কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

পবিত্র কুরআনের নকশা। ছবি : সংগৃহীত

আপনিও কীভাবে বুঝবেন পবিত্র কুরআন আসমানী কিতাব?

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৩
আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৩

(প্রিয়.কম) কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলের (সা.) উপর নাজিলকৃত একটি শাশ্বত অলৌকিক গ্রন্থ। নবীদের অলৌকিক বিষয়গুলো তাদের মৃত্যুর সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় কিন্তু মুহাম্মাদের (সা.) এই অলৌকিক বিষয়টি এখনো আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক এই বিষয়ে ইরশাদ করেছেন, ‘বাতিল না পারে সামনে থেকে এর ওপর চড়াও হতে, না পারে পেছন থেকে। এটা মহাজ্ঞানী ও পরম প্রশংসিত সত্ত্বার নাজিলকৃত জিনিস। (সূরা- হা-মীম আস সাজদাহ, আয়াত-৪২)

পবিত্র কুরআনে মাহন আল্লাহপাক আরো বলেছেন, ‘আর যদি মুশরিকদের কোনো ব্যক্তি আশ্রয় প্রার্থনা করে তোমার কাছে আসতে চায় (যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে) তাহলে তাকে আল্লাহর কালাম শোনা পর্যন্ত আশ্রয় দাও, তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌছে দাও। এরা অজ্ঞ বলেই এটা করা উচিত। (সূরা- তওবা, আয়াত-৬)

পবিত্র কুরআন আল্লাহ মহানের কালাম। সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব। কিন্তু কতক মানুষ এই কুরআনকে আসমানী কিতাব হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। এমন মানুষ যেমন এখন আছে, রাসূলের (সা.) যুগেও তেমন ছিলো। আসমানী কিতাব হিসেবে কুরআনকে বিশ্বাস করা ইমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পবিত্র কুরআনকে আসমানী কিতাব হিসেবে গ্রহণ বা বিশ্বাস না করলে ইমান থাকবে না। সুতরাং প্রথম কথা হচ্ছে বিনা বিধায় পবিত্র কুরআনকে আসমানী কিতাব হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে এবং গ্রহণ করতে হবে। এরপরও যাদের মনে এই বিষয়ে সন্দেহ রয়ে যাবে তাদের জন্য পাঁচটি যুক্তি পেশ করা হলো-        

১. মুশরিকরা পবিত্র কুরআনের মতো বা সমমানের একটি আয়াত নাজিল বা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে : আল্লাহপাক তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন যে তারা পারলে কুরআনের মতো একটি আয়াত অথবা একটি সুরা নাজিল করে দেখাক। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। সেই সময়ের বেশিরভাগ লোকই ছিলো আরবী ভাষার পণ্ডিত এবং তাদের হাতেই ছিলো আরবী ভাষার সাহিত্যগত আধিপত্য। কিন্তু তারা কেউই কুরআনের মতো কোনো সুরা বা কোনো একটি আয়াত নাজিল করাতে বা তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। সুতরাং মানুষের এই অক্ষমতা বা অপারগতার বিষয়টি দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, এই কুরআন কোনো মানুষের পক্ষ থেকে আসা বা মানুষের তৈরি কোনো কিতাব নয়। বরং এটা হচ্ছে মহান প্রতিপালন আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা আসমানী কিতাব।

২. কুরআনে অনেক বিষয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে হুবহু মিলে গেছে বা যাচ্ছে : যেমন পারসিয়ানরা তাদের এক যুদ্ধে বাইজান্টাইনকে পরাজিত করেছিল। কুরআন এই পরাজয়ের কথা বলেছিল যে বাইজান্টাইনরা পারসিয়ানকে পরাজিত করবে এবং এটা সত্যি সত্যিই ঘটেছিলো। এইভাবে ভবিষ্যৎবাণী করা এবং তা হুবহু মিলে যাওয়ার দ্বারা প্রমাণিত হয় এটা কোনো মানব রচিত গ্রন্থ নয় বরং আসমানী কিতাব।

৩. কুরআন এমন কিছু বিষয়ের আলোচনা আছে, যা চৌদ্দশ বছর পরে আবিষ্কার হয়েছে : নদীর মিঠা পানি ও সমুদ্রের নোনা পানির মাঝে একটি পর্দা আছে। এই বিষয়ে আল্লাহপাক চৌদ্দশত বছর আগে কুরআনে ঘোষণা দিয়ে রাখলেও মানুষ সেটা আবিষ্কার করেছে চৌদ্দশত বছর পরে। মহান আল্লাহপাক কুরআনে বলেছেন, ‘দুটি সমুদ্রকে তিনি পরস্পর মিলিত হতে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে একটি পর্দা আড়াল হয়ে আছে, যা তারা অতিক্রম করে না। ( সূরা- আর রহমান, আয়াত- ১৯-২০)

৪. কুরআন পড়লে মানুষ হৃদয়ে শান্তি অনুভূত হয় : এটা এমন একটা বিষয় যা শুধু কুরআনের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। মানুষের লেখা পড়ে এমনটা হওয়া সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক এই বিষয়ে বলেছেন, ‘যারা (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে তারা বলে, এ ব্যক্তির কাছে এর রবের পক্ষ থেকে কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি (সূরা- আর রাদ, আয়াত- ২৮)

৫. কুরআন হলো যাবতীয় মানসিক রাগের নিরাময় : যারা এ কুরআনকে নিজেদের পথপ্রদর্শক এবং নিজেদের জন্য আইনের কিতাব বলে মেনে নেয়, তাদের জন্য তো এটি আল্লাহর রহমত এবং তাদের যাবতীয় মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক নৈতিক ও তামাদ্দুনিক রোগের নিরাময়। কিন্তু যেসব জালেম একে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করে এ কুরআন তাদেরকে এর নাযিল হবার বা একে জানার আগে তারা যে অবস্থায় ছিল তার ওপরও টিকে থাকতে দেয় না।  বরং তাদেরকে আরো বেশী ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দেয়। এর কারণ, যতদিন কুরআন আসেনি অথবা যতদিন তারা কুরআনের সাথে পরিচিত হয়নি ততদিন তাদের ক্ষতি ছিল নিছক মূর্খতা ও অজ্ঞতার ক্ষতি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, আমি এ কুরআনের অবতরণ প্রক্রিয়ায় এমন সব বিষয় অবতীর্ণ করছি যা মুমিনদের জন্য নিরাময় ও রহমত এবং জালেমদের জন্য ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না। (বনী ইসরাঈল: ৮২) 

উল্লেখিত পাঁটি বিষয়ের যৌক্তির উত্তর দিতে গেলে অবশ্যই বলতে হয়- পব্ত্রি কুরআন মানব রচিত কোনো গ্রন্থ নয় বরং এটি আসমানী কিতাব।

সূত্র : মুসলিমস্টোরিজ.টপ