কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

‘সার্বজনীন প্রাথমিক আয়’ ধারণাকে উপজীব্য করে করা গবেষণায় ঘরে বসেই হাজার হাজার ডলার পাবে মার্কিন নাগরিকরা। ছবি: সংগৃহীত।

বিনা পরিশ্রমে হাজার হাজার ডলার পাবেন মার্কিনিরা

আরিফ আরমান বাদল
সহ-সম্পাদক, বিজনেস এন্ড টেক
প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৩৯
আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৩৯

(প্রিয়.কম) মার্কিন নাগরিকরা এবার কোন রকম পরিশ্রম ছাড়াই ঘরে বসে হাজার হাজার ডলার পাবেন। শুনে চমকে যেতে পারেন যে কেউ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির বৃহত্তম এবং নামকরা স্টার্টআপ অ্যাকসিলারেটর ‘ওয়াইসি’ (ওয়াই কম্বিনেটর) নতুন এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনে নির্ধারিত সংখ্যক মার্কিন নাগরিককে পাঁচ বছর ধরে প্রতি মাসে এক হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করবে স্টার্টআপ অ্যাকসিলারেটরটি। সম্প্রতি ওয়াইসির গবেষক এলিজাবেথ রোডস এক ব্লগ পোস্টে গবেষণা সম্পর্কিত নতুন সব তথ্য এবং প্রস্তাব আপলোড করেছেন। 

ওয়াই কম্বিনেটর যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রদেশ থেকে ৩ হাজার মার্কিন নাগরিককে নির্বাচিত করবে। পরবর্তীতে এই ৩ হাজার মানুষকে দুই দলে ভাগ করা হবে। প্রথম দলে ১ হাজার জন থাকবে। এই ১ হাজার মানুষকে একটানা ৫ বছর কোনো কাজ ছাড়াই প্রতি মাসে ১ হাজার মার্কিন ডলার দেবে ওয়াইসি। আর দ্বিতীয় দলে থাকা ২ হাজার নাগরিক প্রতি মাসে ৫০ মার্কিন ডলার করে পাবেন। ওই প্রকল্পের আওতাধীন গবেষণায় এই দ্বিতীয় দলকে বলা হচ্ছে কন্ট্রোল গ্রুপ। 

মাসিক এতোগুলো টাকা দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য। আর তা হলো অর্থ গ্রহণকারী সকল নাগরিককে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রশ্নটি হলো: ‘মানুষজন যখন বিনা পরিশ্রম বা কাজ ছাড়া টাকা পায় তখন তাদের জীবন যাত্রার মানে এবং কাজ করার অনুপ্রেরণায় কী পরিবর্তন আসে?’

ওয়াইসি প্রেসিডেন্ট স্যাম অ্যাল্টম্যান প্রতিষ্ঠানটির ব্লগে ২০১৬ সালের মে মাসে এক ঘোষণায় জানান, ‘সার্বজনীন প্রাথমিক আয়’ নামক একটি গবেষণায় এ ধরণের প্রশ্নোত্তরে আগ্রহী তিনি। ‘সার্বজনীন প্রাথমিক আয়’ এমন এক ধরণের সম্পদ বন্টন প্রক্রিয়া যেখানে দেশের প্রত্যেক নাগরিক বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ ভর্তুকী পাবে।

অ্যাল্টম্যানের সাথে প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত অনেকেই এই ‘সার্বজনীন প্রাথমিক আয়ের’ ধারণায় সহমত পোষণ করেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় ভবিষ্যতে বেকারত্ব বেড়ে যাবে। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে পুরো বিশ্ব অভ্যস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। আইনজীবীরা বলছেন, যারা চাকরি হারাবেন তাদের জন্য এই ‘সার্বজনীন প্রাথমিক আয়’ শাপে বর হয়ে আসবে। অর্থাৎ, বাড়িতে বসেই তারা ওই কাজের জন্য বিনা পরিশ্রমে টাকা পাবেন।

স্যাম অ্যাল্টম্যান

ওয়াইসি প্রেসিডেন্ট স্যাম অ্যাল্টম্যান। ছবি: গ্যেটে ইমেজেস 

এই ধারণায় সমর্থক ব্যক্তিরা বলছেন, সার্বজনীন প্রাথমিক আয় বাস্তবায়ন হলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্রতা দূর হবে এবং সামষ্টিকভাবে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হবে। অন্যদিকে এই ধারণা নিয়ে বিতর্কও আছে। অনেকে বলছেন মানুষ ঘরে বসে বিনা পারিশ্রমিকে টাকা পেলে কাজের স্পৃহা হারাবে। তবে এই মন্তব্যের পেছনে কোন দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা করা হয়নি। সেক্ষেত্রে ওয়াইসি’র এই গবেষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বড় গবেষণা হতে যাচ্ছে। এই গবেষণা এমন কিছু তথ্য দেবে যা উন্নত বিশ্বে আগে কখনো দেখেনি। সম্প্রতি ওয়াইসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওকল্যান্ড শহরে প্রাথমিকভাবে এ গবেষণা শেষ করেছে। এই গবেষণায় কিছু মানুষকে মাসিক ১-২ হাজার মার্কিন ডলার বিনা পরিশ্রমে দিয়েছিল ওয়াইসি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের গবেষণা করা সম্ভব কিনা তা দেখার জন্যই পরীক্ষাটি করে ওয়াইসি। 

প্রতিষ্ঠানটি এর ব্লগে জানায়, নতুন এই গবেষণাটি ‘সার্বজনীন প্রাথমিক আয়ের’ কার্যকারিতা হিসাব করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করবে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থ ও সময়ের ব্যবহার, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সূচক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং শিশুদের উপর এর প্রভাব দেখা হবে। ওয়াইসি ২০১৭ সালের শেষ পর্যন্ত ১০০ জন ব্যক্তিকে নজরে রাখবে। দেখা হবে, বিনা পরিশ্রমে টাকা পেয়েও তারা কাজে উৎসাহী এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড পালন করে কিনা। ‘সার্বজনীন প্রাথমিক আয়’ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা এই ফলাফল বলে দেবে। 

সার্বজনীন প্রাথমিক আয়ের এই ধারণাটি যাতে মানুষের বিদ্যমান সামাজিক সুবিধাকে খর্ব না করে সেজন্য স্থানীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে ওয়াইসি। ওয়াইসি তাদের ব্লগে লেখে, ‘গবেষণার শেষে মানুষের ভিত্তি আয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং কর্মক্ষেত্রের ভবিষ্যত কেমন হবে সে সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।’

গত বছর থেকে পূর্ব আফ্রিকাতে ‘সার্বজনীন প্রাথমিক আয়’ নিয়ে এ ধরণের একটি গবেষণা চালাচ্ছে দাতব্য সংগঠন ‘গিভ ডাইরেক্টলি। এ বছরের শেষের দিকে সংগঠনটি আরও বড় পরিসরে এই গবেষণা করবে। যেখানে ১২ বছর ধরে ৬ হাজার মানুষকে ভিত্তিমূলক আয়ের সমপরিমাণ টাকা দেওয়া হবে।   

অ্যাল্টম্যান ‘সার্বজনীন প্রাথমিক আয়’ নিয়ে আশাবাদী। তবে এটি মার্কিনদের অলস করে দেবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার