কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আলহাজ এবিএম নুরুল ইসলাম। ছবি : প্রিয়.কম

‘রাজনীতি মানুষের সেবার জন্য, টাকা কামানোর জন্য নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৩৬
আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৩৬

(প্রিয়.কম) আলহাজ এবিএম নুরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। জন্ম ৬ জুলাই, ১৯৩৭, রাজবাড়ী জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন প্রবীণ এ আইনজীবী। ছিলেন একসময়ের মাঠ কাঁপানো ছাত্রনেতা। ১৯৫৫-৫৬ সেশনের জন্য ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলের ভিপি নির্বাচিত হন। দেশ স্বাধীনের আগে (১৯৬৫-৭০) নির্বাচিত হয়েছেন গণপরিষদ সদস্য হিসেবে। তিনি পাঁচ ছেলেমেয়ের জনক। মেজ ছেলে এমবিবিএস ডাক্তার। বাকি দুজন ব্যবসা করেন। মেয়েরা গৃহিণী। 

বাংলাদেশের শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকার নিয়ে লক্ষাধিক মামলা পরিচালনা করেছেন নুরুল ইসলাম । এসব বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেন প্রিয়.কমের নিজস্ব প্রতিবেদকের সঙ্গে। আইন পেশা ও সামাজিক কার্যক্রম নিয়ে তার চিন্তাধারা কী তা সাক্ষাৎকারটিতে উঠে এসেছে।

প্রিয়.কম : স্যার কেমন আছেন?

নুরুল ইসলাম : ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

প্রিয়.কম : ভালো আছি। স্যার, এ পর্যন্ত কতগুলো মামলা করেছেন শিক্ষা নিয়ে?

নুরুল ইসলাম : শিক্ষা ও সমাজসেবাকে আমি ইবাদত হিসেবে নিয়েছি। আমি বাংলাদেশের শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকার নিয়ে হাইকোর্টে প্রায় এক লক্ষ রিট করেছি। সফলতা পেয়েছি অধিকাংশ রিটে। শিক্ষার উন্নয়নে ৭০টি দেশ ভ্রমণ করেছি। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার মান উন্নয়নে আমি বিশ্বের ২০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে মিটিং করেছি।

প্রিয়.কম : শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে এলাকায় কতগুলো প্রতিষ্ঠান গড়েছেন?

নুরুল ইসলাম : আমি আমার এলাকায় স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদসহ ২৩টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। সব প্রতিষ্ঠান আমি একা গড়তে পারিনি। অনেকে আমাকে সহযোগিতা করেছে।

প্রিয়.কম : শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদানের ব্যাপারে যদি কিছু বলতেন।

নুরুল ইসলাম : শিক্ষাব্যবস্থা ভালো না হলে দেশ ও জাতি কখনোই এগোতে পারবে না। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভালো হলে সে দেশ দ্রুত উন্নতি লাভ করবে।

প্রিয়.কম : আপনি যখন ওকালতি শুরু করেন তখন হাইকোর্টে কতজন উকিল ছিলেন?

নুরুল ইসলাম : আমরা যখন উকালতি শুরু করি তখন হাইকোর্টে ৬০ জন উকিল প্র্যাকটিস করতেন। আমার যতদূর মনে পড়ে, এখন উকিলের সংখ্যা শুধু হাইকোর্টেই সাত হাজার।

প্রিয়.কম : ওকালতির শুরুতে কাদের বেশি অনুসরণ করতেন?

নুরুল ইসলাম : আমি যখন ওকালতি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন পূর্ব পাকিস্তানের বিখ্যাত উকিলদের মামলা পরিচালনা ফলো করতাম। আদালতে গিয়ে মামলা পরিচালনার কৌশল দেখতাম, লিখতাম। ডায়েরি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নোট নিতাম। সে সময় ক্রিমিনাল মামলায় ভালো সাবমিশন দিতেন আব্দুস সালাম খান। আর সিভিল বিষয়ে আদালতে ভালো সাবমিশন দিতেন হামিদুল হক চৌধুরী।

প্রিয়.কম : তরুণ আইনজীবীদের প্রতি আপনার পরামর্শ থাকবে কী?

নুরুল ইসলাম : আমি বলব, এখন যারা বয়সে তরুণ তারা কমপক্ষে পাঁচ বছর বিনা পারিশ্রমিকে সিনিয়রদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করবে। এখন অনেক উকিলদের মধ্যে শর্টকাট পদ্ধতিতে ইনকাম করার প্রবণতা দেখা যায়। এটি পরিহার করতে হবে। এ পেশাকে সেবা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। তরুণ আইনজীবীদের সেবার পেছনে সময় ব্যয় করতে হবে। জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

প্রিয়.কম : রাজনীতি ও সমাজনীতি নিয়ে কিছু বলবেন কি?

নুরুল ইসলাম : আমি ব্যাক্তি জীবনে রাজনীতিকে গ্রহণ করেছি বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করে। ১৯৬৫ সালে আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। রাজনীতি করে আমি টাকা কামানোর কোনো ইচ্ছা পোষণ করিনি। রাজনীতি মানুষের সেবার জন্য, টাকা কামানোর জন্য নয়। সম্প্রতি আমি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিজের নামে লাইসেন্স করা একটি পিস্তল ও একটি ডিবিবিএল বন্দুক দান করেছি। এসব অস্ত্র পুলিশ বাহিনীর কাজে লাগবে।

প্রিয়.কম : বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করেছেন দলের কোন পদে থেকে?

নুরুল ইসলাম : ১৯৭০ সালে আমি আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি কমিটির সেক্রেটারি ছিলাম। তখন রাজনীতি করতাম মানুষের সেবার ব্রত নিয়ে, টাকা কামানোর জন্য নয়। 

প্রিয়.কম : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

নুরুল ইসলাম : দেখো, এখন আমার বয়স ৮৭ বছর। জীবনসায়াহ্নে এসে আমি বলব, যারা রাজনীতি করবে, তারা সমাজ ও মানুষের কথা চিন্তা করে রাজনীতি করবে। টাকা কমানোর জন্য নয়, সমাজসেবা ও মানবসেবার ধর্ম নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রিয়.কম : প্রিয়.কমের পক্ষ থেকে আপনার এ মূল্যবান সাক্ষাৎকারের জন্য ধন্যবাদ।

নুরুল ইসলাম : তোমাকেও ধন্যবাদ।  

প্রিয় সংবাদ/হিরা/আজাদ চৌধুরী