কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

এতিমখানার শিশুদের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই ক্রাফটিং শুরু করেন মৌনী। ছবি কৃতজ্ঞতা: মিফতাহুল জান্নাত মৌনী

মৌনীর হাত ধরে পাল্টে গেছে ১৭ জন মেয়ের জীবন!

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:০৫
আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:০৫

(প্রিয়.কম) জন্ম থেকে আমরা সবাই মোটামুটি একই রকম জীবন যাপন করে চলি। জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন গল্পের মোড় ঘুরে যায়, সাধারণ একটি ঘটনাই তখন আমাদেরকে অন্যরকম একটি মানুষে গড়ে তোলে। তেমনিভাবে মিফতাহুল জান্নাত মৌনীর জীবনেও এমন একটা সময় আসে, যার ফলাফল হিসেবে আজ একই সাথে তিনি ক্রাফটার এবং একটি এতিমখানার ১৭টি কন্যাশিশুর খরচ চলে তারই ক্রাফটিং এর আয় থেকে। 

২০১৪-১৫ সালে গ্লোবাল ওয়ান নামের একটি এনজিও প্রজেক্টে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী চাকরি করতেন মৌনী। মূলত এতিম শিশুদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি জড়িয়ে যান দাওয়াতুল ইসলাম বালিকা এতিমখানার সাথে। এর কর্ণধার মিসেস সখিনা, তার মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী তৈরি হয় এই এতিমখানা। তিনি বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজ করে থাকেন। এতিমখানা চালানোর পাশাপাশি তিনি এলাকার দুস্থ মেয়েদেরকেও সেলাই এবং হাতের কাজ শেখান। 

এই এতিমখানা এবং এখানকার বাচ্চাদের প্রতি একটা মায়া জন্মে যায় মৌনীর। এনজিওর চাকরি ছেড়ে দিলেও এখানে নিয়মিত আসেন তিনি। সেই সাথে চিন্তা করেন তাদের জন্য স্থায়ী একটা রোজগারের উৎস থাকলে মন্দ হত না। মৌনীর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী প্রথম ক্রাফটিং করার পরামর্শ দেন। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে তিনি কাজ শুরু করেন। মূলত পোশাকের সাথে বিভিন্ন ধরণের ডেকোরেটিভ পিন তৈরির কাজটি করেন তিনি।

পিন

পিন তৈরির কাজটা একাই করেন তিনি। ছবি:  মিফতাহুল জান্নাত মৌনী

"পিন্সপায়ার" নামটা ঠিক করা হয় ফেইসবুকে বিজনেস পেইজ খুলতে গিয়ে। পিন+ইন্সপায়ার মিলে নামটা দেওয়া, যা কিনা "to inspire the orphan girls to make and sell hijab pins for a dignified life."

এর কয়েকমাস পর ২০১৬ এর ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের "অ্যাকটিভ সিটিজেন" প্রজেক্ট এর আওতায় "ইয়ুথ লিডারশীপ ট্রেইনিং"-এ আন্তর্জাতিক শিক্ষা সফরে সাতদিনের জন্য ইংল্যান্ড- এ যাওয়ার সুযোগ পান মৌনী। ওখানে গিয়ে একটা দাতব্য সংস্থার সাথে পিন্সপায়ারের বিষয়টা শেয়ার করলে তারা অত্যন্ত আগ্রহী হয়, এবং ওখানে বেশ কিছু প্রোডাক্ট বিক্রি হয়। এখনও ওই সংস্থা তাদের বিভিন্ন আয়োজনে পিন্সপায়ারে অর্ডার দিয়ে থাকেন। 

পিন্সপায়ারের লক্ষ্য ছিলো এতিম মেয়েদেরকে বিভিন্ন হাতের কাজে দক্ষ করে তাদেরকে সাবলম্বী হতে শেখানো। কিন্তু মেয়েরা অনেক ছোট হওয়ায় মৌনী একাই কাজ করে যাচ্ছেন। তার ইচ্ছে আছে আগামী কয়েকবছরের মাঝে পিন্সপায়ারের পরিসর আরও বড় করার। 

কন্যাশিশু

পিন্সপায়ারের শতভাগ আয় এই কন্যাশিশুদের খরচে ব্যয় করা হয়। ছবি: মিফতাহুল জান্নাত মৌনী

পিন্সপায়ারের সম্পূর্ণ টাকা এতিমখানার শিক্ষাখাতে ব্যয় হয়, সেই হিসাবও তিনি নিজেই রাখেন। লাভের ৬০ শতাংশ দিয়ে এতিমখানার খাবার এবং শিক্ষার খরচ বহন করা হয়, পিন্সপায়ার এর কাজে লাগে ২০ শতাংশ এবং বাকি ২০ শতাংশ এই কন্যাশিশুদের ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখা হয়। বর্তমানে পিন্সপায়ার নিজের লভ্যাংশ দিয়েই প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে পারে। অনলাইন আর সামনাসামনি, দুইভাবেই পিন্সপায়ারের গ্রাহকরা তাদের কাছে প্রোডাক্ট কিনে থাকেন। 

পিন্সপায়ার এর কাজ মৌনীর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে কিছুদিন গ্রাফিকস ডিজাইনিং নিয়ে পড়লেও পরে তা বাদ দিয়ে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশে অনার্স এবং মাস্টার্স করেন। মাস্টার্সের থিসিস করছেন এখন। তবে চারুকলা বাদ দিলেও শিল্প তার পিছু ছাড়েনি। তিনি এখন কাজ করছেন মেগা লজিক অ্যান্ড টেকনোলজিস এর ডিজাইনার হিসেবে।

প্রিয় লাইফ/ আর বি