কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ব্রিটিশ লেখক, লিডারশিপ কোচ এবং ‘সিল্ক রোড পার্টনারশিপ’ এর প্রতিষ্ঠাতা নাইজেল কাম্বারল্যান্ড

'আমাদের সকলেরই সফল হওয়ার পথ ভিন্ন'

বুশরা আমিন তুবা
ফিচার লেখক, প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ২২:২৪
আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ২২:২৪

(প্রিয়.কম) নাইজেল কাম্বারল্যান্ড একজন ব্রিটিশ লেখক, লিডারশিপ কোচ এবং ‘সিল্ক রোড পার্টনারশিপ’ এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি এ পর্যন্ত আটটি বই লিখেছেন এবং তার মধ্যে কয়েকটি বই  বিদেশি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। যেমন- চাইনিজ, রোমানিয়ান, ডাচ, অ্যারাবিক, ব্রাজিলিয়ান এবং পর্তুগীজ। নাইজেল মূলত আত্মোন্নয়ন এবং নেতৃত্ব প্রদানের কৌশল নিয়ে বই লেখেন। তিনি সম্প্রতি একটি রাশিয়ান মিডিয়া আউটলেটে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সমগ্র সাক্ষাৎকারটি আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

ছবি কৃতজ্ঞতা: নাইজেল কাম্বারল্যান্ড 

প্রশ্নকর্তা- সাধারণত কীভাবে এবং কখন আপনি বই পড়ে থাকেন? পড়ার ব্যাপারে আপনার নিজস্ব কোন টিপস আছে কী?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- আমি সবসময়েই পড়ার উপরে থাকি। বর্তমানে আমি জাপানিজ লেখক হারুকি মুরাকামি’র ‘মেন উইদাউট উইমেন’ পড়ছি। সেই সঙ্গে প্রাক্তন গ্রীক অর্থমন্ত্রী  ইয়ানিস ভারুফাকিস এর ‘অ্যান্ড দ্য উইক সাফার হোয়াট দে মাস্ট’ এবং ক্রিস্টোফ গ্যালফোর্ডের ‘দ্য ইউনিভার্স ইন ইউর হ্যান্ড’ পড়ছি। এগুলোর সাথে সাথে আমার লিডারশীপ প্রশিক্ষণ বেগবান করার জন্যে ব্রিটিশ মনস্তত্ত্ববিদ ম্যারি ওয়েলফোর্ডের ‘বিল্ডিং ইউর সেলফ-কনফিডেন্স: ইউজিং কমপ্যাশন ফোকাসড থেরাপি’ পড়ছি।

টিপস: দ্রুততার সঙ্গে পড়ুন এবং বেছে বেছে পড়ুন। চোখের সামনে সবকিছু পড়ার দরকার নেই। জরুরী লাইন এবং উক্তিগুলো মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে পারেন।

দুবাই হেলথকেয়ার সিটিতে নিজের বইয়ের কপি প্রদানকালে নাইজেল কাম্বারল্যান্ড 

প্রশ্নকর্তা- আপনি ই-বুক নাকি পেপারবুক পছন্দ করেন, কেন?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- সত্যি কথা বলতে আমি ই-বুক ঘৃণা করি! আমার মা আমাকে কিন্ডেল কিনে দিয়েছিলেন কিন্তু তা কোনদিন ব্যবহার করিনি আমি। আমি বই হাতে নিয়ে, তার মধ্যে আঁকাআঁকি করে এবং পড়ার পর সেগুলো দাতব্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করতে ভালোবাসি। গত বছর দুবাইয়ের একটি চ্যারিটি বইয়ের দোকানে আমি ৪০টি বই দান করেছি এবং লন্ডনের একটি দোকানে ২০টি দান করেছি।

দুবাই পুলিশ অ্যাকাডেমি প্রধানের সঙ্গে নাইজেল কাম্বারল্যান্ড 

প্রশ্নকর্তা- এমন তিনটি বইয়ের কথা বলুন যেগুলো আপনার জীবন বদলে দিয়েছে। কেন সেগুলো পছন্দ করেন আপনি এবং বইগুলো কেমন প্রভাব ফেলেছে?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- আমার সমগ্র জীবনে আমি বই পড়ে দারুণভাবে উপকৃত হয়েছি। কয়েক দশক ধরে এগুলো আমার পরম বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছে। জীবনকে অনন্য, অসাধারণ ও আত্মিক করে তুলেছে। তবে নির্দিষ্ট করে তিনটি বইয়ের নাম বলতে হলে আমি যেগুলো বলবো:

