কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছবি: প্রিয়.কম

‘শুধু মুশফিক নয়, সারা দুনিয়ার টেস্ট ক্রিকেটারদের জন্য এটা লজ্জার’

শান্ত মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৩৬
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৩৬

(প্রিয়.কম) বেশিদিন আগের কথা নয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে প্রিয়.কমের সাথে কথা বলছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ওই কন্ডিশনে টেস্ট ফরম্যাটে লড়াই করতে নেটে এক থেকে দুই হাজার বল ছেড়ে দেওয়ার অনুশীলন করে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন সাবেক এই বাংলাদেশ অধিনায়ক। আফসোস, হয়তো বাংলাদেশের কোনও ব্যাটসম্যানই সেটা করে যাননি। ফলটাও হাতেনাতে মিলেছে। যদিও এসব আলোচনায় নেই। 

সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্ব। আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে টস জিতেও ফিল্ডিং নেয়ার ব্যাপারটি। প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের সঙ্গে অধিনায়ক মুশফিকের দূরত্বের ব্যাপারটিও ক্রিকেটীয় আলোচনাকে পেছনে ফেলেছে। আমিনুল ইসলাম এটাই মনে করিয়ে দিলেন, মূল বিষয় যে ক্রিকেট সেটা নিয়েই আলোচনা নেই। মনে করিয়ে দিলেন একজন কোচকে কখনই এতটা ক্ষমতা দেওয়া উচিত নয়। 

মুশফিকের অধিনায়কত্ব, কোচের কাজের পরিধি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান, এতদিন মুশফিকের চুপ করে থাকাসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকেই ফোনে প্রিয়.কমের সাথে কথা বললেন বর্তমানে আইসিসিতে ক্রিকেট ডেভেলপম্যান্ট অফিসার হিসেবে কাজ করা সাবেক এই বাংলাদেশ ক্রিকেটার। প্রিয়.কমের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল-  

- দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলল বাংলাদেশ। নিশ্চয়ই দেখেছেন। ঠিক কী মনে হল, সমস্যা বোলিং-ব্যাটিংয়ে নাকি অন্য জায়গায়?

আমিনুল ইসলাম বুলবুল: আমার কাছে মনেহয় এই দুই টেস্ট নিয়ে আমরা আলোচনা করছি এদিক ওদিকে। প্রথম টেস্ট থেকেই ওসব আলোচনা। সাকিব দলে নেই, আমরা কেমন করব, কী করছি, টেস্ট সিরিজ জিততে পারব না হারব এমন অনেক কিছু আলোচনা করছি। আরেকটা আলোচনা যে মুশফিককে অধিনায়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। এছাড়া তামিমের ইনজুরি একটা বড় ব্যাপার ছিল। এসব ধরণের আলোচনা হয়েছে। মূল জায়গা যে ক্রিকেট, আমরা কিন্তু সেই ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করছি না। অবাক করার মতো ব্যাপার।

- অধিনায়ক ও কোচের দ্বন্দ্ব ওপেন সিক্রেট। দুই টেস্টে সেটারই প্রভাব পড়ল কি না?

