কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে আছে হাজার হাজার বিঘা আমন ধান ক্ষেত। ছবি: প্রিয়.কম

লালমনিরহাটে ধানের জমি থেকে গোলা, সবই ফাঁকা!

আসাদুজ্জামান সাজু
কন্ট্রিবিউটর, লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৩১
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৩১

(প্রিয়.কম) লালমনিরহাটে চলতি বন্যায় পানিতে ডুবে পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত। তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজানসহ সকল নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। ফলে বসত-বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও আমনখেত রয়েছে পানিতে ডুবে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সম্বল আমন ধানও নষ্ট হওয়ায় কান্না বিরাজ করছে প্রতিটি কৃষক পরিবারে। ফলে লালমনিরহাটে ধানের জমি থেকে ধান রাখার গোলা, সবই এখন ফাঁকা হয়ে েগেছে।

গোলার সব শেষে ধান বিক্রি করে আমনের চারা রোপণ করলেও পানিতে পঁচে তাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকের গোলার পর এবার মাঠও ফাঁকা। সরেজমিনে দেখা যায়, গত ৯ দিন আগে শুরু হওয়া বন্যার পানিতে ডুবে যায় সদ্য রোপণ করা আমন ধানের ক্ষেত। ধান গাছ পরিপক্ক না হতেই টানা এক সপ্তাহ পানির নিচে থাকায় ধান গাছগুলো পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকের আমনখেতের উপর আস্তানা গেড়েছে কচুড়ি পানার দল।

কম ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার ধান গাছে মাথা ভেসে উঠলেও প্রচন্ড তাপদাহে সেটাও পঁচে যাচ্ছে। একদিকে ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে অপরদিকে আগামী দিনের সম্বল কৃষকদের বেঁচে থাকার অবলম্বন আমন ক্ষেত বন্যার পানির স্রোতে নষ্ট হওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন তারা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর সংস্কার না করেই স্বপ্ন বাঁচাতে অনেক কৃষক ছুটছে ধান খেতের পরিচর্যায়। ধান খেতে থাকা কচুরিপানা সড়াচ্ছে। কেউ কেউ বন্যার পানির চাপে ভেঙ্গে পড়া ধান গাছগুলো দাঁড় করানোর অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ বন্যায় কাদায় ঢেকে যাওয়া ধান গাছগুলো বের করে ধুয়ে দিচ্ছেন।

হাতিবান্ধার কৃষক জব্বার, খালেক ও তমেজ উদ্দিন জানান, মাত্র ১৫/২০ দিন বয়সের আমন ধানের গাছ টানা নয় দিন ধরে পানির নিচে থাকায় পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষেতে কোন গাছ নেই। আছে কাদা মাটি আর পানি। নতুন করে রোপণ করার মতো ধানের চারা গাছও নেই। মাঠের সঙ্গে এবার গোলাও ফাঁকা রয়ে যাবে তাদের। আগামী দিনে পরিবার পরিজনের খাদ্য নিয়েও চিন্তায় রয়েছেন তারা।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকায় ধানের জমি তলিয়ে গেছে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকায় ধানের জমি তলিয়ে গেছে। ছবি: প্রিয়.কম

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষক জহুরুল ইসালাম ও ইসাহাক আলী জানান, ধরলার স্রোতে তাদের আমনখেত টানা আট দিন ধরে ডুবে আছে বন্যার পানিতে। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার মতো কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই তাদের। আগামী ধান মৌসুম না আসা পর্যন্ত কৃষকদের খাদ্য যোগান দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, স্থানীয় এনজিওতে ঋন নিয়ে ও গোলার সব শেষ চার মণ ধান বিক্রি করে ৬ বিঘা বর্গা জমিতে আমন চাষ করেন। চারা লাগানোর ১৫ দিনের মাথায় ডুবে যায়। নয় দিনেও পুরোপুরি জেগে উঠেনি তার ক্ষেত। এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নিজের ভাতের চিন্তার করছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৮২ হাজার ২৫৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৮৪ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। এসব জমি থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮১১ মে. টন চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধানের চারা রোপণের এক মাসের মধ্যে গত বন্যার পানিতে ডুবেছে ৩১ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত। যার মধ্যে ৮ হাজার ৯৫৫ হেক্টর এখনও পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে।

এ ছাড়াও ৭১০ হেক্টর জমির সবজি খেতের মধ্যে গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২৬৫ হেক্টর জমি। তবে কৃষি বিভাগের এই মনগড়া তথ্য মানতে নারাজ জেলার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। তাদের দাবি কৃষি বিভাগের তথ্যের চেয়ে দ্বিগুণ ক্ষতি হয়েছে তাদের। কৃষি বিভাগ দায় এড়াতে কৌশলে ক্ষতিগ্রস্থদের মনগড়া তালিকা করেছেন। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক বিধু ভুষন রায় জানান, টানা নয়দিন পানির নিচে থাকায় আমন ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা করে তাদের ক্ষতি পুরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানি পুরোপুরি না সড়ায় ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা যাচ্ছে না। ধান গাছের শিকড় থাকলে কুড়ি গজাবে। আপাতত কচুরিপানা ও ধান গাছে লেগে থাকা বন্যার কাদা মাটি ধুয়ে দেয়া পরামর্শ দেন তিনি।