কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি কৃতজ্ঞতা: নাদিয়া নওরিন

নোটবোর্ড: ইচ্ছের কোন মাত্রা নেই যেখানে!

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০১৭, ২০:৩৩
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭, ২০:৩৩

(প্রিয়.কম) কিছু কিছু উদ্যোক্তা একেবারে আঁটঘাঁট বেঁধে, নিখুঁত পরিকল্পনার ছক কেটে শুরু করেন একটি ব্যবসা। তার পেছনে থাকে মুনাফা অথবা অন্য কোনো লক্ষ্য পূরণের ইচ্ছা। কিন্তু তরুণ উদ্যোক্তা নাদিয়া নওরিন জানান, ‘নোটবোর্ড’ এর পথচলা শুরু হয় না পাওয়ার কষ্ট থেকে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে পড়ুয়া নাদিয়া নোটবোর্ড পরিচালনা করছেন তার পরিবারের সাহায্যে।

নোটবুকের প্রতি অন্যরকম একটি ভালোবাসা ছিল তার। ঢাকার সব স্টেশনারি শপ কোনটা কোথায়, কী পাওয়া যায় সবই মোটামুটি মুখস্থ করে ফেলেন তিনি। অনেকদিন ধরেই খুঁজছিলেন হ্যারি পটার থিমের নোটবুক, কিন্তু পাচ্ছিলেন না কোথাও। এমন অবস্থায় আমি বা আপনি হলে কী হত? হয় আমরা হাল ছেড়ে ভাবতাম পাচ্ছি না যখন দরকার নেই, আঙ্গুর ফল টক! কিন্তু নাদিয়া করলেন উল্টো একটা কাজ। ভাবলেন, পছন্দের জিনিসটা নিজের জন্য নিজেই তৈরি করে ফেললে কেমন হয়? 

নোটবই

যেমন ভাবা তেমনই কাজ। কিছু নোটবই তৈরি করে ফেলেন তিনি। এরপর নিজের এক ছাত্রীকে দিয়ে হলিক্রস কলেজে পাঠিয়ে দেন, এগুলো দেখে অন্যদের প্রতিক্রিয়া কেমন হয় তা জানার জন্য। সারাদিন অপেক্ষা করে থাকেন মনে উৎকণ্ঠা নিয়ে। যদিও এত চিন্তিত হবার কোন কারণ ছিল না, সন্ধ্যা নাগাদ জানতে পারলেন দারুণ সেই নোটবই সবগুলো বিক্রি হয়ে গেলে এই কম সময়ের মাঝেই। দিনটা ছিল ১৯ অক্টোবর, ২০১৬ সাল। সেদিনই নোটবোর্ড এর জন্মদিন বলা যায়। অনলাইন স্টেশনারি শপ হিসেবে এতদিনে জমজমাট হয়ে উঠেছে নোটবোর্ড।

নোটবই

নোটবোর্ড (Notebored) এর নামটা একটু অন্যরকম লাগতে পারে। মূলত কাস্টমারের একঘেয়েমি বা বোর লাগা মনটাকে সতেজ করে তোলাটাই নোটবোর্ড এর লক্ষ্য। আপনি নিজেই ভাবুন তো, গতানুগতিক একটা নোটবই দেখলে একটা বাচ্চার পড়াশোনা করার উৎসাহ কতটুকু থাকবে? সেখানে একটা ঝলমলে, নকশা করা নোটবই দিয়ে দেখুন, খেলার ছলেই পড়তে বসে যাবে সে। বড়দের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা আলাদা কিছু নয়। নিজের পছন্দের থিমের একটা নোটবই নিয়ে বসে কাজ করতে ভালো লাগবে যে কারো। এই কারণেই নোটবোর্ডের স্লোগান হলো, ‘Be alive with your favourites.’

নোটবই

কাজটাকে ঠিক ব্যবসা হিসেবে ভাবেন না নাদিয়া। এমনকি তিনি এটাও বলেন, ‘ব্যবসা করছি ভেবে করলে হয়ত পারতাম না, ভাললাগা থেকে করি পুরোটাই।‘ নোটবুকের ডিজাইন করা থেকে শুরু করে অর্ডার নেওয়া, ডেলিভারি বেশিরভাগ কাজটাই নিজে থেকে করতেন। প্রতিষ্ঠার এক বছরের মাঝে অনেক বেড়ে গেছে তাদের চাহিদা। ফলে কিছুটা কাজ ডেলিভারি সার্ভিসের হাতে ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু বাকি কাজটায় জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা। এই একবছরের মাঝে তাদের ওপরে গ্রাহকের ভরসা, ভালোবাসা সবই তৈরি হয়েছে। জনপ্রিয়তার বাড়ছে সময়ের সাথে। 

ড্রিমক্যাচার

নোটবোর্ডের আরেকটি দিক হচ্ছে, নোটবই তৈরির পুরো কাজটাই স্থানীয় কর্মসংস্থানের মাধ্যমে করা হয়। তারা চান, বাংলাদেশেই যেন স্টেশনারিকে নতুন এবং ইন্টারেস্টিং করে তোলা যায়। ভবিষ্যতে কী করতে চান, এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছের কোন মাত্রা নেই এখন! নোটবুক দিয়ে শুরু করে এখন আমরা হ্যান্ডবুক, বুকমার্ক, পোস্টকার্ড, এনভেলপ, কলম, ড্রিমক্যাচার, অনেককিছুই যোগ করছি।‘ 

ব্রোচ

হ্যাঁ, শুধু নোটবই নয়, একঘেয়েমিকে একেবারে ছুটি দেবার জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রোডাক্ট দিয়ে টইটুম্বুর নোটবোর্ডের ঝুলি। সাধারণত অনলাইন শপগুলোতে খুঁজলে দেখা যায় একই ধরণের জিনিস পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিছু পেজ বা গ্রুপে। কিন্তু নোটবোর্ড এমন কিছু প্রোডাক্ট রাখে যা শুধু এখানেই খুঁজে পাবেন আপনি। 

নোটবই

গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলা নোটবোর্ড এখন অনেকটাই শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে। এর পেছনে হয়তোবা তাদের আন্তরিকতারই হাত আছে। নাদিয়া জানান, অনেক সময়েই ভুল হতে পারে। কিন্তু ভুলটা তারা সাথে সাথেই স্বীকার করে নেন। সবার উপরে কাস্টমারকে প্রাধান্য দেবার ব্যাপারটা বজায় রাখেন তারা। কাস্টমার কী বলছেন, কী চাইছেন তা বুঝেই কাজ করেন তারা। সে কারণেই হয়তো ছোট্ট নোটবোর্ড এতদুর এসেছে।