কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

গাইবান্ধার বালাসী ঘাটে তোলা ছবি। ছবি কৃতজ্ঞতা:মেহেদী হাসান রনি।

'ড্রোন ওড়াবার সাথে সাথেই হাজার খানেক মানুষ জড়ো হয়ে যায়!'

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:৫৩
আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:৫৩

(প্রিয়.কম) ছবি তোলার প্রতি যাদের ঝোঁক ও ভালোবাসা কাজ করে তারা সবসময় চেষ্টা করেন ছবি তোলার মাঝে নতুনত্ব নিয়ে আসতে। যে কারণে বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন গ্যাজেট ব্যবহার করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ছবি তোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নদী তীরবর্তী এলাকায় ছবি তোলার উদ্দেশ্যে সপ্তাহ দুয়েক আগে রনি ও তার এরিয়াল আর্টস টিম গিয়েছিল গাইবান্ধাতে। উদ্দেশ্য ছিল বালাসী ঘাটের কিছু দারুণ এরিয়াল ফুটেজ সংগ্রহ করা। এমন ছবি তোলার ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করতে হয়। যে কারণে, ছবি তোলার উদ্দেশ্যে ড্রোন ওড়াবার সাথে সাথেই আশেপাশে অনেক গ্রামবাসী জড়ো হয়ে যায়। তিনি বলেন, 'সকলেই ড্রোনকে হেলিকপ্টার ভেবে নদীর পাড়ে এসে বেশ বড়সড় ভিড় তৈরি করে ফেলে। ড্রোন ওড়াবার সাথে সাথেই প্রায় হাজারখানেক মানুষ জড়ো হয়ে যায়!' সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিল বলে সেবার কোনমতে ড্রোনটা ল্যান্ড করিয়ে পুরো দলবল নিয়ে দ্রুত ফিরে চলে আসেন রনি।

এমনই বেশ কিছু মিশ্র ও মজার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে ফটোগ্রাফার মেহেদী হাসান রনি কে। শখের বশে ছবি তোলা শুরু হলেও এই ছবি তোলাটাই বর্তমান সময়ে তার ভালোবাসার কাজ। রনি পড়ালেখা করছেন আইবিএ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। একইসাথে তিনি একজন ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক্স আর্টিষ্ট। বিগত দুই বছর ধরে আপওয়ার্কে কর্মরত আছেন।

মেহেদী হাসান রনি ছবি ১

রনির ছবি তোলার শুরুটি ছিল খুব ছিমছামভাবে। নিজের হাতে স্মার্টফোন আসার পর থেকেই টুকটাক ছবি তোলা হতো। সময়টা হবে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি। সেই কলেজ জীবন থেকেই টুকটাক ছবি তোলার শুরু। যা আজকের দিনে তার অন্যতম কাজের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। সেই ছেলেবেলা থেকে শখের বশে ছবি তোলার ব্যাপারটিকে এখনও কমার্শিয়াল ক্ষেত্রে নিয়ে আসতে পারেন নি রনি। তেমন কোন ইচ্ছাও তার নেই বলে জানান।

মেহেদী হাসান রনি ছবি ২

যেহেতু একেবারেই শখ থেকে ছবি তোলার যাত্রা শুরু হয়েছিল তার, তাই কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কিংবা হাতে কলমে ছবি তোলার প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়া হয়নি তার। ইউটিউবের বিভিন্ন ধরণের টিউটোরিয়াল দেখেই ছবি তোলার সকল খুঁটিনাটি শেখা হয়েছে তার। যে কারণে বেশ কয়েকজন ফটোগ্রাফারদের নিয়মিত ফলো করেন ইউটিউবে। এক একজন ফটোগ্রাফারের ছবি তোলার ক্ষেত্রে কনসেপ্ট ডেভেলপমেন্ট, ফ্রেমিং কম্পোজিশন একেক রকম হয়ে থাকে। যে কারণে একাধিক ফটোগ্রাফারদের কাজ নিয়মিত ফলো করেন তিনি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখার পাশাপাশি একাধিক ছবি প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে যেতেন নিয়মিত।

