মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশ দল। ডানে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজও ছিলেন ঝলমলে। ছবি: সংগৃহীত
বৃষ্টির আশীর্বাদপুষ্ট বাংলাদেশ
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৫৮
(প্রিয়.কম, চট্টগ্রাম থেকে) পুরো প্রথম সেশনটি ধুয়ে নিয়ে পাশের বঙ্গোপসাগরে ফেলল বৃষ্টি। সাগরিকা স্টেডিয়ামে অস্টেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুটাও কাজে লাগানো হলো না বাংলাদেশ দলের। দু'দিনের অভিজ্ঞতা বলে, সকালের শুরুতে দ্রুত উইকেট হারানো যেন বাধ্যতামূলক। সে কারণে আক্ষেপটা অমূলক নয়। কিন্তু দিন শেষে এই বৃষ্টি ধোয়া উইকেটই এগিয়ে দিলো মুশফিকুর রহিমদের। সারাদিনে ১৫২ রান তুলতে গিয়ে সাত উইকেট হারালো স্টিভেন স্মিথের দল। মোট রান নয় উইকেটে ৩৭৭, লিড ৭২ রানের।
বুধবার সকালে ম্যাচ শুরুর আধাঘন্টা আগে ঝুম বৃষ্টি নামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। পুরো প্রথম সেশন বৃষ্টিতে ভাসলে টেস্টের তৃতীয় দিনের জন্য ৬৭ ওভারের খেলা বেঁধে দেয় আম্পায়াররা। কিন্তু শেষ বিকেলে আলো স্বল্পতার কারণে ৫৪ ওভার খেলতেই দিনের খেলা শেষ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৃষ্টির শেষে উইকেট থেকে কভার সরানো হচ্ছে। ছবি: প্রিয়.কম
তৃতীয় দিনে বল হাতে সফল হয়েছেন বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও ডানহাতি স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। আগের দিন একটি উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজ এদিন ফিরিয়েছেন ওয়ার্নার ও ম্যাথু ওয়েডকে। মিরাজ শুধু বুধবারই তিনজন অজি ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন। তার বলে সাজঘরের পথ ধরেছেন কার্টরাইট (২১), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৩৮) এবং প্যাট কামিন্সকে (৪)। এছাড়া নবম ব্যাটসম্যান অ্যাস্টন অ্যাগারকে (২২) রানে ফেরান সাকিব আল হাসান।
বৃষ্টির সুবিধাটা দারুণ কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। উইকেট থেকে পাওয়া বাড়তি টার্ন ও সুইং সফল করেছে মুস্তাফিজ-মিরাজদের। অন্যদিকে, ব্যাত হাতে ভুগেছে অস্ট্রেলিয়া। যদিও দ্বিতীয় দিনের মতো তৃতীয় দিনেও সুযোগ হারানোর কাজটা ‘ধারাবাহিক’ রেখেছিলো বাংলাদেশ। এদিন সবমিলিয়ে তিনটি নিশ্চিত ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে মুস্তাফিজের ওভারে স্লিপ থেকে ম্যাক্সওয়েলের সহজ ক্যাচ ফেলেন মিরাজ। এরপর নিজের বোলিংয়ের সময় কার্টরাইটকে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলন মিরাজ। কিন্তু টানা শটে বলটি আয়ত্বে নিতে পারেননি এই বোলিং অলরাউন্ডার। ক্যাচ ফেলার সঙ্গে বেকায়দায় পাজরে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনায় দলের চিকিৎসকের পর্যন্ত শরণাপন্ন হতে হয়েছে তাকে। শেষদিকে ২২ রানে অপরাজিত থাকা অ্যাগারের সহজ ক্যাচ ফেলেন সৌম্য সরকার। সাকিব আল হাসানের ওভারে সেটাও ছিলো স্লিপ থেকেই।
পাঁজরে আঘাত পান মেহেদী হাসান মিরাজ। ছবি: প্রিয়.কম
এর আগে দুই উইকেটে ২২৫ রান নিয়ে খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম থেকেই চাপে রাখার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। ৮৮ রানে অপরাজিত থাকা ওয়ার্নার অবশ্য এই ফাঁকেই সিরিজে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি তুলে নিয়েছেন। নাসির হোসেনের বলে ব্যক্তিগত ৯৯ রানের মাথায় যখন ব্যাট করছেন ওয়ার্নার, নন-স্ট্রাইকে থাকা পিটার হ্যান্ডসকম্বকে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন সাকিব আল হাসান। ১৪৮ রানের এই জুটি ভেঙে ব্যক্তিগত ৮২ রানের মাথায় বিদায় নেন হ্যান্ডসকম্ব। ক্যারিয়ারের ২০তম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর সতর্ক অবস্থানেই ছিলেন অজি ওপেনার ওয়ার্নার। তাকে ১২৩ রানের মাথায় স্লিপ থেকে ক্যাচ আউটের ফাঁদে ফেলে জন্মদিনের সবচেয়ে বড় উপরহারটা লুফে নেন ‘দ্য ফিজ’। ওই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার দলীয় রান ছিলো ২৯৮।
পরের ১৭৭ রান তুলতে গিয়ে আরও পাঁচটি উইকেট হারিয়েছে সফরকারীরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রামে বল হাতে নিস্প্রভ ছিলেন সাকিব। দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার ১১৭তম ওভারে অ্যাগারকে ক্যাচের ফাঁদে ফেলতে গিয়েও যখন সৌম্যের কারণে পারলেন না, ওভারের শেষ বলে অসাধারণ এক টার্নে বোল্ড করলেন তাকে।
তৃতীয় দিনে বৃষ্টির বিঘ্নতায় চতুর্থ দিনে আধা ঘন্টা আগে খেলা শুরু হবে। সিরিজ জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়া ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই বাংলাদেশের সামনে।