কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সিমলায় উড়ছে ভারতীয় পতাকা। ছবিঃ সংগৃহীত।

'পার্পল ড্রিম'-পতাকা ও একটি আক্ষেপ অনুভূতি (পর্ব ৪৩)

সজল জাহিদ
লেখক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:০৫
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:০৫

(প্রিয়.কম) সিমলার মল রোডের শীর্ষ বিন্দুতে যখন পৌঁছাই তখন সন্ধ্যার রেশ শেষ হয়ে গেছে। পুরো পাহাড়ি শহর জুড়ে রাত নেমেছে ঘন হয়ে। সেই রাতকে আরও রাত্রের আবেশ এনে দিয়েছিল কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস, মেঘ আর কুয়াশার সম্মিলিত আলিঙ্গন। চারপাশের পাহাড় জুড়ে জোনাকির মত জ্বলতে শুরু করেছিল মিটিমিটি আলোকবর্তিকা। বেশ কিছু সময় নিজেদের মত করে এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করে যখন রাত বাড়ার সাথে সাথে শীতের প্রকোপ বাড়তে লাগলো, আমরাও উঠে পড়লাম নিজেদের রাতের ডিনার শেষ করে হোটেলের দিকে যাবার জন্য।

ছবি তুলছি আর সামনের দিকে এগোচ্ছি, একটু সামনে এসে ছবি তোলার সময় ক্যামেরার লেন্স বা ফোকাসে একটি পতাকায় চোখ আটকে গেল। ভালো করে তাকিয়ে দেখার আগেই বুঝতে পারলাম এটা নিশ্চিতভাবেই ভারতের জাতীয় পতাকা। কিন্তু ছবি তুলতে তুলতেই ভাবতে লাগলাম, আমাদের জাতীয় পতাকা তো কখনো সূর্য ডোবার পরে তোলা থাকেনা, তবে ওদেরটা কেন? বিষয়টা খেয়াল হতেই ভালো করে চারপাশে তাকালাম। দেখলাম অনেকেই ওই পতাকার আর পতাকার সাথে নিজেদের ছবি তুলছে! বিষয়টা বেশ ভাবিয়ে তুলল।

আচ্ছা আমরা, আমাদের দেশে তো কোন বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া এভাবে কখনো পতাকার ছবি তুলিনা, বা পতাকার সাথে নিজেদের কোন ছবি। এটা ভেবে আবারো পতাকাটার দিকে তাকালাম, দেখলাম একদম অন্য রকম কাপড়ের, রাতের বেলায়ও জ্বলজ্বল করছে পতাকাটা! আর উড়ছে তো উড়ছেই, একদম পাগলের মত উড়ছে! তার এমন রঙ, এমন আচরণ আর এমন মাদকতা যে না চাইতেও কেমন যেন একটা শ্রদ্ধা ঠিকরে পড়ছে চারদিক থেকে! নিজের অজান্তেই কেমন একটা চনমনে ভাব চলে এলো রক্তের ভিতরে!

বেশ অনেকক্ষণ ধরে পতাকাটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কেমন যেন অদ্ভুত একটা শিহরণ লাগলো নিজের ভিতরে, রক্তের মধ্যে একটা অন্য রকম চঞ্চলতা তৈরি হল, আর সেই সাথে মনে করার চেষ্টা করলাম আচ্ছা আমাদের দেশের কোথাও কি সব সময় এমন করে এতো বিশাল আর জ্বলজ্বলে পতাকা ওড়ে কখনো? অনেক অনেক ভেবে, স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে বেড়ালাম। কিন্তু এমন কোন কিছু মনে করতে পারলামনা, যে কোথাও এমন বিশাল একটা লাল-সবুজ, জ্বলজ্বলে, সিল্কের পতাকা উড়ছে অবিরত! যেটা দেখে ওদের মত ছবি তুলতে ইচ্ছা হবে পতাকার আর পতাকার সাথে আমাদের নিজেদের। যেটা কখনো নামবেনা, উড়তেই থাকবে। ভাবনাটা ওই সময় ঠিক ওই পর্যন্তই ছিল।

ফিরে আসার সময় পতাকাটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম, আর জেনেছিলাম যে ওই পতাকাটা ওদের শেষের সবচেয়ে দামী কাপড় দিয়ে বানানো হয়েছে। যেটা বৃষ্টিতে ভিজলেও নেতিয়ে পড়েনা বা লেপটে থাকেনা, পানি ধরে রাখতে পারেনা এই কাপড়! তাই সব সময় উড়তেই থাকে, কখনোই থেমে থাকেনা বা এক জায়গায় জবুথবু হয়ে থাকেনা! এই কাপড়ের রঙ নাকি কখনো নষ্ট হয়না, শত রোদেও! তাই সব সময় ঝলমল করে, জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে সব সময়ই! কি আলোতে, কি আঁধারে? কি দিনে বা কি রাতে! সত্য-মিথ্যা জানিনা, যাচাই করিনি বা ইচ্ছাও হয়নি, কিন্তু একটু না বেশ অনেকটা আক্ষেপ হয়েছি, ভেবে আমাদের পতাকার দুরাবস্থার কথা ভেবে?

