কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মিয়ানমারের উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞার চিন্তা ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের

আয়েশা সিদ্দিকা শিরিন
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:২৬
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:২৬

(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট থেকে চলমান সেনা অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগতভাবে নিধনের’ যে প্রক্রিয়া চলছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাস্বরূপ দেশটির উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা-ভাবনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

ওয়াশিংটন, ইয়াংগুন ও ইউরোপে কূটনীতিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পর বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সেখানকার সেনাবাহিনীর প্রধানসহ শীর্ষ জেনারেলদের ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কথাবার্তা চলছে। তবে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

৮ অক্টোবর রোববার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ১৬ অক্টোবর মিয়ানমার প্রসঙ্গে বৈঠকে বসবেন। যদিও তারা মনে করছেন না খুব শিগগিরই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এক মাস আগেও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি আলোচনায় ছিল না। এতেই প্রমাণিত হয় সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের কতটা চাপে ফেলেছে।

নেদারল্যান্ডসের উন্নয়ন করপোরেশনবিষয়ক মন্ত্রী উলা টরনায়েস রয়টার্স-কে বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করতে’ কোপেনহেগেন বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে আনার চেষ্টা করছে।

মিয়ানমার নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা সম্পর্কে অবগত দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংসহ কয়েকজন জেনারেল এবং রাখাইন বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিবেচনা চলছে।

এটি করা হলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ এবং তাদের সঙ্গে আমেরিকানদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধসহ আরও কিছু বিষয় আসতে পারে। তাই  বিষয়টি নিয়ে ইউরোপ, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন এ বিষয়ে সাবধানতার সঙ্গে এগোচ্ছে। 

মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ নিয়ে ব্রাসেলসভিত্তিক একজন ইইউ কূটনীতিক বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে পারি, আবার সেখানে আমাদের যে অর্থায়ন আছে, তা খতিয়ে দেখতে পারি। আমাদের মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা আছে...কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অবস্থার উন্নতি না হলে মিয়ানমারের উন্নয়নে কোনো বিনিয়োগ করবে না ইউরোপীয় কমিশন।’

ইইউ’র এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘এখানে অস্ত্র বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। আমরা নিয়মিত আলোচনা করছি, আমাদের কি মিয়ানমারকে সংস্কারের জন্য পুরস্কৃত করব, নাকি ধীরে ধীরে ওই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করব, নাকি আরও কঠোর হব।’

রয়টার্স-এর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অভ্যন্তরীণ চিন্তাভাবনা কী, তা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিল সামনের সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করবে। তবে এখনই কোনো ধরনের শাস্তি প্রতীকী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

যদিও মিয়ানমারের সংবিধানও সেনাবাহিনীর লেখা, পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তারা ক্ষমতায় ছিল। এমনকি মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সুচি নির্বাচনে জিতলেও দেশটির সরকারের একটি অংশ সেনাবাহিনীর দখলে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ইস্যুতে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সুচির ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সোরগোল চলছে। যা নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। এমনকি সুচিকে দেয়া ‘ফ্রিডম অব দি সিটি অব অক্সফোর্ড অ্যাওয়ার্ড’ প্রত্যাহার করেছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড শহরের নগর কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিল ১৯৯৭ সালে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য তাকে এই সম্মাননা দিয়েছিল।

এদিকে জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ দফতরের প্রধান মার্ক লোকক জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আসা এখনও বন্ধ হয়নি। সহিংসতার পরও মিয়ানমারের রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এখনো রয়ে গেছে। আর সেকারণে শরণার্থীদের ঢল যদি আবারও নামে, তার জন্যে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

মিয়ানমারের সরকার যে সেদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছে কাউকে যেতে দিচ্ছে না, জাতিসংঘ সেটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ দফতরের কর্মকর্তাদেরকে রাখাইনে যেতে দেওয়ার জন্যে মিয়ানমারের প্রতি আহবানও জানিয়েছেন মার্ক লোকক।

এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক বৈঠকের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। মিয়ানমারে যথাযথভাবে মানবাধিকার বজায় রাখতে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আগস্ট মাস থেকে সমস্যা কেবল বেড়েই চলছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়েই এর সমাধান করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এদিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলার সময় এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মুখপাত্র।      

অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইচ ওয়াচের। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২১৪টি রোহিঙ্গা অধুষ্যিত গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে উল্লেখ করে দেশটির ওপর কিছু ক্ষেত্রে ও সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

প্রিয় সংবাদ/শান্ত