কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মামুনুর রশিদ। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম।

মঞ্চ নাটকের জন্য একটি পয়সা কাউকে দিতে পারি না:মামুনুর রশিদ

সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:২৬
আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:২৬

(প্রিয়.কমফুলের চেয়ে সুন্দর দ্বিতীয় কোনো বস্তু পৃথিবীতে হয়তো আবিষ্কৃত হয়নি, আর তাই শৈল্পিক ব্যক্তিরা ফুলকেই নিজেদের সকল কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে ভালোবাসেন। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে আরণ্যক নাট্যদল সর্বপ্রথম মঞ্চ নাটক পরিবেশন করে। ১৯৭২ সালে সংগঠিত এ নাট্য দলটি আগামীকাল ৪৫ বছরে পা রাখছে। তারা তাদের এ ৪৫ বছর পূর্তিকে পুষ্প ও মঙ্গল উৎসব শিরোনামে পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আগামীকাল বিকাল সাড়ে পাঁচটায় শিল্পকলা একাডেমীর নন্দন মঞ্চে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

কিন্তু কেন এ নামকরণ? আরণ্যক নাট্য দল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে শিল্পের চাষই করা হোক না কেন, শেষ কথায় তা শিল্পভুবনে একটি ফুল হয়েই ফুটে থাকে। তেমনি ৪৫ বছর যাবত সেই ফুলের চাষই করে আসছে আরণ্যক, তাতে যুক্ত হয়েছে মঙ্গল কামনা। তাই এবারের উৎসবের নামকরণ পুষ্প ও মঙ্গল উৎসব। আরণ্যকের ৪৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রিয়.কম কথা বলেছে দলটির অন্যতম কাণ্ডারি, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চ আন্দোলনের পথিকৃত এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদের সঙ্গে।

প্রিয়.কম: মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে মুনীর চৌধুরীর কবর নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে আরণ্যক নাট্যদলর যাত্রা শুরু হয়, শুরুর গল্পটা কী রকম ছিল?

মামুনুর রশিদ: আমাদের তো একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল যে দেশ স্বাধীন হবে। কারণ দেশ স্বাধীনের আগে আমাদের উপর এত বাধা-কানুন ছিল যে আমরা ঠিক মতো নাটক প্র্যাকটিস করতে পারতাম না, মঞ্চায়িত করতে পারতাম না। ফলে স্বাধীন দেশে আমরা স্বাধীনভাবে নাট্য চর্চা শুরু করতে চাইলাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা খুব দ্রুত সংগঠিত হয়ে ৭২ এর ফেব্রুয়ারি মাসেই আরণ্যক নাট্যদল সংগঠিত করলাম। ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ আমরা ‘কবর’ নাটকটি মঞ্চায়িত করে নাট্য যাত্রা শুরু করলাম। সে সময় আমাদের সাথে ছিলেন আলী যাকের, সুভাষ দত্ত, ড. এনামুল হকসহ আরো অনেকেই।

প্রিয়.কম: স্বাধীনতার পর, স্বাধীনতার চেতনা মঞ্চে কতটা উপস্থাপিত হচ্ছে?

মামুনুর রশিদ: পুরোটাই তো হচ্ছে। অন্যান্য মাধ্যমে যতটা না হচ্ছে, আমি তো মনে করি স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে শুরু করে সব কিছুই থিয়েটারে উপস্থাপিত হচ্ছে আরো অনেক বেশি গভীরভাবে।

প্রিয়.কম: অভিনয়শিল্পী তৈরির জন্য মঞ্চ নাটক একটি বিরাট মাধ্যম, কিন্তু বর্তমান সময়ে মঞ্চ নাটকের প্রতি তরুণ অভিনয়শিল্পীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন কী?

মামুনুর রশিদ: অবশ্যই। অভিনয়শিল্পী তৈরির ক্ষেত্রে মঞ্চের ভূমিকা বিশাল। কিন্তু আপনি যেটা বলছেন যে তরুণ শিল্পীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে, তা না। মঞ্চ নাটকে অভিনয় করার জন্য শিল্পীদের যে আকাঙ্ক্ষা, তার জন্য যে হল বা পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন- সেটা ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না। এই কারণে আমরা মঞ্চের শিল্পীদের হারাচ্ছি। এখন যদি তিন মাস বা ছয় মাসের শিডিউল দিয়ে দেওয়া হতো তাহলে কিন্তু এই শিল্পীগুলোকে আমরা হারাতাম না।

প্রিয়.কম: এতে টেলিভিশন নাটকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে কী?