বুলবুল: প্রধান সমস্যাটা কিন্তু ক্রিকেটে। একটা দলের মানসিক অবস্থা কখনও ভাল থাকে কখনও ভাল থাকে না। আমরা যখন অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডকে দেশের মাটিতে হারালাম আবার শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাটিতে হারালাম ওসব কিন্তু সব ভাল সময়। কিন্তু আমরা যখন হারি এই সময়গুলোতেও আমরা তো কিছু শিখি। কিন্তু আমরা আসলে টেস্ট ম্যাচ খেলতে কতটা শিখেছি সেটা দেখা যাচ্ছে এখন। আমরা সব সময় ভাল খেলি না। আপনি প্রথমেই ভুল করে রেখেছেন, সেটা হচ্ছে দলের মধ্যে অনেক নির্বাচক বানিয়ে রেখেছেন। কিছু হলে আমরা বোর্ডকে দোষ দিই, সরকারকে দোষ দিই। কিন্তু ক্রিকেট খেলে ক্রিকেট খেলোয়াড়রা। আর ক্রিকেটার খেলায় টিম ম্যানেজম্যান্ট। এর বাইরে কিন্তু যাওয়া উচিত না। এর বাইরে যদি কেউ ইনটারাপ্ট করে আমি সেটাকে বোকামি বলব। কোচকে সারা পৃথিবীর কোথাও এত বড় ক্ষমতা দেওয়া হয় না। আমরা সেটা দিয়ে রেখেছি। দেখেন আমরা কিন্তু রক্তে-মাংশে গড়া মানুষ। আমরা ঢাকা এবং চট্টগ্রামে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা গেলাম। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথিবীর সবচেয়ে লো উইকেট। এমন একটা উইকেট থেকে একটা দেশে খেলতে গেলাম যেখানকার উইকেট সম্পূর্ণ অন্যরকম। যদিও আমরা আসল অভিজ্ঞতা পাইনি। আমি বলব মানসিক যে ব্যাপারগুলো ছিল সেসব নিয়ে আমরা কোনও প্রস্তুতিই নিইনি। এটা ঠিক যে দুটি সিরিজের মাঠে আমাদের ব্রেক ছিল না। কিন্তু যে সময়টা ছিল সেই সময়ে আমরা ১৪০ কিলোমিটার বেগের বল খেলতে পেরেছি? কতগুলো বল ছাড়তে শিখেছি? আমি মুশফিককে ফোন করেছিলাম। যদিও পাইনি। বলতে চেয়েছিলাম যাওয়ার আগে অন্তত এক বা দুই হাজার বল ছেড়ে দেওয়ার অনুশীলন করে যেতে। সৌম্যর আউট, মুশফিকের মাথায় বল লাগা, মুমিনুলের স্ট্রাগল করা আর সাব্বির তো ঠিকমতো বলই দেখেনি। এসব কিন্তু অনুশীলন ছাড়া হবে না। লো উইকেটে ঘরের মাটিতে আপনি যে কোনও বোলারকে খেলে ফেলবেন। কিন্তু এই ধরনের উইকেটে তো আমাদের প্রস্তুতিই ছিল না। আবার আমাদের দলটাকে একটু ওভার কনফিডেন্টও মনে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার আসল বোলারদের একটাও খেলেনি। মরকেলের ছোট ছোট দুটি স্পেল ছাড়া তেমন কিছু ছিল না। ফিল্যান্ডার বা ডেল স্টেইন দলে নেই। তাদের দ্বিতীয় সারির বোলিংয়ের বিপক্ষেই আমরা দাঁড়াতে পারিনি। আমাদের প্রস্তুতি ছিলই না। আবারও বলছি, প্রধান যে সমস্যা সেটা ক্রিকেটীয়। এটা কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের ফাইন্যান্স বা মার্কেটিং বিভাগ ধরতে পারবে না। এটা করতে হবে খোদ কোচকে। কোচের ওপর সম্পূর্ণ দায়িত্ব দলটার স্কিলের উন্নতি করানো। সেই স্কিলে কে কীভাবে খেলবে সেটা দেখা পুরোপুরি তার দায়িত্ব। সে সেই দায়িত্বে সম্পূর্ণরুপে ফেইল করেছে। দলের যে মানসিক ব্যাপার থাকে সেটা একেবারেই উজ্জিবীত করতে পারেনি সে। আমি বলব মাশরাফি একজন ভদ্রলোক বলে তাকে টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল এবং সে কিছু বলেনি। সেখানেও কিন্তু সমস্যা ছিল। এসব কোচের কাজ নয়।    

- একজন কোচের হাত আসলে কতটা লম্বা হতে দেওয়া উচিত? একজনের হাতে বাংলাদেশের ক্রিকেট জিম্মি হয়ে গেছে কি না?

