কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

দিন শেষে অপরাজিত মুশফিকুর রহিম ও নাসির হোসেন। ছবি: প্রিয়.কম

স্বপ্ন বাঁচানোর লড়াই টিকিয়ে রাখলেন মুশফিক

সামিউল ইসলাম শোভন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৫৯
আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৫৯

(প্রিয়.কম, চট্টগ্রাম থেকে) সমুদ্রটা দেখা যায় স্টেডিয়ামের ছাদ থেকে। সকাল থেকে শেষ বিকেল পর্যন্ত তিনটি মালবাহী জাহাজ নোঙ্গর ফেলে রেখেছে। কি বিশাল, অথচ স্থবির। চাইলেও ডাঙ্গায় উঠে আসার ক্ষমতা নেই। দূর থেকে চোখ ফেরাবেন স্টেডিয়ামের মাটিতে, ক্রিকেট মাঠেও সেই মালবাহী জাহাজের মতো হাহাকার। যেখানে, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানদের মতো ডাকসিটে ব্যাটসম্যানরা ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও  হার মানছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডানহাতি স্পিনার নাথান লায়নের সামনে। যিনি চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনের পুরো আলো কেড়ে নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকালের হাসিটা ছিলো মুশফিকুর রহিমের। শেষ বিকেলে তা ফিরিয়ে নিলেন স্টিভেন স্মিথ। দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টের প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৫৩ রান তুলতে ছয় উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। নাথান লায়ন একাই নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। জোর করে বাংলাদেশ যতটুকু আলো কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেই জোটে নাম উঠেছে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক, সাব্বির রহমান ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের।

সাগরিকার ‘স্লো অ্যান্ড লো’ উইকেটে স্বাভাবিকভাবেই টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। আগের রাতের টানা বৃষ্টি দিনের শুরুতে ব্যাটসম্যানদের বাড়তি সুবিধা দেবে, সেই ভাবনা মাথায় ছিলো বাংলাদেশ দলপতির। সঙ্গে ছিলো প্রথম টেস্টে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সুখস্মৃতি। কিন্তু হায়, দুই সেশন যেতে না যেতেই সবকিছু দুঃস্বপ্নে পরিণত করলেন লায়ন!

মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি করা তামিম ইকবাল ব্যক্তিগত নয় রানের মাথায় এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন। দিনের শুরুতেই তাকে ফিরিয়ে মানসিকভাবে শক্ত ভিত গড়ে নিয়েছিলেন লায়ন। হয়তো সে কারণেই প্রথম চারজন ব্যাটসম্যানকেই ফিরিয়েছেন তিনি। কাকতালীয়ভাবে দুটি ব্যাপার ঘটেছে এখানে। চারজনকেই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেছেন লায়ন, যা কিনা ক্রিকেট ইতিহাসে এবারই প্রথম। অন্যদিকে, চারজন ব্যাটসম্যানই বাঁ-হাতি ছিলেন। অবশ্য পঞ্চম ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসানও বাঁ-হাতি, কিন্তু তার উইকেট নিয়েছেন আরেক স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগার।

ব্যাট হাতে তামিমের ফেরার পর আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছিলেন ইমরুল কায়েস। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি মিরপুরের মতোই। মাত্র চার রান করেন তিনি। পরের উইকেটে মুমিনুলের সঙ্গে জুটি গড়েন সৌম্য। যেখানে দলেই রাখা হয়েছিলো না বাঁ-হাতি মুমিনুলকে, সেখানে দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়েই সৌম্যর সঙ্গে মিলে করলেন ৪৯ রান। ব্যক্তিগত ৩৩ রানে সৌম্য এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়লে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু এই জুটি ১৫ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি। মুমিনুলকে ফিরতে হয়েছে ৩১ রানে। অন্যপ্রান্তে ততক্ষণে উইকেটে নেমে পড়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। সাকিবের সঙ্গে ভালোই এগোচ্ছিলেন তিনি। জুটিটা যখন ৩১ রানে পৌঁছেছে, তখনই অ্যাস্টন অ্যাগারের স্পিনবিষে উইকেট খোয়ালেন সাকিব। উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েডের কাছে ব্যক্তিগত ২৪ রানের মাথায় ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন।

সাকিবের ফেরার পর সাব্বির মাঠে নামেন। ওই সময়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একরকম ধুঁকছে মুশফিকুর রহিমরা। গ্যালারিতে থমথমে অবস্থা, একটু খেয়াল করলে চোখে পড়ে অনেকেই মাঠ ছাড়ছে। ওদিকে উইকেটে সাব্বিরের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছেন মুশফিক, ফলাফলও পাচ্ছেন। অধিনায়কের পরামর্শেই রানের চাকা এগিয়ে নিচ্ছেন সাব্বির। দেশের একমাত্র টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট বলেই কিনা, মেজাজটা একেবারে টেস্ট সুলভ করতে পারেননি। বলের সংখ্যার সঙ্গে নিয়মিত ব্যবধান কমছিলো রানের। অন্যপ্রান্তে ধীরস্থির মুশফিক। এই সময়ে দুজনেই দেখা পেলেন হাফ সেঞ্চুরির। অবশ্যই আগে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সাব্বির। যে চট্টগ্রাম দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চাপের মুখেও খালি হাতে ফিরলেন না তিনি। সেখানে হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে টেনে তুললেন অনেকটা।

কিন্তু দূর্ভাগ্য তার! চতুর্থ সেশনে যখন দিনের খেলা শেষ হতে আর আট ওভারের মতো বাকি, তখনই নাটকীয়ভাবে লায়নের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হলেন। বলটা আটকাতে গিয়ে পা হড়কে ফেললেন, সুযোগটা কাজে নিলেন উইকেটের পিছনে থাকা ওয়েড। দ্রুততম সময়ের মধ্যে চেষ্টা করলেন সাব্বিরকে ফেরানোর। সফলও হলেন শেষ পর্যন্ত।

দিন শেষে ভেঙ্গে গেল ১০৫ রানের বিশাল জুটি। প্রথম দিনে এই জুটিই বাংলাদেশের প্রাপ্তি। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ৬২ রানে অপরাজিত থাকলেন তিনি, নাসির থাকলে ১৯ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ (চট্টগ্রাম টেস্ট, প্রথম দিন)

বাংলাদেশ- ২৫৩/৬

সাব্বির- ৬৬, মুশফিক- ৬২

অস্ট্রেলিয়- নাথান লায়ন- ৬/৭৭