কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও কক্সবাজারের মাঝে পথের ধারে বসে আছেন পুরানো রোহিঙ্গারা। ছবি: প্রিয়.কম

পরিস্থিতি জটিল করছে পুরানো রোহিঙ্গারা

সামিউল ইসলাম শোভন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ২১:১৬
আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ২১:১৬

(প্রিয়.কম, কুতুপালং ও বালুখালী থেকে ফিরে) কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটারের মতো। কিন্তু এই দূরত্ব যখন ১০ কিলোমিটারে নেমে আসে, তখন চোখে পড়ে অন্যরকম দৃশ্য। রাস্তার দুধারে একটু পরপর বসে আছেন ৩ থেকে ৫ জন নারী ও শিশুর জটলা। অসহায় চোখ নিয়ে ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন পথচারীদের দিকে। এদের প্রতি মানবিক হতে মন চাইবে। কিন্তু এরা সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ‘সমস্যা’ তৈরি করছে। পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে এসব বাংলাদেশে বহুদিন ধরে আশ্রয়ে থাকা পুরানো রোহিঙ্গারা।   

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান শুরু করার পর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। এত মানুষকে জায়গা দিতে কুতুপালং, বালুখালী ও টেকনাফে খোলা হয়েছে শরণার্থী ক্যাম্প। তাদের জন্যে বিদেশি ত্রাণের পাশাপাশি দেশীয় সংগঠনগুলোও নিয়মিতভাবে ত্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু নতুন রোহিঙ্গাদের যাবতীয় সুযোগ সুবিধায় ভাগ বসাতে চাচ্ছে পুরানো রোহিঙ্গারা।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পথের ধারে বসে যেসব নারী ভিক্ষা করছেন তারা সম্প্রতি রাখাইন ছেড়ে আসা রোহিঙ্গা নয়, বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে অবস্থান করা পুরানো রোহিঙ্গা। ভিক্ষা করতে যারা বসছেন তাদের প্রায় সবাই নারী ও শিশু।

এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধদের অত্যাচারে সর্বস্ব হারিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যখন খেয়ে না খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন, তখন সেখানেও ভাগ বসানোর চেষ্টা করছে পুরানো রোহিঙ্গারা।

কুতুপালং ক্যাম্পের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্য সৈনিক মোহাম্মদ হাবিব প্রিয়.কম-কে বললেন, ‘রাস্তার ধারে যারা বসে আছে, তারা সবচেয়ে খারাপ। আমরা খুব করে চেষ্টা করছি সামলানোর। কিন্তু খুব চালাক এসব নারীরা। আসলে এরা পুরানো রোহিঙ্গা। এরা খুবই সমস্যা করছে। নতুনদের সঙ্গে মিশে গিয়ে অপরাধ ঘটাচ্ছে, উস্কানিও দিচ্ছে। রাস্তার ধারে নতুন রোহিঙ্গারা নেই বললেই চলে।’

ত্রাণ নিতে আসা রোহিঙ্গাদের লাইন। ছবি: প্রিয়.কম

সৈনিক হাবিব রাস্তার ধারে এসব জটলা দেখে ভিক্ষা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি জানান, এদেরকে ভিক্ষা দিবেন না কেউ। এরা অনেক আগে থেকেই কোনো না কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

একই অভিযোগ করেন বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা হাসিনা বানু। তিনি উখিয়া বালুখালির স্থানীয় হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝখানে পড়েছে তার বাড়ি। পুরানো রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এরা চুরি-ডাকাতি করে। এখন তো নতুন ক্যাম্প হয়েছে। কিন্তু আগে থেকেই এই রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এখন নতুনদের সঙ্গে মিলে আরও সমস্যা তৈরি করছে!’

স্থানীয় পুলিশরা পুরানো রোহিঙ্গা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিনিয়তই তাদের কাছে অভিযোগ আছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে। পুলিশ সদস্য আফতাব উদ্দিন বললেন, ‘এরা বাসা থেকে চুরি করে নিয়ে যায়। দোষ পড়ে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের ওপর। কিন্তু এত লোকের মধ্যে বুঝব কি করে পুরানোকে। খুবই ঝামেলার মধ্যে আছি ভাই। সবই এক, দেখে কিছুই বোঝা যায় না!’

বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ছবি: প্রিয়.কম

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা নতুন কিছু নয়। মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের করাল ঘাতে ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯১-৯২, ২০১২ অর্থাৎ কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা পুশ ইন করছে মায়ানমার সরকার। ধর্মীয়ভাবে রাখাইন রাজ্যের এই জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশ মুসলমান হওয়ায় এবং সীমানা নিকটে হওয়ায় বাংলাদেশেই পালিয়ে আসছে তারা।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এদিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলার সময় এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মুখপাত্র।      

অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইচ ওয়াচের। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২১৪টি রোহিঙ্গা অধুষ্যিত গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে উল্লেখ করে দেশটির ওপর কিছু ক্ষেত্রে ও সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

প্রিয় সংবাদ/শান্ত