১। পাওলো কোয়েলহো এর ‘দ্য আলকেমিস্ট’- একটি যাত্রার পৌরাণিক কাহিনী। যে যাত্রায় আমাদের সকলকে অংশ নিতে হয় যদি আমরা নিজেকে পরিপূর্ণভাবে খুঁজতে চাই এবং জীবনের লক্ষ্য এবং অর্থ জানতে চাই।

২। কাহলিল জিবরানের ‘দ্য প্রফেট’- লেবানিজ এ কবির কবিতাগুলো যেন একেকটি গভীর, অর্থপূর্ণ এবং খাঁটি সত্য প্রকাশ করে। যেগুলো প্রতিটি ধর্ম ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সাবলীলভাবে মিশে যায়।

৩। রিচার্ড বাখের ‘জোনাথন লিভিংস্টোন সিগাল’- জীবন ও আপন সাহসিকতার মেলবন্ধনে পরিপূর্ণ একটি বই।

সপরিবারে নাইজেল

প্রশ্নকর্তা- শৈশবে আপনি কেমন সাহিত্য পড়তে পছন্দ করতেন?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- বাচ্চাদের বইগুলো আমাকে খুব টানতো যেমন এনিড ব্লাইটন এবং রোয়াল্ড ডাল। ক্ল্যাসিক বইগুলোও আমার ভীষণ প্রিয় ছিলো যেমন ‘সোয়ালোজ অ্যান্ড অ্যামাজন’, ‘লর্ড অব দ্য ফ্লাইজ’, ‘১৯৮৪’। টমাস হার্ডি ও চার্লস ডিকেন্সের বই ছিলো আমার অসম্ভব পছন্দের।

স্যার জন হুইটমোরের সঙ্গে নাইজেল

প্রশ্নকর্তা- বই এবং সাহিত্য সম্পর্কিত আপনার কোন গল্প আছে?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- আমি ইন্ডিয়া থেকে একবার একটি বই কিনেছিলাম, সেটি ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ কবিতা ‘সাবিত্রী’। আমি তখন দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন আশ্রমে আত্মিক এক ধরনের সফরে ছিলাম।

প্রশ্নকর্তা- সঠিকভাবে বই পড়া যায় কীভাবে, সে ব্যাপারে আপনার উপদেশ আছে কোন?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- শুধুমাত্র পড়ার দিকে মনোযোগ দিন। এর মধ্যে গান কিংবা টিভি দেখা টানবেন না। দরকার পড়লে চশমা ব্যবহার করুন। মাঝেমধ্যে কোন পরিকল্পনা ছাড়াই বই বের করে পড়া শুরু করুন। যেসব লেখককে আপনি চেনেন শুধুমাত্র তাদের বই-ই পড়বেন না। সাহসী হোন এবং যাদের বই আপনি কখনো পড়েননি কিংবা যে বিষয়ের নাম কখনো শোনেননি, সে বই ও পড়ুন।

প্রশ্নকর্তা- এমন কেউ আছে যাকে আপনি এ প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে চান?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- ইতিহাসের তিন জন মহান পথপ্রদর্শক- যিশু, মোহাম্মদ এবং বুদ্ধ।

100 Things Successful People Do’ বইটির প্রচ্ছদ, ছবি কৃতজ্ঞতা: নাইজেল কাম্বারল্যান্ড 

প্রশ্নকর্তা- ‘100 Things Successful People Do’ বইটি লিখতে কেমন সময় লেগেছে আপনার? খুব কী কঠিন ছিলো সময়গুলো?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- আমার ছয় মাস সময় লেগেছে এটি লিখতে এবং পরবর্তী ছয় মাস কেটেছে ইউকে পাবলিশিং টিমের সঙ্গে সম্পাদনা এবং পুরো ব্যাপারটি চূড়ান্ত করতে। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে এটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। লেখার সময় আমার খুব মনোনিবেশ করতে হয়েছে এর প্রতি। আমি প্রতিদিন একটি করে অধ্যায় লিখেছি। সেগুলো ছোট হলেও প্রত্যেকটি লাইন কিন্তু খুব গভীর। আমি একটি দীর্ঘ টপিককে দুটো পৃষ্ঠায় বিভক্ত করেছি। সমগ্র ব্যাপারটিই খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষণীয়, তাই আমি উপভোগ করেছিও বটে!