বুলবুল: কোচের হাত বড় হচ্ছে না, কোচের হাত বড় করে দেওয়া হচ্ছে। কোচের কাজ হচ্ছে দলের শৃংখলা থেকে শুরু করে অনেক বিষয়ে পথ দেখানো। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের কিন্তু স্কিল ডেভেলপম্যান্ট ততোটা করাতে পারবেন না। তার প্রধান কাজ হচ্ছে দলের মধ্যে সলিড একটা স্পিরিট তৈরি করা, শৃংখলা তৈরি করা। দলের যার যার মধ্যে যে স্পিরিট আছে শৃংখলা অনুযায়ী তা ব্যবহার করা। মনে করেন আপনার কাছে কামান, রকেট লান্সার, ছুরি সবই আছে। আপনি মশা মারতে অবশ্যই কামান ব্যবহার করবেন না। আপনার যে স্কিল আছে সেটা কোথায় কীভাবে ব্যবহার করবেন সেটা পেসার, স্পিনার বা ব্যাটসম্যান যেটাই হোক কোচের দায়িত্ব সঠিকভাবে ব্যবহার করা। কোচের কাজ হচ্ছে যখন দলের কেউ খারাপ খেলে তাকে মোটিভেট করা। মুমিনুলের অবস্থা দেখেন। সে যেভাবে দলে আছে তার কাছ থেকে কী আশা করতে পারেন। কোচের কাজ কিন্তু এসব, তার একটা প্রটোকল থাকা উচিত। কোচ থাকবে ক্রিকেট অপারেশন্সের দায়িত্বে। কিন্তু দেখি সরাসরি সে উপরের সবার সাথে যোগাযোগ করে। এটা ঠিক না তো। হয়তো আমরা ভাল খেলার জন্য এসব বিষয়ে পার পেয়ে গেছি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটা কখনই সম্ভব না।   

- একজন টেস্ট অধিনায়ক কোথায় ফিল্ডিং করবেন সেটা ঠিক করে দেওয়াটা দেশের ক্রিকেটের সাথে মশকরা করা কি না? এটা কতটা লজ্জার?

বুলবুল: এটা শুধু মুশফিকের জন্য নয়, সারা দুনিয়ায় যারা টেস্ট খেলোয়াড় আছে তাদের জন্য লজ্জার। ক্রিকেট একমাত্র খেলা যেখানে শতভাগ ডমিনেট করে অধিনায়ক। ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল বা যে খেলাই হোক না কেন কোথাও কিন্তু অধিনায়কের ভূমিকা ততটা থাকে না যতটা ক্রিকেট অধিনায়কের থাকে। ক্রিকেট অধিনায়ককে এমন একটি জায়গায় দাঁড়াতে হয় যতটা সম্ভব মাঠ, নিজের খেলোয়াড়, প্রতিপক্ষকে দেখা যায়। যখন একজন অধিনায়ক সীমানার দিকে চলে যায় আর তাকে যে পাঠায় তার ক্রিকেটীয় জ্ঞান নিয়ে আমার প্রশ্ন। অধিনায়ককে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত যে সে কিছুটা হলেও বাইরে নিয়ে এসেছে। এটা আমাদের ভালর জন্য। হয়তো ১০ ভাগ বাইরে নিয়ে এসেছে। আরও ৯০ ভাগ কী হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।    

- অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের অবস্থানটা আসলে কেমন হওয়া উচিত ছিল। আরও আগেই বিষয়গুলো নিয়ে তার প্রতিবাদ করা বা সংশ্লিষ্টদের জানানো উচিত ছিল বলে মনে করেন?