মেহেদী হাসান রনি ছবি ৩

মোবাইল ফোনে ছবি তোলার সময় হিসেব করলে ৪-৫ বছরের বেশী হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। তবে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছেন দেড় বছর যাবত। বিভিন্ন কনসেপ্টের ছবি তোলার ব্যাপারে আগ্রহ থাকলেও রনি মূলত এস্ট্রোফটোগ্রাফি এবং এরিয়াল ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করতে বেশী পছন্দ করেন। এস্ট্রোফটোগ্রাফি হলো গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ তথা মহাকাশের বস্তুগুলো নিয়ে ফটোগ্রাফি। অন্যদিকে এরিয়াল ফটোগ্রাফি হলো ড্রোন এর সাহায্যে উঁচু স্থান থেকে কোন স্থান ও বস্তুর ছবি তোলা। বর্তমানে এরিয়াল ফটোগ্রাফি নিয়েই অনুশীলন ও কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি ‘এরিয়াল আর্টস’ নামে একটি ফেসবুক পেইজও খুলেছেন রনি। তিনি আরো জানান, খুব শীঘ্রই এরিয়াল ফটোগ্রাফি নিয়ে চমকপ্রদ কিছু কাজ করতে যাচ্ছেন তিনি।

মেহেদী হাসান রনি ছবি ৪

রনি’র কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, তার তোলা ছবি নিয়ে কোন প্রদর্শনি হয়েছে কিনা। উত্তরে তিনি বলেন, "এখনো কোনো প্রদর্শনীতেই ছবি দেইনি। আমার কাছে আর্ট জিনিসটা প্রতিযোগিতার জন্যে না। শৈল্পিক সৃষ্টির মুল্যায়ন স্কোরিং দিয়ে সম্ভব নয়, এটাই বিশ্বাস করি। নিকট ভবিষ্যতে প্রদর্শনিতে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সম্ভাবনাও নেই।"

ছবি তোলার জন্য বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। যার ধারাবাহিকতায় ১০-১২ টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ছবি তোলার জন্য যেতে হয়েছে রনি এবং রনির এরিয়াল আর্টস টিমকে। পরিকল্পনা রয়েছে নতুন বছরে ভারত ও ভূটানে যাওয়ার। ভিন্ন দুইটি দেশে ভ্রমণের মূল লক্ষ্য হলো- স্ট্রীট লাইফ ফটোগ্রাফি এবং ন্যাচারাল ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি করা।

মেহেদী হাসান রনি ৫

নিজের তোলা ছবি যখন অন্য কেউ দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন তখন ভীষণ আনন্দিত হন রনি। এই ভালো লাগাটাই তাকে আরো দারুণ এবং নতুন ছবি তোলার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। নানান রকমের ছোট-বড় মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দী করে রাখার মধ্যেই যেন অন্যরকম এক প্রশান্তি। আর এই ভালোলাগা ও প্রশান্তিই তার কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। নিউ ইউর্কের ফটোগ্রাফার Brandon Woelfel এবং সান ফ্রান্সিস্কোর ফটোগ্রাফার Cristian Lanza এর কাজ রনির ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে অনেক বড় অনুপ্রেরণার ক্ষেত্র বলেও জানান তিনি।

মেহেদী হাসান রনি ছবি ৬

ছবি তোলার জন্য বর্তমানে রনি ব্যবহার করছেন- নিকন ডি৭৫০, ট্যামরন ৭০-২০০মি.মি. এফ২.৮ মার্ক টু, নিকন ৫০মি.মি. এফ১.৪, রকিনন ১৪ মি.মি. এফ ২.৮ এবং ডিজেআই ম্যাভিক প্রো। এই সকল গ্যাজেট তার এস্ট্রোফটোগ্রাফি এবং এরিয়াল ফটোগ্রাফির জন্যে প্রয়োজন হয়ে থাকে। ছবি তোলা নিয়ে ভবিষ্যতে কী করার ইচ্ছা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রবল ইচ্ছা রয়েছে ভবিষ্যতে একজন ট্রাভেল ফটোগ্রাফার হবেন। এক্ষেত্রে পরিবারের পক্ষ থেকে সায় পাওয়াটা কষ্টকর হলেও নিজের ভালো লাগাকে সাথে নিয়েই পথ চলতে চান তিনি সবসময়।

প্রিয় লাইফ/ আর বি