কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রকৃতির নির্মম প্রতিকূলতায় আবারও এ অঞ্চলের কৃষকরা শিকার হয়েছেন বন্যার। ছবি: প্রিয়.কম

নাটোরে বন্যায় ধানের ফলনে মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা, মাছ চাষীদের মাথায় হাত

তাপস কুমার
কন্ট্রিবিউটর, নাটোর
প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৪৮
আপডেট: ২২ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৪৮

(প্রিয়.কম) নাটোরে চারিদিকে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। পানি ঘর পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে। এমন বন্যা চলনবিলবাসী প্রত্যক্ষ করেননি আগে। গত এপ্রিলের শেষ দিকে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট অকাল বন্যার পানি এ অঞ্চলের কৃষকদের অভাবের সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে গেছে। কষ্টের ফসল নষ্ট হওয়ায় এখনও যাদের পরিশোধ হয়নি ঋণের টাকা, তারা নতুন করে আমন ধানে খুঁজে ফিরছিল দেনা পরিশোধের উপায়।

প্রকৃতির নির্মম প্রতিকূলতায় আবারও এ অঞ্চলের কৃষকরা শিকার হয়েছেন বন্যার। একদিকে কৃষকের ফসল নষ্ট, অন্যদিকে শত শত ঘেরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও চাষীরা। ফলে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরে সিংড়া এবং নলডাঙ্গা উপজেলায় এবার ধান উৎপাদন স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে কম উৎপাদনের আশঙ্কা করছেন চাষীরা।

সরেজমিনে সিংড়া ও নলডাঙ্গ উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আত্রাই ও বারনই নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট-স্থাপনাসহ তলিয়ে গেছে দুই উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান। চলতি বছর সিংড়া উপজেলায় ১৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ও ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান রোপন করা হয়।

কয়েকদিনের টানা বন্যায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমির আমন ধান সম্পূর্ণ নিমজ্জিত ও ৩৩০০ হেক্টর জমির ধান আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। আর নলডাঙ্গা উপজেলায় ৪৯৩ হেক্টর জমির মধ্যে রোপা আমন ৩৮৮ হেক্টর ও বোনা আমন ১০৫ হেক্টর এবং ৪৮০ হেক্টর জমির মধ্যে ১০৭ হেক্টর জমির আউশ ধান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

অন্যদিকে সিংড়া উপজেলায় প্রায় ৫০০টি পুকুর ও ২০০টি ঘেরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে যার আনুমানিক মূল্য ১২ কোটি টাকা। আর নলডাঙ্গা উপজলার পিপরুল, খাজুরা ও মাধনাগরে আনুমানিক ৬০টি পুকুর ও ৪০টি ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় ক্ষতির পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। পুকুর ও ঘেরে চাষ করা এই মাছ পানিতে ভেসে মুক্ত জলাশয়ে চলে আসায় চলনবিল ও হালতিবিলের যেকোনো জলাবদ্ধ জায়গায় ভেসে আসা মাছগুলো পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সিংড়ার বাজারগুলোতে মাছের সরবরাহ বেড়েছে ও দাম তুলনামূলকভাবে কমেছে। সিংড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি সিলভার কার্প বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। রুই, কাতল, পোনামাছসহ অনান্য মাছ ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন ও নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম প্রিয়.কম-কে জানান, বন্যার পানি নামার সাথে সাথে কৃষকদের জমিতে আগাম জাতের রবিশস্য চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর দুইবার উপজেলাদুটি অকাল বন্যার শিকার হওয়ায় ধানের উৎপাদন অন্য বছরগুলোর তুলনায় আশংকাজনক হারে কমে যাবে।

এদিকে, সিংড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী ও নলডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইব্রাহিম হামিদ শাহিন প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘চলনবিল ও হালতিবিলে মাছ ভেসে যাওয়ায় মূলত চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে মুক্ত জলাশয়ে মাছ ভেসে আসায় সার্বিকভাবে দুই বিলে মাছের পরিমাণ বেড়ে যাবে।’

প্রিয় সংবাদ/শান্ত