কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা। ছবি: ফোকাস বাংলা

‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হয়তো গণহত্যা চালিয়েছে মিয়ানমার’

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:৩৫
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:৩৫

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হয়তো গণহত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জেইদ আল রাদ আল হুসেইন। ৫ ডিসেম্বর জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের এক জরুরি অধিবেশনের ভাষণে তিনি ‘গণহত্যার’ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের অনুরোধে মানবাধিকার কাউন্সিলের ওই জরুরি অধিবেশন ডাকা হয়। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এই প্রথম জাতিসংঘের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মতো অভিযোগ তুললেন। এর আগে তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো সহিংসতাকে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযানের জ্বলন্ত উদাহারণ (টেক্সটবুক এক্সাম্পল অব এথনিক ক্লিনজিং) বলে বর্ণনা করেছিলেন।

জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সাধারণত ‘জেনোসাইড বা গণহত্যা’ শব্দটি হালকাভাবে ব্যবহার করেন না। জেইদ আল রাদ আল হুসেইন যে এই শব্দটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে বোঝা যায় যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতায় জাতিসংঘ কতটা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল প্রধানের ওই মন্তব্যে বিবিসির ইমোজেন ফুকস বলছেন, শুধু তাই নয়, এতে আরও স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনতে অং সান সুচির ব্যর্থতাতেও তারা হতাশ।

জেইদ রাদ আল হুসেইন বলেন, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে এসব ঘটনার বিবরণে এতটাই মিল যে জাতিসংঘ এখন মনে করছে, সেখানে যে গণহত্যা চলেছে সে সম্ভাবনা আর উড়িয়ে দেওয়া চলে না।

সেনাদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া জনশূণ্য রাখাইন গ্রাম। ছবি: সংগৃহীত

সেনাদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া রাখাইন গ্রাম। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি রোহিঙ্গাদের স্বতন্ত্র নৃতাত্বিক, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সত্ত্বার কথা ভাবি, এবং যারা সহিংসতা ঘটাচ্ছে তাদের আলাদা সত্ত্বার কথা মনে রাখি, তাহলে গণহত্যা যে ঘটে থাকতে পারে তা উড়িয়ে দেওয়া চলে না। ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে একই রকম হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের মতো ভয়াবহ বর্বরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।’

আল হুসেইনি আরও বলেন, ‘মানবাধিকার পরিস্তিতির অব্যাহত নজরদারি এবং শরণার্থীদের নিরাপদে ও মর্যাদা নিয়ে বসবাসের পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাউকে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত হবে না - এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্ট হতে হবে।’

তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দাবি করেছেন, এই সহিংসতা মিয়ানমারর সরকারের নীতি নয়, বরং চরমপন্থীরা এসব ঘটাচ্ছে এবং তাদের ঠেকাতে সরকার সবকিছুই করছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান জায়েদ আল হুসেনি। ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান জেইদ আল রাদ আল হুসেইন। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের প্রতিনিধির ওই দাবি নাকচ করে আল হুসেইন বলেন, বৈষম্য ও সহিংসতা অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিতভাবেই আরও দুর্ভোগের শিকার হতে হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে ছয় লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ পালিয়ে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে; যাদের ৯০ শতাংশই নারী-শিশু ও বৃদ্ধ। ওই অভিযানে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচার গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ

অভিযানের বিষয়ে জাতিসংঘ জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে

অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইচ ওয়াচের।

স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২১৪টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

প্রিয় সংবাদ/শান্ত