কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি কৃতজ্ঞতা: মৌরি মুসতারি

লাভ ডায়েরি: ক্যাম্পাসের আদর্শ জুটির টোনাটুনি সংসার

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:৪৫
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:৪৫

(প্রিয়.কম) পাঠকের জন্য, পাঠকেরই ভালোবাসার কাহিনী নিয়ে আমাদের আয়োজন "প্রিয় লাভ ডায়রি"। মিষ্টি একটা প্রেম বা বিয়ের গল্প সবার জীবনেই থাকে। আপনারও কি আছে এমনই একটি দুষ্টু-মিষ্টি ভালোবাসার কাহিনী? তাহলে দারুণ কিছু ছবি সহ যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের সাথে। আপনার ভালোবাসার সেই মিষ্টি কাহিনী ছাপা হবে প্রিয়.কমের পাতায়, জানবে সারা বিশ্ব। নিজের ভালোবাসার কথা সকলকে জানাতে চাইলে ছবি সহ যোগাযোগ করুন আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। পেজ লিঙ্ক-https://www.facebook.com/priyolife

জীবনে চলার পথে আমাদের জীবনে যেমন প্রেম আসে, তেমনই অন্যদের ভালোবাসার ছোট ছোট গল্পগুলোতেও অনেক সময়ে পা ফেলি আমরা। কিছু কিছু মানুষের মিষ্টি ভালোবাসা দেখে আমরা মুগ্ধ হই, আবার আমাদের চোখের সামনেই ‘পারফেক্ট’ সেসব ভালোবাসায় চিড় ধরে। অনেক সময়েই দেখা যায় পড়াশোনা করতে করতে যারা প্রেম করেন, বাস্তবতার স্রোতে এক সময়ে তাদের সম্পর্ক আর টেকে না। মৌরি মুসতারি আর জুবায়ের হাসানের ভালোবাসা কিন্তু এমন নয়! ক্যাম্পাসেই তাদের ভালোবাসার শুরু। এরপর ঝড়-ঝাপটা সহ সহ্য করে বিয়ের পর তাদের ভালোবাসা যেন আরো পাকাপোক্ত হচ্ছে দিনে দিনে। চলুন জেনে নিই তাদের গল্পটি-

মৌরি এবং জুবায়েরের পরিচয় একদম ক্যাম্পাস ওরিয়েন্টেশনের দিনেই। বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন দুজনেই। পড়াশোনায় এগিয়ে ছিলেন মৌরি, আর জুবায়ের একটু পেছনের বেঞ্চের ছাত্র। পড়া বুঝে নেবার ছলে বন্ধুত্ব। মৌরি পড়াশোনার পাশাপাশি সক্রিয় ছিলেন আরো অনেক কিছুতেই। ক্যাম্পাসে নাচ, উপস্থাপনা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কালচারাল কো-অর্ডিনেট, কোরিওগ্রাফি, বন্ধুসভা, ফিচার রাইটিং- এমন অনেক কিছু জড়িত ছিলেন। এসব নিয়ে জুবায়ের তাকে খোঁচা দিতে ছাড়তেন না মোটেই। খুনসুটির মাঝে মাঝে বন্ধুত্ব হয়ে পড়ে অনেকটাই উষ্ণ।

টেবিল

ক্যাম্পাসের এই গোল টেবিলেই চলত আড্ডা।

ভালোবাসার শুরুটা কখন? এটাও ক্যাম্পাস থেকেই। নবীনবরণে একসাথে স্টেজ পারফর্ম করেন মৌরি। দুই জোড়া ছেলে এবং মেয়ের এই পারফর্মেন্সে কিন্তু জুবায়ের মৌরির পার্টনার ছিলেন না। কিন্তু কোরিওগ্রাফার মৌরি হবার কারণে তিনিই জুবায়েরকে শেখাতেন। রিহার্সাল চলত অনেকটা সময় ধরে। পরবর্তীতেও অন্যান্য অনুষ্ঠানে কোরিওগ্রাফি, নাচ, রিহার্সেল, মাঝ রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাস সাজানোর কাজ। মনে মনে ভালোবাসার গল্পটা লেখা শুরু হয়ে যায় তখন থেকেই। 

এরপর ক্যাম্পাস থেকে সেন্ট মার্টিন’স ট্যুর। তাদের এক বন্ধু তার পছন্দের মেয়েটির সাথে বসতে চাওয়ায় এলোমেলো হয়ে যায় সাজানো সিট প্ল্যান। মৌরি আর জুবায়ের একসাথে। এভাবেই আরো কিছু ট্যুর, আড্ডা- সবকিছুর পর মুখ বন্ধ রাখাটা আর সহজ রইল না জুবায়েরের জন্য। মৌরিকে জিজ্ঞেস করে বসেন, “তুই আমাকে ভালোবাসিস?”