আমরাও পতাকা বানাই, পতাকা ওড়াই, তবে সেটা কিভাবে, কোন কাপড়ে আর কি মানের? কত দামের আর কতটা মর্যাদা দেই সেটার? শুধু মাত্র বিশেষ কয়েকটা দিন এলেই পতাকা আর পতাকার সাথে দুই একটি ছবি তুলে বেশ হয়ে যায় দেশপ্রেম দেখানো! মনের কষ্টটা মনেই চেপে রেখে চলে গেলাম। কিন্ত এই পতাকা যে আমাকে আবারো একই রকম ভাবনায় ফেলে দেবে সেটা ভাবতেই পারিনি। যেটা দেখলাম কার্গিল যুদ্ধের সমাধিক্ষেত্র আর জাদুঘরে গিয়ে।

সেই একই রকম একটা পতাকা, একই রকম সাইজ, একই রকম জ্বলজ্বলে, ঝলমলে আর একই রকম পাগলের মত উড়ে চলেছে অবিরত! সেখানে গিয়ে জানলাম, তাদের এই পতাকা কখনো নামেনা, কখনো থামেনা, কখনো উজ্জলতা হারায়না! এটা তারা করেন তাদের বীরদের সব সময় শ্রদ্ধা জানাতে!

ইস তখন কি যে আফসোস হল কিভাবে বোঝাই? ওরা তো ওদের ছোট্ট একটা জমি বা পাহাড় উদ্ধার করেছে শত্রুদের কাছ থেকে, তাতেই এই মর্যাদা! আর আমাদের যে শহীদরা ভাষার জন্য, পুরো দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে, তাদের অনেকের সমাধির খবরই ঠিক কজন জানি আমরা? সব সময়, পতাকা উড়িয়ে সম্মান? দেখাতে পেরেছি কি কখনো?

এসব ছাড়ুন, সব সময় এমন একটা পতাকা কি কোথাও উড়তে দেখেছি? এমন জ্বলজ্বলে, এমন ঝলমলে, এমন সিল্কি আর এমন পতপত করে অবিরত উড়তে থাকা অবস্থায়? যেটা দেখেই মাথা অবনত হবে, বুকের সিনা চওড়া হয়ে যাবে, যেটা দেখে রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠবে? যেটা দেখে মন ভরে যাবে? যেটা দেখে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করবে, যেটা দেখলে নিজের ভেতর থেকেই দেশের প্রতি, পতাকার জন্য জীবন বিসর্জন করা শহীদদের প্রতি একটা মমতাবোধ, একটা ভালোবাসা, একটা সত্যিকারের দেশপ্রেমের ভাব জাগ্রত হবে?

এমন আছে কি কোথাও? আমি তো দেখিনি বা চোখে পড়েনিআপনি বা আপনারা কেউ কি দেখেছেন?

আর যদি না থেকে থাকে, তবে নেই কেন আমাদেরও, সব সময় উড়তে থাকা, গর্বে বুক ভরে ওঠা আর আনন্দে চোখে পানি চলে আসার মত নীল আকাশে অবিরত উড়তে থাকা এমন একটা লাল-সবুজের পতাকা?

 

পার্পল ড্রিমের অন্যান্য পর্বগুলি পড়ুন এখানে। 

 'পার্পল ড্রিম' - পূর্বকথা (পর্ব ১)

 'পার্পল ড্রিম'- দুশ্চিন্তা নিয়ে যাত্রা শুরু (পর্ব ২)

 'পার্পল ড্রিম'- তিস্তা একপ্রেস ও দুধ কুমারীর হাড়ি ভাঙা (পর্ব ৩)

 'পার্পল ড্রিম'- কলকাতার আলুসেদ্ধ গরম ও এক পশলা বৃস্টি (পর্ব ৪)

'পার্পেল ড্রিম'- কালকা মেইলের দিন-রাত্রি (পর্ব ৫)

'পার্পল ড্রিম'- কেন কালকা মেইলে? (পর্ব ৬)

