আফ্রোদিতির অন্যতম জনপ্রিয় একটি আংটি। ছবি কৃতজ্ঞতা: আফ্রোদিতি
সকল শ্রেণীর ক্রেতার কথা মাথায় রেখেই পণ্য তৈরি করে থাকি: তরু
আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:০২
(প্রিয়.কম) তরু সবসময় চাইতেন একেবারেই নিজের ‘কিছু একটা’ করার জন্য। সেই নিজের কিছুটা কী হবে সেটা নিয়ে যদিও খুব পরিষ্কার ধারণা কখনোই ছিল না তার। হুট করে একদিন খেয়াল করলেন হাতে তৈরি বিভিন্ন গহনা তৈরির প্রতি আগ্রহ কাজ করছে। কিন্তু শুধু আগ্রহ থাকলেই তো আর হবে না। গহনা তৈরি করা জানতে হবে, কারোর কাছ থেকে নিখুঁত গহনা তৈরি করা শিখতে হবে। তরু’র কাছের বান্ধবী সামিহা একজন ক্রাফটার। তার কাছ থেকেই গহনা তৈরি শেখার হাতেখড়ি হয়। পরবর্তিতে তার অনুপ্রেরণা ও সাহসেই শুরু হয় ‘আফ্রোদিতি’র পদযাত্রা।
অনলাইন ভিত্তিক গহনা ও ক্রাফট শপ আফ্রোদিতির কর্ণধার মুনতাহা তাবাসসুম তরু’র একেবারেই নিজস্ব কিছু গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২৩ শে মার্চ পথচলা শুরু হয় নিজের কাজ নিয়ে। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়ছেন। সামনেই তার ফাইনাল পরীক্ষা। তাই আফ্রোদিতির কাজের পাশাপাশি রয়েছে পড়ালেখার চাপ। তবে দুটো কাজই চলছে সমানতালে।
আগেই বলা হয়েছে, হাতে তৈরি গহনা দিয়েই এই যাত্রা শুরু হয়েছে এই অনলাইন ভিত্তিক শপের। স্বাভাবিকভাবেই আফ্রোদিতির ৯০ শতাংশ পণ্যই তৈরি করা হয় হাতে। বিভিন্ন রকম উপাদান দিয়ে যত্ন নিয়ে তৈরি করা হয় এক একটি পণ্য। এক একটি পণ্য তৈরিতে সময় প্রয়োজন হয় একেক রকম। কোন গহনা তৈরিতে মাত্র ৩০ মিনিট সময়ই যথেষ্ট। আবার কখনো ৫-৬ ঘন্টা সময়ও প্রয়োজন হয় শুধু একটি পণ্য তৈরিতেই! সময়ের এই ব্যাপারটি নির্ভর করে গহনার ধরণের উপরে।
আফ্রোদিতিতে মেয়েদের জন্য হাতে তৈরি কণ্ঠহার, দুল, আংটি, ব্রেসলেট, পায়েল, হিজাব পিন এবং ছেলেদের জন্য চাবির রিং ও ইম্পোর্টেড হাতঘড়ি পাওয়া যায়। সকল ধরণের পণ্যের মাঝে সর্বাধিক বিক্রিত ও ক্রেতা পছন্দ পণ্য হলো কাঠের পুতির পায়েল। এছাড়াও সাদা মুক্তা ও অ্যান্টিক পেন্ডেন্টের মালাও ক্রেতাদের মাঝে ভীষণ জনপ্রিয়। সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে, তরু তার ক্রেতাদের সামর্থ্যের উপর নির্ভর করেই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে থাকেন।
তিনি বলেন, "আমি সকল শ্রেণীর ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই পণ্য তৈরি করে থাকি। যেন সকলেই তাদের পছন্দ অনুযায়ী গহনা কিনতে পারেন এবং সন্তুষ্ট থাকেন। যে কারণে, আফ্রোদিতিতে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকার পণ্য পাওয়া যায়।" আফ্রোদিতির ফেসবুক পেইজ ঘুরে দেখা গেলো ভুল বলেননি তরু। ক্রেতাদের সন্তুষ্টির ছাপ পাওয়া গেলো আফ্রোদিতির পেইজের ৫ স্টার রেটিং দেখে। একইসাথে পেইজের লাইক সংখ্যা ৫০০০ এর বেশী।
তরু’র কাজের পথটি খুব একটা মসৃণ নয়। বলতে গেলে অনেকাংশে সমস্যাবহুল। চট্টগ্রাম শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে বসবাস তার। টাউনের সাথে অনেক লম্বা দূরত্বের জন্য পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে বেশীরভাগ সময় প্রতিকুল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এই সকল ঝামেলা ও প্রতিকুলতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই আফ্রোদিতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তরু প্রতিদিন। নিজে হাতে তৈরি করছেন চমৎকার সকল গহনা এবং ডেলিভারি দিচ্ছেন পুরো বাংলাদেশ জুড়েই।
ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা সকলের থাকে, তেমনই রয়েছে তরু’রও। আফ্রোদিতির জন্যে গহনা তৈরির আনন্দ এই সকল দুঃখ-কষ্ট ছাপিয়ে যায় বলে নিজের কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে ভালোবাসেন তিনি। ক্রেতারা যখন আফ্রোদিতির কাজ দেখে প্রশংসা করেন ও আনন্দিত হন, তখন কষ্ট-হতাশা নিমিষেই উবে যায়। প্রতিটি টুকরো টুকরো ভালোবাসা নিয়েই এগিয়ে যেতে চান তরু। তার ও আফ্রোদিতির এই চলার ক্ষেত্রে যারা তাকে অবিরাম অনুপ্রেরণা দেন তাদের নাম উল্লেখ করে তরু জানান, সামিহা, ফারিহা, জুঁই, অনিক এবং সাইদ ভাই প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে সাহায্য করে আসছেন। পাশাপাশি পরিবারের সকল সদস্য এবং বিশেষভাবে বাবা-মায়ের সমর্থন ও সাহায্য রয়েছে অবিরাম। তারা পাশে আছেন বলেই সফলভাবে সকল কিছু করতে পারছেন এবং তাদের ভালোবাসা ও সাহসের জন্যে আফ্রোদিতি আজকে এগিয়ে যেতে পারছে।
ইংরেজি সাহিত্যকে ভালবাসতে না পারলেও নিজের হাতে তৈরি গহনাকে ভালোবেসে ফেলেছেন ভীষণভাবে। যে কারণে আফ্রোদিতি নিয়ে স্বপ্ন তার আকাশছোঁয়া। পুরো দেশে তো বটেই দেশের বাইরেও আফ্রোদিতিকে নিয়ে যেতে চান তরু। গহনার দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে আফ্রোদিতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সংকল্প নিয়েই এগিয়ে যেতে চান ধীরেসুস্থে।
প্রিয় লাইফ/ আর বি