কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা। ছবি: প্রিয়.কম

‘গেলবার ঈদোত বয়লার কিনিচি, এবার কপালোত তাও নাই’

তোফায়েল হোসেন জাকির
কন্ট্রিবিউটর, গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১২:৫৩
আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১২:৫৩

(প্রিয়.কম) ‘গেলবার ঈদোত বয়লার কিনি ছওয়াগুলাক খিলাচি। এবার কপালোত তাও নাই।’ কথাগুলো দিনমজুর লতিফ মিয়ার। গাইবান্ধা জেলার প্রায় ৫ লাখ বানভাসি মানুষের মধ্যে বেশিরভাগের একই অবস্থা। গাইবান্ধার জেলার প্রায় ৫ লক্ষাধিক বন্যাকবলিত মানুষ সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। এ মানুষগুলোর মধ্যে নেই ঈদের আনন্দের আমেজ। ঈদের কোনো আমেজ নেই নদী পারের গ্রামে। দাদন ও ত্রাণনির্ভর জীবনে আনন্দের কোনো উপলক্ষ হতে পারেনি ঈদ।

আর মাত্র একদিন পরেই ঈদ। সারা দেশে ঈদ-উল আজহা উদযাপনের ব্যস্ততার কোন কমতি নাই। তবে গাইবান্ধায় প্রতি বছর ঈদের আনন্দ ছুঁয়ে গেলেও এবার তা কেড়ে নিয়েছে বন্যায়। বন্যার পানি কমে গেলেও সংগ্রাম থামেনি বন্যা দুর্গত মানুষের। কেউ ভিটেতে মাটি ভরাট করছেন। ঝুপড়ি বেঁধে থাকছেন। কেউ কেউ পুরনো ঘরে উঠেছেন ঠিকই। কিন্তু অনেক ঘরই নড়বড়ে, জরাজীর্ণ। ভিটে-মাটি স্যাঁতসেঁতে। পানিতে ভেসে গেছে কাপড়। ভেসে গেছে ধান, চাল, ঘরের আসবাব। ঘরে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নেই।

ঈদের জামাত আদায় করতে হবে অনেককেই ছেঁড়া জামা গায়ে দিয়ে। হাজার হাজার কৃষকের ফসলি ক্ষেত নষ্ট হওয়া অন্যান্য বছর কোরবানি দিলেও এবার কারো সামর্থ্য নেই। নিম্নবিত্তরা কাজের সন্ধানে নানা স্থানে ছুটলেও মধ্যবিত্তরা পড়েছেন বেকায়দায়। ঘাঘট পারের দিনমজুর আব্দুস ছালাম বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে কিছু চাল, চিঁড়া ও আলু পেয়েছেন। তাও শেষের দিকে।’ আর দিনমজুর লাল মিয়া জানান, এলাকায় কাজ নেই। কাজের খোঁজে নদী পার হয়ে বের হলেও তাও আবার কাজ পাওয়া যায় না।

আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যা দুর্গত মানুষ।

আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যা দুর্গত মানুষ। ছবি: প্রিয়.কম

গাইবান্ধা জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বানভাসী মানুষগুলো সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে এখন দিশেহারা। চারদিকে বিধ্বস্ত বন্যায় হারিয়েছেন ঘর-বাড়ি। হারিয়েছে ফসল। কেউবা হারিয়েছে,স্বজন। মৃত্যু হয়েছে বন্যায়। এখন এসব বানভাসি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের হৃদয়ে ধু,ধু শ্মশান। বিশুদ্ধ পানি আর একমুঠো খাবারের কষ্টে যেনো যায় যায় তাদের প্রাণ। এ অবস্থায় ঈদুল আজহার আমেজ নেই বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের। ক্ষতিগ্রস্থ অনেক মানুয়ের এবার হচ্ছেনা কোনো পশু কোরবানি।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি তৈরি করতে না পারায় অনেকে ফাঁকা জায়গায় রয়েছেন। বন্যায় তলিয়ে গেছে তার কষ্টার্জিত ফসল। এনজি’র কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে দেড় বিঘা জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছিলেন জাহিদুল ইসলাম। সবই তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। এখন চিন্তয় রাতে ঘুম আসে না তার। স্ত্রী-সন্তানের পেট ভরে দু’বেলা খেতে দিতে পারেন না। আর একদিন পরেই ঈদ। কিন্তু ঈদের আনন্দ নাই তার পরিবারে। শুধু জাহিদুল ইসলাম নয়, একই অবস্থায় হাজার হাজার পরিবার। এসব পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।

ঈদ যেন কোনো জানান দিতে পারেনি তাদের মনে। সর্বত্রই বেঁচে থাকার লড়াই করে চলেছেন বানভাসিরা। ঈদ আসছে এটুকই জানেন তারা। এর বেশি কোনো অনুভূতি নেই তাদের। জনপ্রতিনিধিরা জানান, লোকজন খাবার পাচ্ছে না। ফসল সব বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। ঘর-দুয়ার নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষ কুরবানির দিবি, নাকি ঘর দুয়ার মেরামত করিবি? একই অবস্থা এলাকার বেশিরভাগ মানুষের। গরিব-ধনী সবাইকে নিঃস্ব করে দিয়েছে বন্যা। বন্যার কারণে ঈদের আনন্দ থেকে বিরত হচ্ছেন এলাকার সকল শ্রেণির মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্থ বানভাসিদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনার কেউ নেই বলে তাদের অভিযোগ। তাদের দাবি একটাই, শুধু মুখে নয় সরকার যেন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, বন্যাদুর্গত মানুষদের বিভিন্ন সহায়তা অব্যহত আছে।

প্রিয় সংবাদ/শিরিন