প্রশ্নকর্তা- এ বিষয়ে বই লেখার ধারনা কীভাবে পেলেন আপনি?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- আমি পেশাদার এবং নেতাজাতীয় মানুষদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি অনেকদিন যাবত। যেগুলোর মধ্যে রাশিয়া এবং রাশিয়ান ভাষাভুক্ত বিভিন্ন দেশও রয়েছে। পরবর্তীতে আমি লক্ষ্য করি যে, আমাদের সকলেরই সফল হওয়ার পথ ভিন্ন। তবে একটি ছাঁচে সকলেই এক। সেটি হলো- ছোটখাটো কিছু কাজ, ধারণা, ব্যবহারই ধীরে ধীরে সংঘবদ্ধ হয়ে একজন মানুষকে সাফল্যের শিখরে পৌছতে সাহায্য করে।

দুবাই পুলিশ অ্যাকাডেমির একটি কনফারেন্সে নাইজেল, ছবি কৃতজ্ঞতা: নাইজেল কাম্বারল্যান্ড 

প্রশ্নকর্তা- আপনার কি মনে হয়েছিলো যে বইটি এতো জনপ্রিয় হবে? আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিলো?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- লেখার সময়েই আমার জানা ছিলো যে, এটি একটি জনপ্রিয় বিষয় এবং প্রকাশক, বই পরিবেশক এবং বইয়ের দোকানগুলো যদি বইটিকে সম্পূর্ণভাবে দৃশ্যমান এবং সহজলভ্য করে তোলে, তবে অবশ্যই বইটি জনপ্রিয় হবে। যখন দেখলাম যে বইটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, আমি খুব ভালো বোধ করি এবং সকলে যেন সহজেই বইটি হাতের কাছে পান সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি। শুধু তাই নয়, আমি অসংখ্য ই-মেইল এবং টেক্সট পেয়েছি পাঠকদের কাছ থেকে। তারা আমার কাছে আরো নানাবিধ বিষয়ে উপদেশ চাচ্ছেন এবং প্রশংসাপত্র পাঠাচ্ছেন। বইটি এতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এটি অনুবাদ করা হচ্ছে। রাশিয়ান ভাষায় ইতোমধ্যে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। এখন ডাচ, স্প্যানিশ, টার্কিশ, ভিয়েতনামিজ, রোমানিয়ান, বুলগেরিয়ান, চেক, চাইনিজ, আফগান, অ্যারাবিক এবং সর্বশেষ তথ্যমতে বাংলা ভাষাতেও অনূদিত হওয়ার পথে রয়েছে বইটি।

দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের  একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন নাইজেল। ছবি কৃতজ্ঞতা: নাইজেল কাম্বারল্যান্ড 

প্রশ্নকর্তা- আপনাকে যদি পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি উপদেশ দিতে বলা হয়, কি বলবেন?

নাইজেল কাম্বারল্যান্ড- ‘অন্যেরা যে যা-ই বলুক, নিজের মত তৈরি হয়ে উঠুন’

ফ্রেডরিখ নিয়েৎশে  ভাষ্যমতে বাক্যটিকে আরো একটু ভেঙ্গে বলা যায়,

‘আপনার যাত্রাপথে কেউ আপনার জন্যে রাস্তা তৈরি করে দেবে না। আপনিই কেবলমাত্র নিজের পথ গড়তে পারবেন। অবশ্যই অসংখ্য বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে আপনাকে। কাউকে প্রশ্ন না করে নিজের মতন চলতে থাকুন। তাতেই আপনার মঙ্গল নিহিত।’

সম্পাদনা: কে এন দেয়া