বুলবুল: আমি জানি না বোর্ডকে জানিয়েছে কি না। আমি যতদূর জানি বোর্ডের সাথে সিনিয়র খেলোয়াড়দের মিটিং হয় মাঝেমাঝে। মুশফিক যেটা করেছে সেটা অনেকের কাছে পছন্দ নাও হতে পারে, আবার পছন্দ হতেও পারে। তবে সে ঠিক আছে। কারণ সে যার তত্ত্বাবধানে খেলে, সে ভাল কাজ করে কি না সেটা সে বলতে পারবে। সে মানুষের সামনে আনতে পেরেছে যে একজন অধিনায়কের সাথে কী ঘটেছে। আমরা আশা করব ভবিষ্যতে শুধু বাংলাদেশ নয়, কোনও দলের অধিনায়কের সাথেই আর এমন হবে না।    

- কোচের নির্দিষ্ট কিছু পছন্দের ক্রিকেটার আছেন দলে। যাদেরকে বিশেষ বিবেচনায় রাখেন তিনি। এটাও অনেকের জানা? একটা দলে এমন বিষয় থাকা হুমকির কি না?

বুলবুল: যখন একজন কোচ তার কোচিং শিক্ষা শেষ করে তখন তার প্রথম কাজই থাকে সবাইকে সমান চোখে দেখা। সেটা যদি সে না করে থাকে তাহলে সে তার নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে। প্রতিটা খেলোয়াড়কে সমান সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু আমরা দেখি কোচ নেট অনুশীলন দেখে খেলোয়াড় বাছাই করে। সে যতদিন ধরে ক্রিকেট বোর্ডে কাজ করছে আমি দেখিনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটের বাইরে সে আমাদের ক্রিকেটারদের স্কিল ডেভেলপম্যান্ট নিয়ে কাজ করেছে। সে বাংলাদেশে থেকে একজনকে নিয়ে স্কিল ডেভেলপম্যান্টের কাজ করেছে সেটা আমি কখনও দেখিনি। যারা তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, যারা বেতন দেন তারাই আসলে বলতে পারবেন সে কতদিন কাজ করেছেন। নেটে ভাল করলে কাউকে নিয়ে নিচ্ছি এটা পুরোপুরি ভুল। আমরা বেশ কয়েকজনকে এভাবে নিয়েছি। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে ম্যাচ। ম্যাচে সে কী করছে সেটা হচ্ছে ব্যাপার। ক্রিকেট একমাত্র খেলা যেখানে অনুশীলন হয় নেটে এবং ম্যাচ খেলে মাঠে। হকি, ফুটবলে কিন্তু এসব হয় না। কোচের দায়িত্ব খেলা দেখে বাছাই করা। ঘরোয়া ক্রিকেটটাও দেখা অনেক জরুরি।  

- এসব বিষয় দেশের ক্রিকেটকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে কি না। কিংবা ক্ষতি হচ্ছে কিনা?

বুলবুল: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইন শা আল্লাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বাংলাদেশের প্রতিটা লোক কিন্তু ক্রিকেট ফলো করে। শতশত, হাজার হাজার ক্রিকেটার আছে যারা বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমাদের কিন্তু ক্রিকেটার তৈরি করতে হয় না। অটোমেটিক তৈরি হয়ে আসে। ক্রিকেটের ক্ষতি যেন না হয় সে কারণে আমরা ধরে নিব এটা একটা সিরিজ। আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াব। ভাল করার সম্ভাবনা আছে। তবে এই সিরিজ থেকে আমাদের শিখতে হবে। তবে একটা প্রশ্ন এসেছে, আমাদের ক্রিকেটটা কি ঠিক গতিতে চলছে? এই জন্য বলছি আমাদের ক্রিকেট কোচ এডুকেশন, ট্যালেন্ট হান্ট, দেশের সবখানে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়া, আঞ্চলিক ক্রিকেট উন্নত করা নিয়ে কী করছি? যেসব ব্যাপার স্তম্ভ হয়ে দাঁড়াবে একদিন, সেসব কি আমরা করছি? এই কাজগুলো করলেই কিন্তু আমরা ফল পাব। এমনভাবে আমরা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিচালনা করছি যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোনও অতীত নেই। এই দুই বছরই বাংলাদেশের ক্রিকেট। যেটা পুরোপুরি ভুল।  

- কোচের কাজের পরিধি কেমন বা কতটা হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