মামুনুর রশিদ: হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই পড়ছে। মঞ্চ এবং টেলিভিশন দুই নাটকেই এর প্রভাব পড়ছে।

প্রিয়.কম: আপনারা স্বাধীনতার পরপরই মঞ্চ নাটক শুরু করলেন, কিন্তু বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক ঢাকার কয়েকটি অডিটোরিয়ামে গণ্ডি ছাড়িয়ে তেমন একটা বিস্তার লাভ কেন করছে না?

মামুনুর রশিদ: না, কথাটা পুরোপুরি বোধহয় ঠিক নয়। ঢাকার বাইরেও আছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরসহ আরো বেশ কয়েক জায়গায় বিস্তার লাভ করেছে। আপনি শুনলে অবাক হয়ে যাবেন যে যখন আমরা ঢাকার বাইরে যাই, আমি দেখেছি যে বিশাল সংখ্যক একটা লোক ইন্ডিয়ান টেলিভিশন সিরিজ ছেড়ে মঞ্চ নাটক দেখতে চলে আসেন।

প্রিয়.কম: থিয়েটারের প্রসঙ্গ উঠলেই ঘুরে ফিরে কয়েকটি দলের কথাই কেন আসে?

মামুনুর রশিদ: সেটা তো কিছু করার নাই, আসবেই। অন্য দলের নাটকগুলো দর্শকরা ঠিক মতো দেখেন না, ফলে এই কারণে কয়েকটা দলের কথায় ঘুরে ফিরে আসবে এবং আসছে।

প্রিয়.কম: মঞ্চ নাটকে দর্শকের সংখ্যা বরাবরই সীমিত ছিল, কিন্তু সেই সীমিত সংখ্যকও এখন দেখা যাচ্ছে না, আগ্রহে কেমন যেন একটা ভাটা পড়েছে...

মামুনুর রশিদ: তিনটা হল মাত্র আমাদের। সেগুলো হাউজফুল হওয়া উচিত। কিন্তু আমার মনে হয় হলের সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। উত্তরাতে একটা হল দরকার, মিরপুরে দরকার, নারায়ণগঞ্জে একটা হল হওয়া উচিত। তখন কিন্তু এই সমস্যাগুলো মিটে যাবে।

প্রিয়.কম: সেক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন?

মামুনুর রশিদ: আমরা তো সরকারকে অসংখ্যবার হল সংকট নিয়ে বলেছি; তারা বরাবরই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন- করছি, কিন্তু হচ্ছে না। এখানে আমার খুব দুঃখ রয়ে গেছে।

প্রিয়.কম: বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের দর্শক শহরের শিক্ষিত-মধ্যবিত্তের মধ্যেই কেন সীমাবদ্ধ?

মামুনুর রশিদ: মঞ্চনাটকের দর্শক তা-ই হবে, মধ্যবিত্ত দর্শকই হবে। তবে পথনাটক যেটা করি, সেখানে কিন্তু বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকেন।

প্রিয়.কম: বাণিজ্যিক কারণে কি মঞ্চ নাটক কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে?

মামুনুর রশিদ: পিছিয়ে তো পড়বেই। যেখানে আমরা মঞ্চ নাটকের জন্য একটি পয়সা কাউকে দিতে পারি না, সেখানে টেলিভিশনে একজন অভিনেতা কমপক্ষে এক হাজার টাকা পান- এ ব্যাপারগুলো তো বিবেচনা করতে হবে। আমরা সরকারকে বিভিন্ন সময় বলেছি মঞ্চ নাটক কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট বেতন বরাদ্দ করার জন্য, সেটা তো তারা করছেন না।

প্রিয়.কম: মঞ্চ নাটকের বর্তমান সংকটগুলো কী বলে মনে হয় আপনার?

মামুনুর রশিদ: প্রথমত আমাদের হল নেই, হলের স্বল্পতা একটা বিরাট সংকট। দ্বিতীয়ত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নেই, এটাও একটি বড় ব্যাপার। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ব্যতীত আমাদের দেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও মঞ্চ নাটক হয় না।

প্রিয়.কম: কাল তো আপনাদের দলের ৪৫ বছর পূর্তি, কি আয়োজন থাকছে এ উপলক্ষে?

মামুনুর রশিদ: আরণ্যকের ৪৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা কাল থেকে সপ্তাহব্যাপী পুষ্প ও মঙ্গল উৎসব উদযাপন করব। এ সাত দিন আমরা আরণ্যকের প্রতিনিধিত্বমূলক নাটকগুলো মঞ্চায়িত করব, এ ছাড়াও নাটকের পাশাপাশি নাটক নিয়ে আড্ডা, পদক প্রদানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানও থাকছে।

প্রিয় বিনোদন/গোরা