কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কক্সবাজারের একটি রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির। ফাইল ছবি

এক মাসেই হত্যার শিকার সাড়ে ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা

জাহিদুল ইসলাম জন
জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, নিউজ এন্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:২৯
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:২৯

(প্রিয়.কম) গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিসংতা ছড়িয়ে পড়ার এক মাসেই হত্যার শিকার হয়েছিলেন কমপক্ষে ৬ হাজার সাতশ রোহিঙ্গা নাগরিক। প্যারিসভিত্তিক মানবিক সাহায্য সংস্থা মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে পরিচালিত এক জরিপের উপর ভিত্তি করে এই তথ্য দিলেও মিয়ানমার এই সংখ্যাকে চারশ বলে দাবি করে থাকে। বিশ্লেষকরা বলছেন এই জরিপের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আদালতে তোলা যেতে পারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে।

এমএসএফ এক বিববৃতিতে বলেছে, এই সংখ্যা পরিষ্কারভাবে মিয়ানমার কতৃপক্ষের চালানো সহিংসতার ব্যাপকতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারককে ‘অপরিপক্ক’ বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে সহিংসতার জন্য ‘সন্ত্রাসী’দের দায়ী করে ভুল কোনো কিছু করার দায় অস্বীকার করে থাকে।

১৯৭১ সালে পশ্চিম আফ্রিকার বায়াফ্রায় দুর্ভিক্ষের পর প্যারিসের একদল ডাক্তার আর সাংবাদিকদের হাতে তৈরি সংগঠন মেডিসিন স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স বলছে গত আগস্ট পর্যন্ত এ পর্যন্ত মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে ছয় লাখ ৪৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের দাবি মিয়ানমারে ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মারা গেছেন নয় হাজার রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে ‘সবচেয়ে রক্ষণশীল মুল্যায়নে’ও দেখা গেছে ছয় হাজার ৭০০ জন হত্যার শিকার হয়েছে। আর হত্যার শিকার হওয়াদের মধ্যে অন্তত সাতশো ৩০ জন শিশু রয়েছে বলে জানায় এমএসএফ।

এর আগে মিয়ানমার কতৃপক্ষ জানিয়েছিল রাখাইনে চারশ মানুষ হত্যার হয়েছে। যাদের বিশিরভাগই ‘মুসলিম সন্ত্রাসী’। তবে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংগঠন আর সাংবাদিকদের একাধিক জরিপে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার ভঙ্গের বিপুল অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমএসএফের সংগ্রহ করা এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা দায়ের সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সমস্যা হলো আইসিসির রোম চুক্তিতে অনুমোদন দেয়নি মিয়ানমার। সেকারণে ওই আদালতকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে দেশটি বাধ্য নয়। আইসিসির আদালতে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। আর ওই পরিষদের সদস্য চীন রাখাইন ইস্যুতে এখন মিয়ানমার সরকারের ওপর তাদের জোরালো সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।

কয়েকশ বছর ধরে রাখাইনে বসবাস করে আসলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দেয় না মিয়ানমার। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বিবেচনা করা হয় তাদের। স্থানীয় সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উস্কে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার।

নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলায় ৩০ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর ২৫ আগস্ট রাখাইনে অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ব্যাপক দমন পীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালাতে শুরু করে রোহিঙ্গা নাগরিকরা। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এই অভিযানকে জাতিগত নিধনের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে মন্তব্য করা হয়।

তারপরও গত নভেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেক্স টিলারসনের মিয়ানমার সফরের একদিন আগে প্রকাশিত এক অভ্যন্তরীন রিপোর্টে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সাধারণ নাগরিকদের হত্যা, ধর্ষণ আর গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ওই রিপোর্ট।

এমএসএফের মেডিকেল ডিরেক্টর সিডনি ওয়াং বলেন, আমরা যা উন্মুক্ত করতে পেরেছি তা একেবারে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নয়। অনেকেই বলেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা সহিংসতার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন আবার অনেকেই বলেছেন তারা সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অথবা মারাত্মভাকে আহত হয়েছেন।  

রিপোর্টের চুম্বক অংশ:

৬৯ শতাংশ সহিংসতা জনিত মৃত্যুর কারণ বন্দুকের গুলি
৯ শতাংশ মারা পড়েছেন ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার আগুনে পুড়ে
৫ শতাংশকে পিটিয়ে মারা হয়েছে।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর বিষয়ে এমএসএফের রিপোর্ট বলছে

৫৯ শতাংশ মারা পড়েছে গুলি খেয়ে
১৫ শতাংশ মারা পড়েছে আগুনে পুড়ে
৭ শতাংশকে পিটিয়ে মারা হয়েছে
২ শতাংশ স্থলমাইন বিস্ফোরণে মারা গেছে

সিডনি ওয়াং বলেন, ‘বাংলাদেশের সব শরণার্থী ক্যাম্পে জরিপ চালানো না যাওয়ার কারণে মৃতের একেবারে সঠিক সংখ্যা বলা যায়নি। প্রকাশিত সংখ্যাটা আসল সংখ্যার চেয়ে নিশ্চয় অনেক কম। আর রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বাইরে এসে পরিবারের সদস্যদের একত্র করতে পারেনি। ফলে তাদের বিষযে সঠিক তথ্য পাওয়া একেবারে অসম্ভব।’


গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এই সমঝোতা স্মারককে ‘অপরিপক্ক’ বলে মন্তব্য করেছে এমএসএফ। কারণ হিসেবে তারা বলছে এখনও মিয়ানমার থেকে মানুষ পালিয়ে আসছে। এমনকি চলতি সপ্তাহেও সেখানে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

মানবিক সাহায্য সংস্থাটি বলছে রাখাইনে এখনও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রবেশ সীমিত করে রাখা আছে।

প্রিয় সংবাদ/আশরাফ