কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে চুলের অকালে পেকে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব। ছবি কৃতজ্ঞতা: নূর। মডেল: ফারহানা।

অকালে চুল পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করবে যে ছয়টি উপাদান

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৪৬
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৪৬

(প্রিয়.কম) এখনকার সময়ের তরুন ছেলে অথবা মেয়েদের চুল নিয়ে বহুল প্রচলিত যে সমস্যাটি দেখা যায় সেটি হল- অকালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা! ২০ থেকে ৩০ বছরের বহু ছেলে অথবা মেয়েদের পরিবেশগত কারণে অথবা অযত্নের কারণে চুল অকালে পেকে যাওয়ার মত বিব্রতকর এবং বিরক্তিকর সমস্যাটি দেখা দিচ্ছে!

এছাড়াও জেনেটিক্যাল সমস্যা, হরমোনাল সমস্যার কারণেও অনেকের খুব কম বয়সেই চুল পেকে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে থাকে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, ৩০ বছরের পর থেকেই চুল পেকে যাওয়ার প্রবণতা প্রতি দশকে ১০-২০% পর্যন্ত বেড়ে যেতে থাকে।

যদিও বাজারে প্রচুর চুলের কলপ এবং রঙ পাওয়া যায় তবুও প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করাটা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। আজকের এই ফিচারে জেনে নিন দারুণ ৬ টি উপাদানের ৬ রকম ব্যবহার যা আপনার চুলের পেকে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনবে এবং চুল কালো রাখতে সাহায্য করবে।  

১/ আমলকী অথবা আমলা

যে কোন ধরণের চুলের জন্য আমলকী খুবই দারুণ উপকারী একটি ফল। চুলের বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন- অকালে চুল পাকা, নিস্প্রাণ চুল, চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোর জন্য আমলকী খুব দারুণভাবে কাজ করে থাকে। আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এর রয়েছে এন্টি-এইজিং উপকারিতা। আমলকী খেলেও প্রচুর উপকার রয়েছে তবে চুল পেকে যাওয়া কমাতে সরাসরি চুল ও চুলের গোঁড়ায় প্রয়োগ করলেই সবচেয়ে বেশী উপকার পাওয়া যাবে।

যেভাবে ব্যবহার করতে হবে:  

চুলের ব্যবহারের জন্য  প্রথমে একটি পাত্রে নারকেল তেল নিয়ে এতে কিছু শুকনো আমলকী দিয়ে ভালোমতো তেল ফোটাতে হবে। ফোটানো হয়ে গেলে চুলে থেকে নামিয়ে তেলটি ভালোমতো ঠাণ্ডা করতে হবে। এখন এই তেলটি আপনার সম্পুর্ণ চুল এবং চুলের গোঁড়ায় ভালোমত দিয়ে সারারাত চুলে তেল রেখে পরদিন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। সময়ের অভাব থাকলে অন্তত এক ঘন্টা হলেও এই তেল চুলে রাখা লাগবে। এই তেল সপ্তাহে অন্তত দুইবার অবশ্যই ব্যবহার করবেন।

২/ কারিপাতা

কারিপাতা চুলের রঙে গাড় পিগমেন্ট আনতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নারকেল তেলের সাথে মেশানো হলে এই কারিপাতা চুলের জন্য দারুণ একটি টকিন হিসেবে খুবই ভালো কাজ করে থাকে।

যেভাবে ব্যবহার করতে হবে:

চুলে ব্যবহারের জন্য এক টেবিল চামচ নারকেল তেলে এক মুঠো কারিপাতা দিয়ে খুব ভালোভাবে জ্বাল দিতে হবে যেন পাতার সাথে তেল একদম মিশে যায়। এরপর ঠান্ডা করে পাতা থেকে তেল ঝরিয়ে নিতে হবে। এই তেল আপনার চুলে খুব ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ৩০-৪৫ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে। এরপর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে অন্তত দুইবার এই পদ্ধতি মেনে চলুন।

৩/ মেহেদী

চুলের জন্য মেহেদী কতোটা ভালো এবং উপকারী এটা নিশ্চয় আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র চুলের অকালে পেকে যাওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধ নয়, চুলের শক্তি বাড়াতে, চুলের যত্নে মেহেদী যেন অনন্য।

যেভাবে ব্যবহার করতে হবে:

