সকল প্রকার কোমল পানীয় স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। ছবি: জুয়েল।
স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর এই খাবারগুলো লুকিয়ে আছে আপনার রান্নাঘরেই!
আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭, ২০:০৮
(প্রিয়কম) আমাদের প্রায় প্রত্যেকের রান্নাঘর ও ফ্রিজ খোঁজা হলে নিম্নে উল্লেখিত প্রতিটি খাদ্য উপাদানগুলোর কয়েকটি অবশ্যই পাওয়া যাবে। তার মূল কারণ এই সকল খাদ্য উপাদানের সহজলভ্যতা। খুব সহজেই বানিয়ে নেওয়া যায় অথবা বাসার নীচের দোকানে ঢুঁ মারলেই কিনতে পাওয়া যায় বলে প্রতিনিয়ত আমরা এই সকল খাদ্য উপাদান কিনছি ও খাচ্ছি। আসলে কি আমরা জানি, নিজেদের অজান্তেই শরীরের কত বড় ক্ষতি করে ফেলছি?
লেবাননে বসবাসকারি হোলিষ্টিক নিউট্রিশনিষ্ট জেনিফার ক্যানান তার পড়ালেখার মাঝেই খেয়াল করেন, খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেটা নিয়ে তেমনভাবে কোন কথাবার্তাই হয় না। বেশীরভাগ সময়ে খাদ্যের ক্যালোরি ও পুষ্টি উপাদানের উপরে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু কোন খাদ্য উপাদান কীভাবে তৈরি হচ্ছে এবং তাতে কী ধরণের উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা নিয়ে খুব একটা আলোচনা এবং উচ্চবাচ্য দেখা যায় না। জেনিফার এমন কিছু নিত্যদিনের পরিচিত খাদ্য উপাদানের নাম তুলে ধরেছেন যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যে কারণে দ্রুত সকলের এই সকল খাদ্য উপাদান গ্রহণ করা বন্ধ করা প্রয়োজন। জেনে নিন জেনিফারের দেওয়া যেই সকল খাদ্য উপাদানের নাম এবং সেই সকল খাদ্য উপাদান কেন গ্রহণ করা অনুচিত।
ইন্সট্যান্ট নুডলস
সকল ধরণের ইন্সট্যান্ট নুডুলস অনেক বেশী পরিমাণে প্রসেসড করা থাকে। এই সকল নুডলসে পুষ্টিগুণ একেবারেই থাকে না বললেই চলে। এর সাথে এতে থাকে অনেক বেশী পরিমাণে ফ্যাট, ক্যালোরি এবং সোডিয়াম। একইসাথে প্রস্তুতের সময়ে এতে ব্যবহার করা হয় প্রচুর পরিমাণে আর্টিফিসিয়াল রঙ, প্রিজারভেটিভ, অ্যাডেটিভস ও ফ্লেভার। যেমন: স্বাদ বর্ধনের জন্য ব্যবহার করা হয় মনোসোডিয়াম গ্লুকামেট (MSG), যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি উপাদান।
কমদামী চকলেট (এলাকার মুদি দোকানের চকলেট)
বাসার কাছে প্রায় প্রতিটি দোকানেই পাওয়া যায় ১০ টাকা কিংবা ২০ টাকার মজাদার চকলেট। এতো স্বল্প খরচে মজাদার চকলেট পাওয়া যায় বলে স্বাচ্ছন্দ্যে সেই সকল চকলেট কিনে নিজেরাও খাচ্ছি, বাচ্চাদের হাতেও তুলে দিচ্ছি। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছি, এত অল্প দামে কীভাবে চকলেট বিক্রি করা সম্ভব? লোকাল এই সকল চকলেতে আদতে কোন ধরনের প্রকৃত ‘চকলেট’ একেবারেই থাকে না। এগুলো মূলত তৈরি করা হয় প্রচুর পরিমাণে চিনি, প্রোটিনের থেকে নেওয়া কিছু পরিমাণে ফ্যাট থেকে। এছাড়াও, এই সকল চকলেটে থাকে পাম অয়েল, যেটা অনেক বেশী রিফাইন্ড এবং প্রসেসড একটি তেল। নিয়মিতভাবে এই সকল চকলেট গ্রহণের ফলে বেশ বড়সড় ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু করে থাকে।
