কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রিয়.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমএন ইসলাম

একজন প্রোগ্রামারের জন্য গণিত ও বিজ্ঞান বেশি প্রয়োজন: এমএন ইসলাম

রাকিবুল হাসান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৪৯
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৪৯

(প্রিয়.কম) কোরিয়াভিত্তিক বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সফটওয়্যারবিষয়ক প্রতিষ্ঠান টিকন সিস্টেম।  ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এমএন ইসলাম। চলতি বছরের শুরুতে দেশে আসেন টিকনের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা এই সফটওয়্যার প্রকৌশলী। দেশে ফিরে কর্মব্যস্ততার মধ্যেও ১৬ জানুয়ারি, মঙ্গলবার প্রিয়.কমের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সেই আলাপে তিনি কথা বলেছেন সফটওয়্যার শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা, সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।

টিকনের শুরুটা কীভাবে?

২০০৪ বা ২০০৫ সালে আমি আমার কর্মজীবনে চিন্তা করতাম আমাদের কাজগুলো কোরিয়াতে নিতে পারি কি না। সেই সময় আমি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। পরবর্তীতে কোরিয়ায় আমার ক্যারিয়ার শুরুর দুই তিন বছরের মধ্যে কয়েকজন মিলে টিকন শুরু করি আমরা। 

প্রথম অবস্থায় আমি সেখানে প্রবাসী ছিলাম। আমাদের কিছু লিমিটেশন ছিল। যেমন ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে ব্যবসা করতে হতো। প্রথম দিকে দেশটিতে আমি বড় কোনো প্রজেক্টে কাজ করতে পারি নাই, আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে। 

স্মার্টফোন তখন দেশে আসতে শুরু করে। দেশে তখন আউটসোর্সিং করতাম, তবে কোনো টিম ছিল না। তখন ফ্রিল্যান্সারের পাশাপাশি প্রজেক্টের কাজও করা হতো। পরবর্তীতে ২০০৯-১০ সালে দেশে প্রথম টিকনের একটি টিম গঠন করি। আমরা আমাদের কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করি ২০১২ সালে। কোরিয়ার এডুকেশনালবিষয়ক প্রথম অ্যাপ করি আমরা। এর পর স্ট্রিমিংয়ের ওপর আমরা কাজ শুরু করি। সম্প্রতি আমরা মেশিন লার্নিং এবং বিগ ডাটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি।

টিকনে মোট কতজন কর্মী কাজ করছে?

আমাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৫ জন কর্মী কাজ করছেন। এরা সবাই তরুণ। এদের মধ্যে কোরিয়াতে আমাদের বাংলাদেশি কর্মী নেই। কারণ আমাদের টার্গেট ছিল কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা। তারা অধিকাংশই গবেষণায় পারদর্শী। এ ছাড়া দেশে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে ২০ জন তরুণ, যাদের সবাই বাংলাদেশি।

শুরুর থেকে বর্তমান, আপনার প্রতিষ্ঠানের কী অবস্থা?

বিষয়টি আলাদাভাবে বের করা সম্ভব নয়। কারণ আমরা ছোট থেকে বড় হচ্ছি। 

বলা হয়ে থাকে আমরা (বাংলাদেশি) প্রজেক্ট নির্ভর, আমাদের কোনো প্রোডাক্ট নেই। এই বিষয়ে আপনার দৃষ্টিকোণটি জানতে চাই...

এ কথা সত্য। আমরা প্রজেক্ট নির্ভর। আমাদের ব্র্যান্ডিং নেই। এ বিষয়ে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। আমরা আমাদের পরিশ্রম বিক্রি করি। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব কোনো প্রোডাক্ট নেই। আমাদের দেশে স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে, কিন্তু আমাদের নিজস্ব কোনো প্রডাক্ট নেই। আমরা ওইভাবে সার্ভিস দিতে পারছি না।

আইটি সার্ভিস বিষয়টি বৈশ্বিক। শুধু বাংলাদেশকে মাথায় রেখে আমরা যদি কোনো সার্ভিসে যাই, তা ব্যর্থ হতে পারে। ফান্ডিংয়ের একটি বিষয়ও রয়েছে। ফান্ডিংয়ের জন্যও আমরা ভালো একটি স্থানে আসতে পারি নাই।

এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ। বিভিন্ন শিল্পে থাকা আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত। স্থানীয় স্টার্টআপদের পেছনে বিনিয়োগ করতে পারে তারা। কোম্পানির ফান্ড দিয়ে একটি স্টার্টআপ চলতে পারে না। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারে।

দেশে সফটওয়্যার ডেভলপারদের মূল্যায়ন করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন আপনি?

