কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি: নগরকৃষি

কংক্রিটের নগরীর বুকে প্রাণের ছোঁয়া: নগরকৃষি

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:০৯
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:০৯

(প্রিয়.কম) ঢাকা শহরে জন্ম থেকে বা জীবিকার তাগিদে যারা বাস করেন, তারাই জানেন সবুজের অনুপস্থিতি কতটা যন্ত্রণাদায়ক। দৃষ্টিসীমানায় শুধুই ধূসর কংক্রিটের দালান, এর মাঝে প্রাণ বাঁচে কী করে? অনেকে শখ করে বাড়ির পাশের একচিলতে মাটিতে, ছাদে বা ছোট্ট বারান্দায় এক টুকরো সবুজের ঠাঁই দেবার চেষ্টা করেন। তাদের জীবনটা আরেকটু সহজ করে তোলার জন্যই আছে নগরকৃষি, যাদের ট্যাগলাইন হলো ‘ফার্মিং ইজ ফান’।

সবুজ যারা নিজেদের ছোট্ট পরিসরে একটু বাগান করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্যই এই উদ্যোগ। ছবি: নগরকৃষি

নগরকৃষির আইডিয়াটা নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তরুণ। অনার্সে পড়াশোনা করতে করতেই তারা ভাবেন এমন কিছু করা দরকার যাতে শহরের মাঝেও সবুজ সহজেই বেড়ে ওঠে। সবার পক্ষে তো আর গ্রামে, খোলা জায়গায় গিয়ে চাষবাস করা সম্ভব হবে না। যারা নিজেদের ছোট্ট পরিসরে একটু বাগান করতে ভালোবাসেন, তাদের সাহায্য ও উৎসাহ দিতেই জন্ম নেয় নগরকৃষি। তার তিনজন ‘কোর মেম্বার’ হলেন আবু নোমান সায়েম, আবু ইউসুফ শিহাব এবং মাহফুজ মুনতাসির। তাদের এই স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে স্পন্সর এবং অর্গানাইজার হিসেবে এগিয়ে আসেন ফাউন্ডার কামরুল হাসান। মূলত নিজেরা কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তাই দেশ ও সমাজের জন্য এই পড়াশোনা কাজে লাগানোর তাগিদ থেকেই তাদের কাজ শুরু। বারান্দা

ছোট্ট বারান্দায় এক টুকরো সবুজ। ছবি: নগরকৃষি

বাণিজ্যিকভাবে কাজ শুরু করার আগে নিজেদের কাজ ঝালাই করে নেবার জন্য তারা মোহাম্মদপুরে শুরু করেন ছাদ বাগানে অনুশীলন। সেখানে শুধু যে গাছের পরিচর্যা করতেন তাই নয়, বরং ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং বা গাছের পাশাপাশি হাস, মুরগী, পাখি সবকিছুই পালন করার অনুশীলন করেন তারা। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ধানমন্ডির ‘রাংতা’ মেলার মাধ্যমে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন তারা।

রাংতার পর বেশ পরিচিত হয়ে পড়েন তারা। এরপর পরিবেশ মেলা, বৃক্ষমেলা, বনানীতে MIB মেলায় এক এক করে তাদেরকে জানতে পারেন এই নগরীর মানুষ। জানতে পারে নগরীকে সবুজ করে তোলার এই উদ্যগের কথা। তবে এখানেই তারা থেমে থাকেননি। মানুষকে একদম জীবনের শুরু থেকেই গাছের প্রতি কৌতুহলি করে তুলতে চান তারা। এ কারণে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ওয়ার্কশপ করছেন। তাদের এই উদ্যগের নাম হলো “লিটল ফার্মার’।

little farmers

বাচ্চাদেরকে হাতেকলমেই শেখানো হচ্ছে গাছের যত্ন। ছবি: নগরকৃষি

ছোট বাচ্চাদেরকে ভারী ভারী কথার ফাঁদে না ফেলে বরং হাতেকলমেই তাদেরকে দেখানো হয় গাছ লাগানোর এবং পাছ পরিচর্যার ছোট ছোট ব্যাপারগুলো। বাচ্চারা যেহেতু পোকা ভয় পায়, তাই পোকা নিয়েও কিছু তথ্য জানানো হয় কথায় কথায়। সবশেষে তাদেরকে একটা করে বীজ দিয়ে তা রোপন করতে বলা হয়। এটা কীসের বীজ তা জানানো হয় না, ফলে গাছটা বেড়ে উঠলে দারুণ একটা সারপ্রাইজ পায় সেই শিশুটি। এভাবে শিশুটির মাঝে নিঃসন্দেহেই গাছের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়।

মাটি

বিভিন্ন ধরণের মাটি সরবরাহ করেন তারা। ছবি: নগরকৃষি

শহরে বাগান করার নানান হ্যাপা। ভালো মাটি পাবেন কোথায়? ভালো বীজ পাবেন কোথায়? কীটনাশক বাড়ির কারো ক্ষতি করবে না তো? ওদিকে বিশাল ছাদ পড়ে আছে অথচ খেটেখুটে পুরোটায় বাগান করার মত জনবল নেই পরিবারে। এই সব সমস্যার সমাধান করে দেয় নগরকৃষি। ভালো মানের মাটি, কম্পোস্ট, ভার্মি কম্পোস্ট, বীজ, চারা এসব তো আছেই। তার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কীটনাশক পদ্ধতিও সরবরাহ করে তারা।Nagarkrishi ফেসবুক পেইজে পাবেন তাদেরকে। কিছুদিনের মাঝে আসছে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট।

বিউটিফিকেশনইকেবানার সাথে বিউটিফিকেশনের কাজ করেছে নগরকৃষি। ছবি: নগরকৃষি

প্রয়োজন হলে আপনার বারান্দা বা ছাদে তারা বাগান করে দেবে। অফিসটাকেও সাজিয়ে দেবে সবুজে। অনেক বাড়ির লনটাকেও সাজিয়ে গুছিয়ে দেবার কাজ করেন তারা।

ছাদবাগান

ছাদবাগান তৈরি করছেন কর্মীরা। ছবি: নগরকৃষি

শুধু তাই নয়। আপনার গাছটি রোপন করার পর বাকি যত সাহায্য দরকার হয়, সবটাতেই আপনার পাশে থাকবে তারা। নিরাপদে, স্বাস্থ্যকর উপায়ে বাগান করা এবং শাক-সবজি উৎপাদনেও তারা আপনার সর্বাত্মক সহায়তা করবে। মূলত, আপনাকে একজন ‘নগরকৃষকে’ রূপান্তরিত করতে পাশে থাকবে তারা।

প্রিয় লাইফ/ আর বি