কোমল পানীয়
যে কোন কোমল পানীয় হলো প্রসেসড খাবারের অন্যতম একটি উদাহরণ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আর্টিফিসিয়াল ফ্লেভার ও চিনি যা কোনভাবেই নিয়মিত ভাবে পান করা উচিৎ নয়।
মারজারিন
উদ্ভিজ মাখন কিংবা মাখনের বিকল্প উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় মারজারিন। এই খাদ্য উপাদানকে যদিও দারুণ স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে অভিহিত করা হয়, তবে এটিও অনেক বেশী প্রসেসড একটি খাবার। জেনে অবাক হবেন, মারজারিন তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সবচাইতে নিকৃষ্ট জাতীয় ফ্যাট- ট্র্যান্স ফ্যাট। যা মানুষের শরীরে বাজে কোলেষ্টেরল এর মাত্রা অনেক বেশী বাড়িয়ে দেয়।
সিরিয়াল (কর্নফ্লেক্স)
বাইরের দেশেই মূলত এই খাদ্য উপাদানটি সকালের নাস্তা হিসেবে অনেক বেশী ব্যবহৃত এবং প্রচলিত। তবে এখনকার সময়ে যে কোন সুপারশপেই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে সিরিয়াল। সহজলভ্য ও দ্রুত প্রস্তুত করা যায় বলে অনেকেই নিজের ও বাচ্চাদের সকালের নাস্তা হিসেবে ইদানিং সিরিয়াল খাওয়ার চল শুরু করেছেন। প্যাকেটের গায়ে এবং টিভি বিজ্ঞাপনে এই খাদ্য উপাদানকে অনেক বেশী স্বাস্থ্যকর হিসেবে দাবী করা হলেও সত্য হচ্ছে, যে কোন ক্যান্ডি বারের সমপরিমাণ চিনি রয়েছে সিরিয়ালে। নিশ্চয় জানেন, অনেক বেশী চিনিযুক্ত ক্যান্ডিবার সকালের নাস্তা হিসেবে খাওয়া ভালো নয়। সেক্ষেত্রে একই পরিমাণ চিনিযুক্ত সিরিয়াল খাওয়া কোনভাবেই স্বাস্থ্যকর হতে পারেনা।
ফ্যাট-ফ্রি খাদ্য উপাদান
ফ্যাট-ফ্রি খাদ্য উপাদানে প্রাকৃতিক ফ্যাট বাদ দিয়ে নকল এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তার চাইতেও বড় কথা হল, বেশীরভাগ ফ্যাট-ফ্রি খাদ্য উপাদানই অনেক বেশী চিনিযুক্ত হয়, যার পরিমাণ স্বাভাবিক ফ্যাটযুক্ত খাদ্যের চাইতেও বেশী।
আর্টিফিসিয়াল সুইটনার
শুধুমাত্র নামটাই বলে দিচ্ছে এর ধরণ! এই সকল ধরণের সুইটনার হয়ে থাকে আর্টিফিসিয়াল, প্রসেসড, যা রক্তে চিনির মাত্রায় বিপর্যয় ঘটিয়ে থাকে। যার ফলে উল্টো আরও চিনির প্রতি আসক্তি তৈরি হয়।
সময় বাঁচানোর জন্য সহজলভ্য খাবারের প্রতি সকলের আকর্ষন থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে সকল কিছু আগে নিজের সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। যে কারণে, উপরোক্ত প্রতি খাবার নিজেদের খাদ্যাভাস থেকে একেবারেই বাদ দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে প্রতিনিয়ত।
সূত্র: Curejoy
প্রিয় লাইফ/ আর বি