বুলবুল: কোচের কাজের পরিধি কতুটুক সেটা আগে ঠিক করতে হবে। তিনি যেসব করে যাচ্ছেন সেটার চেয়ে তার বড় কাজ কোন কন্ডিশনে কীভাবে খেলতে হবে স্কিল বুঝে সেটার উন্নতি করা। এটা পুরোপুরি কোচের কাজ। ফ্রান্স ফুটবল দলকে দেখেন। তারা সব সময় ভাল খেলে। তারা হয়তো ওইভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না কিন্তু খারাপ খেলে না। এর কারণ হচ্ছে সব ভাল ভাল কোচ ওদের স্কুলে কাজ করে। আমরা সেটা করি না্। তাই বলছি আমাদের কোচ যেন জাতীয় দলকে নিয়েই কাজ না করে নিচের দিকে গিয়ে ট্যালেন্ট বের করে নিয়ে আসেন। সবচেয়ে বড় কাজ এই মুহূর্তে যেটা করতে হবে কোচকে নির্বাচক প্যানেল থেকে বাদ দিতে হবে। 

- টস বিতর্ক নিশ্চয়ই দেখেছেন। মুশফিক বলেছেন, টস জেতাই তার ভুল হয়ে গেছে। একজন টেস্ট অধিনায়ককে যখন এমন কথা বলতে হয় সেটা দেখতে কতটা কুৎসিত লাগে?

বুলবুল: এটা তো পরিস্কার। একেবারে পরিস্কার হয়ে গেছে যে, তার মতের বিরুদ্ধে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মতের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলে সে এ কথা কখনই বলত না। সে অধিনায়ক, তাকে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। এটা পরিস্কার যে সে যেটা করতে চেয়েছে সেটা পারেনি বলেই সকলের সামনে হতাশার কথা বলে ফেলল। এই ব্যাপারগুলোর জন্য মুশফিককেই দায়ী করতে হবে। তার শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল, না হলে ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। 

- মুশফিকের বলা কথা নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এভাবে তিনি মিডিয়ার সামনে বলতে পারেন না। এই ব্যাপারটা কীভাবে দেখছেন?

বুলবুল: তাহলে কোথায় বলবে? হয়তো বলেছে কাজ হয়নি। বাধ্য হয়েই হয়তো বলেছে। চিটাগং থেকে সে বলা শুরু করেছে। প্রতিটা মানুষেরই একটা সহ্যের সীমা আছে। 

- বিসিবির কথা যদি বলা হয়, তাদের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান নিয়ে কী বলবেন? কারণ মুশফিক-কোচের বিষয়টি বিসিবির অজানা থাকার কথা নয়।

বুলবুল: বোর্ডের কিছু কিছু বিভাগ আছে। কোন বিভাগ কোন কাজ করছে সেটা দেখার বিষয়। একেকটা বিভাগ একেক রকম কাজ করছে। কিন্তু একটা ব্যাপার আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে ক্রিকেটীয় যে ব্যাপার আছে ক্রিকেট অপারেশন্স এবং গেম ডেভেলপম্যান্ট এই জায়গাটাই আমি কী কাজ করছি। এটা হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাপার। দেখতে হবে সত্যিকার অর্থে আমরা উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে ক্রিকেটটা কতটুকু দিতে পেরেছি। বা জেলা জেলায় আমরা ইনডোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি কি না। এসব হচ্ছে প্রশ্ন। বোর্ডকে না দুষে কোন জায়গায় কাজ হচ্ছে আর কোন জায়গায় কাজ হচ্ছে সেটা বের করা দরকার। কিছু কিছু জায়গায় যেমস বোর্ড বাহবা পেতে পারে। যেমন ফ্যাইন্যান্স, তবে এটাকে আমরা কতটুকু ক্রিকেটীয় কাজে ব্যবহার করতে পারি সেটা দেখার বিষয়। এমন যেন না হয় অসুস্থ ক্রিকেটারকে ভ্যান গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর বোর্ডের কাউকে হেলিকপ্টারে করে নেওয়া হচ্ছে। এই ভারসাম্যহীনতা যেন না থাকে।