'পার্পল ড্রিম'- স্বপ্নের টয় ট্রেনে (পর্ব ৭)

'পার্পল ড্রিম'-একটি মানবিক গল্প (পর্ব ৮)

 'পার্পল ড্রিম'- সুখের শহর সিমলা (পর্ব ৯)

'পার্পল ড্রিম'- সিমলা-একহাতে সুখ যার অন্য হাতে দুঃখ! (পর্ব ১০)

'পার্পল ড্রিম'- অলস শহর মানালিতে (পর্ব ১১)

 'পার্পল ড্রিম'- হোটেল ও আপেল বিভ্রাট (পর্ব ১২)

'পার্পল ড্রিম'- একটু বৃষ্টি, আর একটু মাতলামির গল্প (পর্ব ১৩)

'পার্পল ড্রিম'- বিয়াসের তীরে আলসেমিতে (পর্ব ১৪)

'পার্পল ড্রিম'-সেদিনও বৃষ্টি (পর্ব ১৫)

'পার্পল ড্রিম'- স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু (পর্ব ১৬)

'পার্পল ড্রিমবিয়াসের উৎপত্তি স্থল ও রোথাং পাসের রোমাঞ্চ (পর্ব ১৭)

'পার্পল ড্রিম'-কেলং-জিসপা না সারচু? (পর্ব ১৮)

 'পার্পল ড্রিম'-সারচুর সোনা পাহাড় ও নির্ঘুম রাত (পর্ব ১৯)

'পার্পল ড্রিম'-পাঙএকটি জনপদের গল্প (পর্ব ২০)

'পার্পল ড্রিম'- রুক্ষ ভালোবাসার শহর লেহ (পর্ব ২১)

'পার্পল ড্রিম'- পার্পল ড্রিম এর মামা বাড়ি (পর্ব ২২) 

'পার্পল ড্রিম'- পার্পল ড্রিম এর শ্বশুরবাড়ি (পর্ব ২৩)

'পার্পল ড্রিম'- ভ্রমণে নদীর আকর্ষণ! (পর্ব ২৪) 

'পার্পল ড্রিম'- ম্যাজিক্যাল ম্যাগনেটিক হিল! (পর্ব ২৫)

'পার্পল ড্রিম' সঙ্গম-ইন্দাস ও জান্সকারের! (পর্ব ২৬)

'পার্পল ড্রিম' স্বর্গের বিছানা থেকে শুভ সকাল (পর্ব ২৭)

'পার্পল ড্রিম'- পাহাড় থেকে লাফ! একটি স্বপ্ন পূরণ (পর্ব ২৮)

'পার্পল ড্রিম'- গার্লফ্রেন্ড না রয়েল এনফিল্ড! (পর্ব ২৯)

'পার্পল ড্রিম'- খারদুংলা টপ! ১৮,৩৮০ ফুট! (পর্ব ৩০)

'পার্পল ড্রিম’ - খারদুংলা চূড়ায় প্রথম বাংলাদেশী! (পর্ব ৩১)

'পার্পল ড্রিম' নুব্রাভ্যালী থেকে তুরতুক (পর্ব ৩২)

'পার্পল ড্রিম' তুরতুক-বিধাতার বিশেষ আশীর্বাদ (পর্ব ৩৩)

'পার্পল ড্রিম'- নুব্রাভ্যালী ও ক্যামেল সাফারির গল্প (পর্ব ৩৪)

'পার্পল ড্রিম'- ফুল কুমারীর গল্প (পর্ব ৩৫)

'পার্পল ড্রিম' -একটি কলা কাহিনী (পর্ব ৩৬)

'পার্পল ড্রিম' -নিশা, তুম বাড়ি মিঠি হো (পর্ব ৩৭)

'পার্পল ড্রিম' -নুব্রা থেকে প্যাংগং (পর্ব ৩৮)

'পার্পল ড্রিম'- প্যাংগং লেক (পর্ব ৩৯)

'পার্পল ড্রিম' - তিন আহাম্মকের গল্প (পর্ব ৪০) 

'পার্পল ড্রিম' -তুষার পাতের আশীর্বাদ (পর্ব ৪১)

'পার্পল ড্রিম'- কার্গিল-একটি যুদ্ধক্ষেত্র ভ্রমণের গল্প (পর্ব ৪২)

 

সম্পাদনাঃ প্রিয় ট্রাভেল/ জিনিয়া

প্রিয় ট্রাভেল সম্পর্কে আমাদের লেখা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে। যে কোনো তথ্য জানতে মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো লেখা পাঠাতে ক্লিক করুন এই লিংকে - https://www.priyo.com/post