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে আস্থার ব্যাপার থাকে। মালিক এবং কর্মীর একটি বিষয় থাকে। তারা এক জায়গায় আসতে পারে না। 

কোরিয়ায় একজন ডেভলপারের যতটুকু জ্ঞান রয়েছে, তেমনি আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদেরও রয়েছে। তবে পার্থক্য তাদের ডেডিকেশন অনেক থাকে। কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের ডেডিকেশন তেমন না। কোরিয়ানদের কাছে একটি প্রজেক্ট মানে দিন-রাত এক। তবে দেশে কালচারটা ভিন্ন। তাদের নানা এক্সকিউজ থাকে। কিন্তু কোরিয়ানদের মাঝে এই বিষয়টি নেই। 

আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদেরকে এ ক্ষেত্রে দোষ দেওয়া যায়না। কারণ তাদের অনুপ্রেরণা দেওয়া হয় না। ফলে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের প্রধান লক্ষ্য থাকে দিন শেষে টাকা কামানো। তাদের মধ্যে হ্যাপিনেস বিষয়টি নেই। তাদের মধ্যে হ্যাপিনেস বিষয়টি চলে আসলে তারা এগিয়ে যাবে।

দেশের সফটওয়্যার খাত সম্পর্কে কিছু বলুন...

দেশে সফটওয়্যার খাতে বড় একটি বাজার রয়েছে। এ দেশে প্রচুর বিদেশি ভেন্ডর কাজ করে। দেশে সরকারি পর্যায়ে অনেক সফটওয়্যার কেনা হচ্ছে বাইরে থেকে। অনেক স্থানীয় ভেন্ডর রয়েছে যারা বাইরের প্রোডাক্ট বিক্রি করছে। ফলে আমার মনে হয় আমাদের স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে কিছু সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে আমাদের ব্র্যান্ডিংটি ভালো হবে। এর সঙ্গে আমাদের গ্লোবাল রেটিংটিও বাড়বে।

আমাদের ফ্রিল্যান্সার ইন্ডাস্ট্রি বড় একটি ইন্ডাস্ট্রি। এখানে যারা কাজ করে তারা একই ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কাজ করছে, তারা একই ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করছে। কিন্তু প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। ওই স্থানে স্কিলটি ডেভলপ হচ্ছে না।  আমাদের যারা ডিজাইন করে তারা শুধু ডিজাইন নিয়ে পড়ে রয়েছে। সে হয়তো পিএইচপি ল্যাঙ্গুয়েজ জানে না।  আবার যে পিএইচপি জানে, ডাটাবেজ বোঝে না। এটি একটি জটিলতা। সে হয়তো ভাবছে সে একটি বিষয়ে এক্সপার্ট হচ্ছে। কিন্তু পরবর্তীতে সে বেশি দূর এগোতে পারবে না। আমার মনে হয় তাদের সব কিছু সম্পর্কে বেসিক জ্ঞানটুকু থাকা প্রয়োজন এবং প্রযুক্তি বিশ্বের সঙ্গে আপডেট থাকা প্রয়োজন।

এ ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কোনো ভূমিকা রাখছে?

আমাদের দেশে একজন শিক্ষার্থী যখন ডাক্তারি পড়তে যায় তখন সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে সে সার্জারি বা গাইনি স্পেশালিস্ট হবে। আর আইটি নিয়ে যারা পড়াশুনা করে তারা একটি বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার চিন্তাভাবনা করে থাকে। কিন্তু এই লাইনে একটি বিষয়ে এক্সপার্টিস হয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আর এসব শিক্ষা আসতে হবে স্কুল থেকে।

এই চিন্তাধারার পরিবর্তন আসতে পারে স্কুল থেকে। এ ছাড়া আমাদের শিক্ষার কারিকুলামটাও আপডেট হওয়া উচিত। বাইরের দেশে দেখি স্কুলে একজন শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার সম্পর্কে বেশি পড়ানো হচ্ছে না, তাদের গণিত এবং বিজ্ঞানের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের মধ্যে গণিতভীতি রয়েছে। আর একজন প্রোগ্রামারের জন্য গণিত এবং বিজ্ঞানটি বেশি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকে গণিতে পারদর্শী করা গেলে তারা এই খাতে  ভালো করবে।

পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

আমি একজন পজিটিভ মানুষ। দেশের তরুণদের সঙ্গে আগামী পাঁচ বছর পর কাজ করতে পারলে আমার খুব ভালো লাগবে। 

প্রিয় টেক