মৌরি একবাক্যে না বলে দেন। কিন্তু জুবায়ের তা শোনার পাত্র নাকি? তিনি নাছোড়বান্দা, বলেন, “বাসিস তো। বাসলে ভয় পাস কেন? বলে ফেল।“

এ কথা শুনে সত্যি সত্যিই ‘ভালোবাসি’ বলে ফেলেন মৌরি। 

ক্যাম্পাসে ভালোবাসা শুরু প্রথম বর্ষের শেষ থেকেই। প্রচন্ড অগোছালো জুবায়ের আর দারুণ গোছানো মৌরি, চুম্বকের দুই মেরু বলেই হয়ত আকর্ষণ বেশী ছিল। সমসাময়িক বন্ধুদের প্রেমের গল্পের সাথে তাদের কিছুতেই মেলে না। যেখানে নিজেদের পছন্দ মিলে গিয়ে একেকজন প্রেম করেন, সেখানে মৌরি আর জুবায়েরের অমিলের তালিকাটাই যেন বেশী লম্বা। একগাদা অমিল নিয়ে মাঝে মাঝেই চলে তাদের ঝগড়া। 

এর পরেও তাদের ভালোবাসা ছিল চোখ জুড়ানো। বেড়াতে যাবার আগে বান্ধবীরা সাজিয়ে দিতেন মৌরিকে, শাড়ি, চুড়ি, কাজল। বাসা থেকে চুপি চুপি বের হবার সময়ে কাজিনরা আশ্বাস দিয়ে বলতেন, ‘যা তো, সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।‘ ভালোবাসায় মূল চরিত্র মৌরি আর জুবায়ের হলেও আশেপাশের মানুষগুলোর প্রতি দারুণ কৃতজ্ঞ মৌরি। 

৬ বছরের ভালোবাসায়, ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছুতেই যেন মিল ছিল না। প্রতিদিন দুজনের মাঝে নালিশ, ঝগড়া আর খুনসুটি। অনেকে ভালোবাসার বয়স ৫ বছর হলে নাকি সব অভ্যাসে পরিণত হয়। কিন্তু এখনো মৌরি ভালোবাসায় অভ্যস্ত হতে পারেননি। প্রতিবার ‘ভালোবাসি’ বলার সময়ে সেই আগের মতো শিহরণ খেলে যায় তার মাঝে। 

পড়াশোনা শেষ করার পর তো বিয়ের কথা আসবে। ক্যাম্পাসের এই আদর্শ জুটির প্ল্যান ছিল তেমনই। মৌরি ক্লাস মনিটর আর ভালো ছাত্রী হবার কারণে শিক্ষকরা তাকে নিয়ে তেমন একটা চিন্তিত ছিলেন না। কিন্তু একজন শিক্ষক ফোন করে জানিয়ে দেন জুবায়েরের পরিবারকে। জুবায়েরের আগে মৌরির চাকরি হওয়ায় বাসায় বিয়ের কথাটাও বলা যাচ্ছিল না। এমনকি জুবায়েরের বাবা মা যেদিন মৌরির বাড়িতে কথা বলতে আসেন, সেদিনই জুবায়ের যেখানে কাজ করছিল সে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপরেও বিয়ের কথাবার্তা চলে, চার মাস পর আবার চাকরি পেয়ে যান তিনি। 

পারিবারিক কোন বাধা-বিপত্তি ছাড়াই ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পরেও কিন্তু থেমে থাকেনি তাদের ভালোবাসা। একরাশ মমতা নিয়ে নিজেদের ছোট্ট সংসার সাজাচ্ছেন মৌরি। খুব বেশী কেনাকাটা করায় নিয়মিত বকুনি দিচ্ছেন জুবায়ের। সেই সাথে নতুন সংসারের ছোট্ট ছোট্ট মজাগুলোও পাচ্ছেন রীতিমত। জুবায়ের শাড়ির কুচি ধরে সাহায্য করছেন, মৌরি রুটি বানাতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলছেন আর সেটাই মজা করে খাচ্ছেন জুবায়ের। আহ্লাদ করে কেনাকাটায় ঘর গুছিয়ে রাখছেন, নতুন কেন আলমারি থেকে শুরু করে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটের ছবিটাও তুলে রাখছেন। টোনাটুনির এমন ভালোবাসা যেন থাকে সব সময় অমলীন। 

প্রিয় লাইফ/ আর বি