কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মংডুর রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। ছবিটি ২১ সেপ্টেম্বর স্যাটেলাইট থেকে তোলা হয়েছে। সংগৃহীত ছবি

রাখাইনে শুধু রোহিঙ্গা গ্রামগুলোই পোড়ানো হয়েছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৪৭
আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৪৭

(প্রিয়.কম) যদিও আগেই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাখাইনে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী জাতিগত নিধনে নেমেছে। তবে দেশটির সরকার সে অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসেছে। তবে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা রাখইনের সাম্প্রতিক ছবি বিশ্লেষণ করে হিউম্যান রাউটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলছে, বেছে বেছে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতেই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে আগুন দেওয়া হয়েছে একং তা পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। আর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা সে ছবিও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।  

চলতি বছরের ২৫ অগাস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় মদদে দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা-সংবদ্ধ ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগসহ ভয়ংকর নির্যাতনের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে ইতোমধ্যে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গা সংকট গোটা বিশ্বে এ পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বেড়ে ওঠা শরণার্থী সংকট।

রাখাইন রাজ্যে ভয়ংকর ওই সেনা নির্যাতন ও প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে জাতিসংঘ ইতোমধ্যে ‘পাঠ্য বইয়ে জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী দাবি করছে, তাদের লক্ষ্য বেসামরিক জনগণ নয়, আরাকান সালভেশন আর্মি (রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে বিদ্রোহী সংগঠন)।

এদিকে হিউম্যান রাউটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা রাখইনের সাম্প্রতিক ছবি বিশ্লেষণ করে বলছে, সহিসংতা শুরু পর উত্তর রাখাইনে আগুনে সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে পুড়ে গেছে অন্তত ২৮৮টি গ্রাম। ছবিতে আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে, কেবল রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতেই আগুন দেওয়া হয়েছে একং তা পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু রাখাইনের স্থানীয় বৌদ্ধ গ্রামগুলোতে আগুন দেওয়া হয়নি বরং তা অক্ষত রয়েছে।

সূত্র: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ২৫ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর।

সূত্র: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ২৫ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর।

ছবি বিশ্লেষণ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ২৫ অগাস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মংডুর শহরতলীতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বরের পর। অথচ দেশটির নেত্রী অং সান সুচি বলেছিলেন, ‘রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শেষ হয়ে গেছে ৫ সেপ্টেম্বরের পর সেখানে আর কোনো অভিযান চালানো হয়নি’। কিন্তু স্যাটেলাইটের ছবি সুচির বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে।

এদিকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ছয় লাখ শরণার্থীরা কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন শিবিরে বাস করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শিবির কুতুপালং-এর পরিধি অাগস্ট মাসের পর নতুন করে বাড়ানো হলেও আশপাশে অস্থায়ী শিবিরগুলোতে এখন প্রায় তিন লাখ ১২ হাজার শরণার্থী রয়ে গেছে।

বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা জনস্রোত। ইউএনএইচসিআর-এর ড্রোন থেকে ১৬ অক্টোবর সোমবার তোলা ছবি।

বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা জনস্রোত। ইউএনএইচসিআর-এর ড্রোন থেকে ১৬ অক্টোবর সোমবার তোলা ছবি। 

সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে যে ১৫ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে ঢুকেছেন তারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সেখানে কর্মরত এনজিওসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে জানিয়েছেন, ‘কৌশলগত ভাবে রাখাইনে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালানো বন্ধ করেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু এখনও তাদের ওপর ধর্ষণ ও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে।’

তারা আরও জানান, ‘সেনা নির্যাতনের মাধ্যেমে রুজি-রোজগারের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ছাড়া তাদের আর কোনো গতি নেই’।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এদিকে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, ১৫ অক্টোবর থেকে তা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে কিছু এরিয়াল ফুটেজ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উখিয়ার পালংখালির কাছে নাফ নদী পার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। 

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা। ছবি: ফোকাস বাংলা

রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ছবি: ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ ভাগই হলো নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এর মধ্যে ১১শ’র বেশি রোহিঙ্গা শিশু পরিবার ছাড়া অচেনাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর এসব শিশুর চোখের সামনেই তাদের বাবা-মাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা, মা-বোনদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট প্রমাণ হাজির করেছে। অ্যামনেস্টি বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি-ভিডিও এবং সব ধরনের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, ‘রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ।’

প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা যাদের ৬০ ভাগই নারী ও শিশু। ফাইল ছবি

প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা; যাদের ৬০ ভাগই নারী ও শিশু। ফাইল ছবি

অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২৮৮টি রোহিঙ্গা অধুষ্যিত গ্রাম। সংস্থাটি আরও জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। 

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ হিসেবে ‘বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বিশ্ব সম্মেলের ডাক দিয়েছে জাতিসংঘ’। আগামী ২৩ অক্টোবর জেনেভায় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রিয় সংবাদ/শান্ত