কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন ভারতের সর্বস্তরের মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

মুসলিম হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ভারতে কেন এত জনপ্রিয় হলো?

মিজানুর রহমান
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০১৭, ১০:৫০
আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭, ১০:৫০

(প্রিয়.কম) গরুর মাংস খারওয়ার ‘অপরাধে’ গত দু’বছর ধরে ভারতজুড়ে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের খরব দিনকে দিন বাড়ছে। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকজন মুসলমানকে এ ‘অপরাধে’ পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব নিয়ে মুসলমানরা যেমন আতঙ্কিত দিন পার করছে, সামাজিক স্থিতিশিলতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগে আছে সাধারণ অনেক হিন্দুরাও। সর্বশেষ ২৮ জুন মঙ্গলবার হরিয়ানার ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে একই ‘অভিযোগে’ ট্রেনের মধ্যে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এরপরই সারা ভারতে ‘নট ইন মাই নেম’ নামের একটি নাগরিক বিক্ষোভটি দানা বেঁধে উঠেছে। 

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেশটির ‘গো-মাংসভোজী’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আলিঙ্গন করার ছবি পোস্ট করেও অনেকে বলছেন, মোদির দল গো-মাংস ভক্ষণের তীব্র বিরোধী। অথচ মোদিই যখন গো-মাংসভোজী একজনকে এভাবে আলিঙ্গন করতে পারলেন, তাইলে আমাকে কেন পারবেন না?

একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবে বলা হচ্ছে ২০১৫ থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩টি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মুসলমান কোনো ব্যক্তিকে ‘গো-মাংস বহন বা ভক্ষণের অভিযোগে মারধর করা হয়েছে।’

গত তিনমাসে এ ধরনের গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬জন মুসলমানের। এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধেই আজ দিল্লিসহ ভারতের নানা জায়গাতেই সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দিয়ে ‘নট ইন মাই নেম’ নাম দিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে কলকাতাতেও।

নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গরুর মাংসকে কেন্দ্র করে অসহিষ্ণুতা ও তীব্র হিন্দুত্ববাদীদের দাপট কীভাবে বেড়েছে, দাদরির মহম্মদ আখলাখ থেকে আলওয়ারের পেহলু খানের গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ হরিয়ানসার ঘটনাটা ‘নট ইন মাই নেম’ স্লোগানকে আরও উস্কে দিয়েছে। তথ্যচিত্র পরিচালক সাবা দেওয়াই তার ফেসবুক ওয়ালে প্রথম এ প্রতিবাদের ডাকটা দিয়েছিলেন। দিল্লির যন্তর-মন্তরে উপস্থিত হয়ে নীরব প্রতিবাদে শামিল হতে বলেছিলেন বন্ধুদের। সেই প্রতিবাদই ছড়িয়ে গিয়েছে দেশ জুড়ে। কলকাতা, ইলাহাবাদ, বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, জয়পুর, হায়দরাবাদ, কোচি, লখনউ, পটনা, পুণে, চেন্নাই, প্রতিবাদ ছড়িয়েছে সর্বত্র। দিল্লির কলেজ ছাত্রী নির্ভয়ার করুণ মৃত্যুর পর দেশ জুড়ে সাধারণ নাগরিকের এমন অরাজনৈতিক প্রতিবাদ এবারই প্রথম। 

কলকাতার প্রতিবাদে উপস্থিত ছিলেন কলেজ শিক্ষক সম্রাট সেনগুপ্ত। মাসলমানদের উপর এ ধরনের হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, একটা শ্রেণির মানুষের হাতে একরকম ক্ষমতায়ন হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রচণ্ড শক্তিশালী মুসলিম বিদ্বেষ আগে থেকেই ছিল। কেন্দ্রে যে দল এখন ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের বলে বলীয়ান হয়ে ওই শ্রেণির মানুষ নিজেদের বিদ্বেষটাকে উগরে দিতে শুরু করেছে। 

মঙ্গলবারের এ প্রতিবাদ সমাবেশগুলো কোনো রাজনৈতিক অথবা অরাজনৈতিক সংগঠন আয়োজন করেনি। কোথাও কোনো সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যানার পোস্টারও ছিল না। প্রতিবাদে শামিল হওয়া মানুষের হাতে একটাই প্ল্যাকার্ড ছিল- ‘নট ইন মাই নেম’। যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ সভাগুলিতেও এক সময় একই স্লোগান দেওয়া হতো। 

প্রিয় সংবাদ/আশরাফ