কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

নিজের চাষাবাদ করা জমির পরিচর্যা করছেন একজন কৃষক। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাটে সবজি চাষের সফলতা ভুলিয়েছে বন্যার দুঃখ

মিজানুর রহমান মিন্টু
কন্ট্রিবিউটর, জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৪০
আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৪০

(প্রিয়.কম) বন্যা খুব কাঁদিয়েছিল তাদের। একে একে কেড়ে নিচ্ছিলো সব স্বপ্ন। বন্যার প্রবল প্রতাপে কেউ পাকা ফসল হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন গোয়ালের আদুরে গরু। যার গেছে তিনিই তো হাড়ে হাড়ে টের পান হারানোর যন্ত্রণা। তবে, কৃষকদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো অল্পতেই তুষ্ট থাকা। কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া বন্যার ছোবলে সর্বস্বান্ত হওয়ার পরে দমে না গিয়ে পলিজমা মাটিতে আগাম শীতের সবজি চাষে এখন সফলতার মুখ দেখছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। লাভবান হয়ে ভুলতে বসেছেন অল্প কিছুদিন আগে সর্বস্ব হারানোর বেদনা।

বন্যার ফলে জমা পলিতে চাষ করা আগাম শীতের বিভিন্ন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। ইতিমধ্যে বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে সবজি। বাজার দর ভালো থাকায় চাষীরা লাভের মুখ দেখছেন।

কৃষকরা জানান, বেগুন, বাধা কপি, মুলা, সিম থেকে শুরু করে শীতের আগাম সবজিতে ভরে গেছে জয়পুরহাটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার নতুনহাট। পরপর দু’বারের বন্যায় কৃষকের হতাশা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে সবজির বাম্পার ফলন। ভালো মূল্য পাওয়ায় লাভের পরিমাণও আশাব্যঞ্জক।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমের আওতায় জেলায় সবজি চাষে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৪০ হেক্টর।ইতিমধ্যে প্রায় ২ হাজার ২৬৫ হেক্টর অর্জিত হয়েছে।

জয়পুরহাট জেলায় বন্যার কারণে ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাট জেলায় বন্যার কারণে ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া বেগুন ৬৮৭ হেক্টর, মরিচ ৪৩২ হেক্টর, তিল ১০৫ হেক্টর, বরবটি ১০ হেক্টর, ঝিংগা ৮০ হেক্টর, কাকরোল ৪০ হেক্টর, চিচিংগা ৫৫ হেক্টর, চাল কুমড়া ১৭৫ হেক্টর, কুমড়া ৩৮০ হেক্টর, ডাটা ২৪০ হেক্টর, পুঁইশাক ২২৫ হেক্টর, লাল শাক ২৮০ হেক্টর, কলমী শাক ৮৫ হেক্টর, শষা ২৬৫ হেক্টর, ফুলকপি ১৬ হেক্টর, বাধাকপি ১২ হেক্টর, মূলা ৪০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

লতিরাজ কচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ হাজার ৭শ ৭৫ হেক্টর জমি। সব মিলে এবার সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। যা জেলার সবজি চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিপণন করা যাবে। 

প্রসঙ্গত, এবার জয়পুরহাট জেলায় বন্যার ছোবলে ধান এবং আগাম জাতের শাক সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। কৃষকরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন করে সবজি চাষে ঝাপিয়ে পড়েন। তাতে সফলও হয়েছেন কৃষকরা। এবার বাজারে সবজির দাম বেশি থাকায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

জেলার আক্কেলপুর উপজেলার শন্তা গ্রামের কৃষক হান্নান মন্ডল দুই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি।

একই গ্রামের কৃষক আলামিন হোসেন প্রিয়.কমকে বলেন, ১ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছেন তিনি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে।

পূর্ব পারুলিয়া গ্রামের এন্তাজ আলী প্রিয়.কমকে জানান, নিজের দেড় বিঘা জমি সহ ওই এলাকায় প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে এবার ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বলার মতো।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলাম প্রিয়.কমকে বলেন, সদর উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যেই চাষী জমির পরিমাণ প্রায় ১২শ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে।

জেলার বড় সবজি পাইকারি বাজার নতুনহাটে ঘুরে দেখা যায়, হাটে প্রতি কেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, বাধাকপি ৬০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, কাকরোল ৪০ টাকা, ঢেঁরস ৪৫ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা লতিরাজ কচু ৩৫ টাকা, পটল ৩৫ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, করলা ৪০ টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ প্রিয়.কমকে বলেন, জয়পুরহাটের কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানকার সবজির মান খুব ভালো। যার কারণে জয়পুরহাটে উৎপাদিত সবজির চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে সবজি নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রিয় সংবাদ/আদিল