কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সরকারের ‘ইন্টারনেট প্রকল্পে দুর্নীতি’ নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়েছে। ছবি: প্রিয়.কম

সরকারের ‘ইন্টারনেট প্রকল্পে দুর্নীতি’ নিয়ে তুলকালাম

এম. মিজানুর রহমান সোহেল
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০১৭, ১৪:৫৫
আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০১৭, ১৪:৫৫

(প্রিয়.কম) সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘ইনফো সরকার-৩’ প্রকল্পে উচ্চগতির ইন্টারনেট নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) বলছে, ‘অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়, এ নিয়ে বিভ্রান্তিরও সুযোগ নেই।’

২৩ আগস্ট বুধবার ঢাকার হোটেল লা ভিঞ্চিতে সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবির সভাপতি এম এ হাকিম অভিযোগ করে বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার কার্যাদেশ আইএসপিকে না দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দুটি নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ককে (এনটিটিএন) দেওয়ার প্রস্তাবে ‘মারাত্মক ঝুঁকিতে’ পড়তে যাচ্ছে এ খাত।’

এম এ হাকিম অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘একনেকের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে ৮টি পর্যায়ের দরপত্রকে দুটি ভাগে দিয়ে দিয়েছে বিসিসি। আর যোগাসাজশের মাধ্যমে সামিট কমিউনিকেশন ও ফাইবার অ্যাট হোম নামে দুটি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান এ দরপত্র হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার এখতিয়ার না থাকলেও এ দরপত্রের মাধ্যমে তারা বিধি বহির্ভূত এ সুযোগটি পেয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প জুড়ে থাকছে অনেক অনিয়ম।’

জানা গেছে, গতবছর ২৩ ডিসেম্বর একনেকের অনুমোদন পাওয়া ‘ইনফো সরকার-৩’ প্রকল্পের আওতায় সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারকে ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে (বিসিসি); ব্যয় ধরা হয়েছে মোট এক হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবির সভাপতি হাকিম বলেন, ‘গত ৯ অগাস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রকল্পের জন্য দুটি ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। এর ফলে প্রতিষ্ঠান দুটি সরকারি খরচে ইউনিয়নগুলোতে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করার কার্যাদেশ পাবে এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে দুই লাখ সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার সুযোগ পাবে।’

আইএসপিএবি বলছে, ‘সব চূড়ান্ত হলে সামিট কমিউনিকেশনস ও ফাইবার অ্যাট হোম মোট ৩৭৮ কোটি ৪৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় এ কাজ করবে। প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান, দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন, কার্যাদেশ অনুমোদনের সুপারিশ এবং কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কাজের আওতা নির্ধারণে চারটি সুনির্দিষ্ট অনিয়ম হয়েছে।’

আইএসপিএবির অভিযোগ, ‘একনেক থেকে এ প্রকল্পকে ৮টি পর্যায়ে দরপত্র আহ্বানের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু একনেকে সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে দুটি পর্যায়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর এ দুটি পর্যায়েও কেবল দুটি প্রতিষ্ঠানই দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে সামিট কমিউনিকেশনস ১৩০৭টি ও ফাইবার অ্যাট হোম ১২৯৩টি ইউনিয়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। একনেকের পূর্ব-অনুমোদন ব্যতিত, দুটি প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার্থে ৮টির স্থলে ২টি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান বিসিসির এখতিয়ার বহির্ভূত এবং সরকারের কার্যপ্রণালী-বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।’

হাকিম বলেন, ‘এ দরপত্রের আওতায় ২০ বছরের জন্য কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ এনটিটিএন লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তাদের লাইসেন্সের মেয়াদের বাইরে কোনো চুক্তি করতে পারবে না। কিন্তু ২০ বছরের মেয়াদ না থাকা সত্বেও এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানদুটি এ কাজের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একটির লাইসেন্সের মেয়াদ প্রায় সাড়ে ছয় বছর এবং অন্যটির মেয়ার প্রায় সাতে সাতবছর। সুতরাং বিসিসি লাইসেন্সের শর্ত না মেনে প্রতিষ্ঠান দুটিকে কীভাবে ২০ বছরের কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইনফো সরকার তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় দেশে দুই হাজার ৬০০ ইউনিয়নে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি প্রদান করা হবে। এ লক্ষ্যে ডিপিপি অনুসরণ করে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। দেশে বিদ্যমান এনটিটিএন অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ব্যাকবোন ব্যবহার করে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ সংক্রান্ত ডিপিপি’র নির্দেশনা অনুসরণ করে এনটিটিএনদের মাধ্যমে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।’ 

বিসিসি বলছে, ‘এনটিটিএনদের বিদ্যমান নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে কাজের সুবিধার্থে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ৮টি প্যাকেজকে ২টি প্যাকেজে রূপান্তর করা হয়। এ রূপান্তরে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় করা হয়নি। পরবর্তিতে ডিপিপি সংশোধনকালে এটি সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট দরদাতাই দর নির্ধারণ করে থাকে। তাছাড়া দরপত্র আহবান ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় পিপিআর ২০০৮ এর বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে এবং অনুমোদনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দেশে বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান আইএসপি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যান্ডউইথ বিক্রয় করে থাকে এবং আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। ইনফো সরকার তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও উক্ত নিয়ম অনুসরণ করা হবে। এতে বিভ্রান্ত হওয়োর কোনো সুযোগ নেই। এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলো নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করবে আর গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করবে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো।’

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান দুটি ২০ বছর অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, আপগ্রেডেশনসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করার প্রস্তাব করেছে। পরবর্তীতে সকল বিধি-বিধান অনুসরণ করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান দুটি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যান্ডউইথ বিক্রয় করবে। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায় প্রকল্পে পিপিআর ২০০৮ সহ সরকারের অন্যান্য বিদ্যমান আইন, নীতিমালা ও বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে।’

প্রিয় টেক/আশরাফ