প্রথমে এক মুঠো একদম ফ্রেশ মেহেদী পাতা দারুণ করে বেটে নিতে হবে। এরপর মেহেদী পাতা বাটার সাথে তিন চা চামচ আমলকীর পাউডার, এক চা চামচ কফি পাউডার এবং অল্প পরিমাণে টকদই দিতে হবে। এরপর সকল উপাদান খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে পুরো চুলে সমানভাবে লাগিয়ে নিয়ে একদম শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।  শুকিয়ে গেলে সাবধানে চুল থেকে ধুয়ে ফেলে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে অন্তত একবারের জন্য হলেও এই প্রক্রিয়া মেনে চুলে মেহেদি ব্যবহার করতে হবে।

৪/ নারকেল তেল এবং লেবুর রস

চুলের জন্য নারকেল তেল একদম জাদুর মতো কাজ করে থাকে। এটা আপনার চুল নমনীয় করে, চুল দ্রুত বড় হতে সাহায্য করে, মাথার ত্বকে যেকোন ধরণের ইনফেকশন হতে বাঁধা দেয় এবং চুলে দীপ্তিময়তা আনতে সাহায্য করে। নারকেল তেল বহুদিন ধরে ব্যবহার করলে সেটি চুলের অকালপক্বতা রোধে সাহায্য করে কারণ নারকেল তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

যেভাবে ব্যবহার করতে হবে:

আপনার চুলের ঘনত্ব এবং চুলের পরিমাণ দেখে পরিমাণমতো নারকেল তেল নিয়ে তিন চা চামচ লেবুর রস মেশাতে হবে। এখন এই মিশ্রণ ভালোমতো চুলের গোঁড়া থেকে একদম চুলের আগা পর্যন্ত ভালোমতো ম্যাসাজ করে দিতে হবে। ঘন্টাখানেকের পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

৫/ বীট, গাজর এবং লেবুর রস

বীট, গাজর এবং লেবু তিনটি উপকারী খাদ্য উপাদান আপনার চুলের জন্যেও দারুণ উপকারী। তিনটির রস একসাথে মিশিয়ে চুলে দিলে চুলের জন্য যেমন সেটি উপকারী তেমনই চুলের রঙ গাড় করতেই অনেক বেশী সাহায্য করে থাকে এই মিশ্রণ।

যেভাবে ব্যবহার করতে হবে:

তিনটি উপাদানের রস একসাথে করে এক কাপ পরিমাণ করতে হবে। এরপর এতে নারকেল তেল মিশিয়ে চুলে খুব ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। যেহেতু, বীটের গাড় রঙ আপনার চুলের ত্বকেও তার রঙের প্রভাব ফেলতে পারে, সেহেতু মুখের অংশে তেল দেওয়ার সময় সাবধানে থাকতে হবে। চুলে ভালোভাবে তেল দেওয়া হয়ে গেলে এক ঘন্টা রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৬/ আলুর খোসা

এতদিন শুধুমাত্র আলু আপনার প্রিয় হলেও এখন থেকে আলুর খোসাও আপনার চুলেরও প্রিয় হয়ে উঠবে! আলুর খোসাতে রয়েছে প্রাকৃতিক স্টার্চ, যা আপনার পেকে যাওয়া চুল কালো করতে সাহায্য করে থাকে।

যেভাবে ব্যবহার করতে হবে:

দুই কাপ পানিতে এক কাপ আলুর খোসা দিয়ে অন্তত ২৫ মিনিট ভালোমতো ফুঁটাতে হবে। এরপর আলুর খোসা থেকে পানি ঝরিয়ে সেই পানি ভালোমত ঠাণ্ডা করতে হবে। আগে থেকেই একটি কথা জেনে রাখুন, এই পানির ঘ্রাণ খুব একটা সুন্দর হবে না। তাই আপনি চাইলে এই পানির সাথে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে দিতে পারেন।

এখন স্বাভাবিকভাবে চুল শ্যাম্পু করুন এবং চুলের বাছাই করা অংশে সরাসরি এই পানি ঢেলে দিতে পারেন অথবা ব্রাশ দিয়ে চুলের বাছাইকৃত অংশে পানিটা লাগাতে পারেন।

সূত্র: Top 10 Home Remedies, Natural Living Ideas.

সম্পাদনা : রুমানা বৈশাখী