কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

চোখ ধাঁধানো সব ডিটেইলস দেখা যায় এই পুতুলগুলোতে। ছবি কৃতজ্ঞতা: মিতা মুনি

ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেবে এই দেশি পুতুলগুলো!

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:৪৭
আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:৪৭

(প্রিয়.কম) পুতুলের কথা ভাবলেই মনে পড়ে ছোটবেলার পুতুলের কথা, যখন মায়েদের শাড়ির টুকরো দিয়ে তৈরি করতেন কাপড়ের নরম নরম পুতুল। সেই পুতুলে হয়তো এখনকার বার্বির মতো চাকচিক্য ছিলো না, কিন্তু ভালোবাসা ছিল নিখাদ। সেই ভালোবাসার কথা আপনাকে মনে করিয়ে দেবে পুতলি পুরাণের পুতুলগুলো। 

কাশ্মীরী পুতুল

এখনকার বাচ্চারা পুতুল বলতে কী চেনে? হয়তো প্লাস্টিকের শক্ত বার্বি, ডিজনি প্রিন্সেস, নিদেনপক্ষে নরম টেডি বিয়ার অথবা ডোরেমন? কিন্তু এসব পুতুলে আমাদের দেশি ছোঁয়া নেই একটুও। আর প্লাস্টিকের খেলনা যে অস্বাস্থ্যকর তা বলাই বাহুল্য। এই চিন্তা থেকেই মূলত শুরু হয় হয় মিতা মুনির “পুতলি পুরাণ” এর যাত্রা।

হলুদের পুতুল

পুতলি পুরাণের মূল ভিত্তি হলো খাঁটি বাঙালি ধাঁচের পুতুল। মিতা মুনি ছোটবেলা থেকেই পুতুল বানাতে খুব ভালোবাসতেন। ফাইন আর্টস থেকে পড়াশোনার পর কিছুদিন তিনি শিক্ষকতা করেন। এরপর তা ছেড়ে দেবার পর ভাবেন, কেমন হয় যদি দেশীয় পুতুলের ভালোবাসাটা আবারো ফিরিয়ে আনা যায় এদেশের মানুষের মাঝে? তাই ২০১৫ সালে অনলাইনে শুরু হয় পুতলি পুরাণ।  

বিয়ের পুতুল

পুতলি পুরাণের সবচাইতে অনন্য আইটেম হলো এর স্ট্যান্ড পুতুলগুলো, যা হয়ে থাকে ১২ থেকে ২৪ ইঞ্চি উঁচু, ব্যবহার করা হয় ঘর সাজানোর আইটেম হিসেবে। অনেকেরই ধারণা যে বিদেশি পুতুলের সাথে প্রতিযোগিতায় বাজারে টিকবে না দেশি পুতুল। কিন্তু মিতা মুনি অবাক হয়ে দেখেন, তার এই স্ট্যান্ড পুতুলগুলো দারুণ সাড়া পাচ্ছে মানুষের মাঝে। 

স্ট্যান্ড পুতুল

একদম দেশী ছোঁয়ায় তৈরি এসব পুতুল। তা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় কাপড়, তুলা, তার, টার্সাল, কাঠের গুঁড়ো। মিতা মুনি জানান, আসলে ফেলনা নয় কিছুই। এক টুকরো সুতাও এই পুতুল সাজাতে ব্যবহার  হতে পারে। 

বালিশ পুতুল

ঘর সাজানোর পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্যও কিছু পুতুল তৈরি করেন মিতা মুনি। বাচ্চাদের এই পুতুলগুলো ওয়াশেবল, কারণ তাদের কাছে থাকলে কম সময়েই পুতুলগুলো ময়লা হয়ে যেতে পারে। নতুন করে ধুয়ে ব্যবহার করা যায় বলে যথেষ্ট স্বাস্থ্যসম্মত এসব পুতুল। 

গ্রামীণ পুতুল

পুতলি পুরাণের পুতুলগুলোর সবচাইতে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো এদের ডিটেইলস। পুতুলের চেহারার ডিটেইলস তো আছেই। পাশাপাশি তার চুলের বাহার, অলংকার, শাড়ির ভাঁজ সবকিছুতেই লক্ষ্য করা যায় অখণ্ড মনোযোগ এবং যত্নের ছাপ। 

কাস্টমাইজড পুতুল

পুতলি পুরাণের খুব জনপ্রিয় একটি কাজ হলো, কোনো একজন মানুষের ছবি বা বর্ণনা থেকে তার আদলে পুতুল গড়ে দেওয়া। অনেকেই নিজের প্রিয় বান্ধবী, বোন, আত্মীয়ের ছবি নিয়ে এসে বলেন তার মতো করে একটা পুতুল তৈরি করে দিতে। সেক্ষেত্রে তার চেহারার গড়ন আনতে না পারলেও তার পোশাক, ভঙ্গিমা এসবের আদলে পুতুল তৈরি করে দেওয়া হয়। ফলে একদম অন্যরকম একটা গিফট আইটেম হয়ে দাঁড়ায় সেটা। ‘

নৃত্য পুতুল

বাচ্চাদের জন্য সফট পুতুলগুলো খুবই জনপ্রিয়। প্রবাসীরা পছন্দ করেন গ্রামীণ ধাঁচের পুতুল, কুরিয়ার বা আত্মীয়ের মাধ্যমে তা নিয়ে যান। শহুরে ক্লায়েন্টরা সাধারণত এমন কাস্টমাইজড পুতুল পছন্দ করেন। 

ঐতিহ্যবাহী পুতুল

পুতলি পুরাণের যাত্রা তো সবে শুরু। একে ভবিষ্যতে আরো সামনে নিয়ে যেতে চান মিতা মুনি। তিনি চান আরো অনেকেই এই পুতুল তৈরির কাজে দক্ষ হয়ে উঠুক, বিভিন্ন ওয়ার্কশপে শেখাতে চান তার কলা। এই দেশীয় ধারা ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর তিনি, আর এটাও আশা করেন যে এই দেশের মানুষ বিদেশি পুতুলের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী দেশী পুতুলগুলোকেও ভালোবাসতে শিখুক। পরিবার থেকেই এক সময়ে এই ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠুক।