কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

লেকহেড গ্রামার স্কুলের একটি ভবনের ফাইল ছবি।

অনিশ্চয়তায় লেকহেড স্কুলের ১১২৮ শিক্ষার্থী

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৩
আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৪৩

(প্রিয়.কম) রাজধানীতে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া ইংরেজি মাধ্যমের লেকহেড স্কুলের দুটি শাখায় অধ্যয়নরত ছিলেন ১১২৮ শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডি শাখায় সাতশ এবং গুলশান শাখায় রয়েছে চারশ ২৮ শিক্ষার্থী। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এসব শিক্ষার্থীর। এরই মাঝে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুলের কার্যক্রম। ফলে শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে প্রয়োজনে তাদের অন্য স্কুলে সরিয়ে নেওয়া হবে।

গত ৬ নভেম্বর সোমবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আদেশ পাওয়ার পরদিন প্রতিষ্ঠানটির দুটি ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট।

লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধের আদেশে বলা হয়েছিল, ‘ধর্মীয় উগ্রবাদে অনুপ্রেরণা দান, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতাসহ জাতীয় ও স্বাধীনতাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য লেকহেড গ্রামার স্কুলের সব কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

স্কুলটির দুটি শাখাতেই সাধারণত ধণাঢ্য ব্যক্তিদের সন্তানরাই পড়াশোনা করে থাকেন। এদের অনেকেই অন্য স্কুল থেকে সন্তানকে নিয়ে এসে স্কুলটিতে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু এখন হঠাৎ স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা মানসিক চাপে ভুগছেন।

স্কুলের দুটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, কোনো নোটিশ ছাড়াই স্কুল বন্ধ এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো কিছু না জানানোয় সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। বছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ এমন ঘটনায় কোথায় যাবেন এবং কোন স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। এছাড়া স্কুলটির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা জেনে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের সন্তানকে ভর্তি করাবে কিনা তানিয়েও দুঃচিন্তায় এসব অভিভাবক। 

স্কুলটির কার্যক্রম বন্ধ করা নিয়ে গত ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে দশজন অভিভাবক হাইকোর্টে তিনটি আলাদা রিট দায়ের করেন। প্রথম দিনের শুনানি শেষে উচ্চ আদালত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। আগামী ১২ নভেম্বর ওই রিটের পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রিটের শুনানি শোনার জন্য দুপুরে অনেক অভিভাবক জড়ো হয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। 

ধানমন্ডি শাখার অভিভাবক মোস্তাফিজুর রহমানের এক অভিভাবক প্রিয়.কমকে বলছিলেন, ‘আমার দুটি সন্তানকে এই স্কুলে পড়াচ্ছি। তাদের একজন সানবিম স্কুলে পড়তো সেখান থেকে নিয়ে আসছি। এখন আমার সন্তানের কি হবে’। ‘কোন প্রকার আগাম নোটিশ ছাড়া স্কুলটি বন্ধ করে দেয়া হলো। তাহলে এতো শিক্ষার্থীর কি হবে, তারা কোথায় যাবে এবং কোন স্কুলে তাদের ভর্তি করিয়ে নেয়া হবে? যোগ করেন তিনি।

মোস্তাফিজুরের মতোই আরেক অভিভাবক শাহীন রহমান। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার দুটি সন্তান বর্তমানে পড়ছে এবং বড় সন্তানও এই স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল পাশ করে বের হয়ে গেছেন। 

শাহীন রহমান বলেন, ‘ছোট ছেলেটা আজ সকালে ওঠেই তার মাকে বলছিল আম্মু চলো আমরা স্কুলে যাব। কিন্ত সেতো আর বুঝে না তার স্কুলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

ধামনন্ডি শাখার অভিভাবক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ করে স্কুল বন্ধ করে দেয়া তো সমাধান নয়। এই শিক্ষার্থীরা যদি এখন কোনো স্কুলে যায় তাহলে তো ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ বলবে তোমরা জঙ্গি স্কুল থেকে এসেছ। স্কুলটির কেউ জঙ্গি সম্পৃক্ততায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পরিচালনা বোর্ড পরিবর্তন করা হোক।’

গুলশান শাখার নাভিদ নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘বাচ্চাটা সকালে দেখছি তার স্কুলের বন্ধুর নাম ধরে নিজেই কথা বলছিল। তার মানে সে স্কুলকে কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না। স্কুলটির পূর্বের কোনো ব্যক্তির দায়ে আমার সন্তান শাস্তি পেতে পারে না।’ 

আরেক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘স্কুল বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের মনে যে দাগ পড়ছে তা কি পূরণ করে দিতে পারবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাহলে কেন এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলো।’ 

এই সময় ক্ষুদ্ধ হয়ে এক নারী অভিভাবক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তার শাস্তি হবে কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানে আমার সন্তান পড়াশুনা করলে ভুগবে কেন।’ আরেক অভিভাবক বলেন, ‘আমরা তো স্কুলটি খুলে দেয়ার জন্য সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কোনো মানববন্ধন বা মিছিলও করতে পারছি না।’

অভিভাবকরা মনে করছেন, হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের শুনানি তাদের পক্ষে যাবে এবং স্কুলটি আবার খুলবে। স্কুলটি খোলা হলেও সেখানে তারা তাদের সন্তানদের পড়াবেন বলে জানিয়েছেন তারা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলটি শুরুর দিকে রেজওয়ান হারুন নামের এক ব্যক্তি চালাতেন। পরবর্তীতে তিনি খালেদ হাসান মতিন নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। এখন পর্যন্ত মতিনের নামেই চলছে স্কুলের কার্যক্রম। তবে বর্তমান মালিকের আড়ালে এখনো সাবেক পরিচালক হারুনই স্কুল পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

স্কুলটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসিফ ইশতিয়াক প্রিয়.কমকে বলেন, ‘স্কুলটি কেন বন্ধ করে দেয়া হলো বিষয়টি জানার জন্য আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি কিন্তু তারা কোন জবাব দেননি। এমনকি নোটিশও আমাদের দেখায়নি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলের দশজন অভিভাবক বৃহস্পতিবার সকালে হাইকোর্টে দুটি আলাদা রিট দায়ের করেছেন। আশা করছি আগামী রোববার স্কুলের পক্ষে শুনানী হবে এবং স্কুলের কার্যক্রম আমরা আগের মতোই চালাতে পারব।’ 

রিট দায়েরকারীর পক্ষের আইনজীবি ব্যারিস্টার রাসনা ইমাম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘স্কুলটিতে বর্তমানে পড়য়া কোন শিক্ষার্থী ও কর্মরত শিক্ষকের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততা অভিযোগ নেই। আর কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তার শাস্তি হবে। এজন্য স্কুলের কার্যক্রম বন্ধে যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা পুরোপুরি বেআইনি। 

এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান প্রিয়.কমকে বলেন, আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র। তারা আমাদের নির্দেশ দিয়েছিল স্কুলটি বন্ধ করার জন্য, সে মোতাবেক আমরা জেলা প্রশাসনকে নোটিশ দিয়ে বন্ধের কাজটি করিয়েছি। আর এটি করা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে। কারণ এর আগেও একই অভিযোগে পিস স্কুলের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা যেহুতু হাইকোর্টে রিট করেছেন আদালত যা রায় দেবে সেটাই হবে। 

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান বলেছেন, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ করা যাবে না। প্রয়োজনে তাদের ঢাকার অন্য স্কুলে সরিয়ে নিয়ে পড়ালেখা চালু রাখতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন তিনি আসলে লেগহেড গ্রামার স্কুলের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকার রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম সেনাবাহিনীর চাকরি ছাড়ার পর এই স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বলে খবরে প্রকাশ হয়েছে। এছাড়াও একজন শিক্ষক জেএমবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেও একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়।

প্রিয় সংবাদ/জন/আশরাফ