্ত করেছি যা বাজারে থাকা সাধারণ কোনো কুরআন শিক্ষাবিষয়ক বইতে পাওয়া যাবে না। আমার বইয়ের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আমি এটাকে কোনো বই বলি না। আমি বলি এটি কুরআন শিক্ষা বিষয়ক একটি হোমওয়ার্কের খাতা। মানুষ শিখতে শিখতে লিখবে এবং লিখতে লিখতে শিখবে। এছাড়া বর্তমানে পাঠকের চাওয়া হচ্ছে স্পেসিফিক। আর আমার বইয়ে সেই স্পেসিফিক বিষয়টা রয়েছে। আমার বইয়ের মূল বিষয়টা হচ্ছে ২৭ ঘণ্টায় কুরআন শিক্ষা। কোনো একজন পাঠক যদি দৈনিক এক ঘণ্টা করে বইটি পড়ে তাহলে সে ২৭ দিনে ২৭ ঘন্টায় মোটামুটিভাবে কুরআন শুদ্ধভাবে পড়তে পারবে। বইটির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো- প্রত্যেক এক ঘণ্টা পড়ার পরে একটা পরীক্ষা রয়েছে। এমন পদ্ধতি আরো কোনো বইয়ে নেই এবং এই বইয়ে প্রশ্নের উত্তরও দেওয়া আছে। সুতরাং পরীক্ষা দেওয়ার পর পাঠক কতটুক পরলো সেটা চেক করতে পারবে।

প্রিয়.কম :  আপনার বইয়ের একটা আলাদা ভারতীয় সংস্করণ দেখছি, এটা কেন করেছেন?

মইনুল হোসেন : আমার বইটা বাংলাদেশে ভালো চলার সাথে সাথে ভারতেও চলা শুরু করলো। তাছাড়া ভারতেও বাংলা ভাষাভাষী অনেক মুসলিম আছে, তাদের কথা তো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। যা হোক আমি দেখলাম আমার বইটি অনেক হাত ঘুরে যখন ভারতের একজন পাঠকের হাতে যায়- তখন এই বইটার মূল্য দাঁড়ায় ভারতীয় ১৭০ রুপির মতো। তাতে করে বইটার অনেক বেশি দাম পরে যায়। যেটা সাধারণ একজন পাঠকের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। তাই আমি ভারতীয় একজন প্রকাশকের সাথে কথা বললাম এবং সেখান থেকে বইটা প্রকাশনার ব্যবস্থা করলাম।

প্রিয়.কম :  আপনার বইটা পড়ার বিষয়ে পাঠকদের বলার মতো বিশেষ কোন দিক নির্দেশনা আছে কি?

মইনুল হোসেন : বইয়ের পাঠককে বলবো, বইটা পড়ার আগে দৃঢ় নিয়ত করতে হবে যে আমি বইটা পড়ে শিখবো। আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, তাকে একটা সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। পাঠক যেন প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময়ই পরে। সেটা হতে পারে ফজরের পরে বা এশারের পরে হতে পারে। যাহোক একটা নির্দিষ্ট সময়তে পড়াই ভালো। আর তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, বইটা পড়ার মাঝে  নিয়মতান্ত্রিকতা বাজায় রাখতে হবে।

বাংলা ভাষায় রচিত কুরআন শিক্ষাবিষয়ক সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ এই ‘নূরানী পদ্ধতিতে ২৭ ঘন্টায় কুরআন শিক্ষা’। এটি এখন শুধু একটি গ্রন্থই নয়-  আপামর জনসাধারণের কাছে পৌছানোর উদ্দেশ্যে সংকলন প্রকৌশলী মইনুল হোসেন বইটির আলাদা ওয়েবসাইট, উচ্চারণসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপস এবং সফটওয়ার তৈরি করেছেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। লক্ষ লক্ষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জাহান্নামের দিকে যাচ্ছে। আমরা কেন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জান্নাতের দিকে যেতে চেষ্ঠা করবো না? বইটির উচ্চরণসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপসটি ফ্রি ডাউনলোড করতে পারবেন এই লিঙ্ক থেকে। 

প্রিয় ইসলাম/গোরা