কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি সংগৃহীত

সরকারকে কাবু রাখতেই ‘ধর্মঘট-সন্ত্রাস’ - দৈনিক কালের কন্ঠ

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:০৪
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:০৪

ধর্মঘটের সময় রাস্তায় বিক্ষোভরত শ্রমিকরা। ফাইল ছবি। 

(প্রিয়.কম) সড়কপথের বেসরকারি পরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের গত চার দশকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি কোনো সরকার। উল্টো বিদেশি সংস্থাগুলোর পরামর্শে সড়ক বাড়িয়ে সরকারই এসব মালিক-শ্রমিকের ঔদ্ধত্যের খুঁটি আরো শক্ত করে তুলেছে। সরকারি অর্থে নির্মিত সড়কে রাষ্ট্রায়ত্ত বাস চালাতেও এখন চাঁদা দিতে হয় বেসরকারি পরিবহন নেতাদের। এ খাতের শ্রমিকরা দীর্ঘদিন সড়কে প্রাণহানি ঘটানোর মতো অপরাধ করেও কৌশলে রেহাই পেয়ে গেছে। পরিবহন শ্রমিকদের কিছু হলেই গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি আদালত রায় দিলেও ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের পরিবহন শ্রমিকরা এক হয়ে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। 

চালকের সাজা মওকুফ, আইন অমান্য করে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে গত আট মাসে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে ২১ বার ধর্মঘট করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। বুধবার দৈনিক কালের কন্ঠে ‘সরকারকে কাবু রাখতেই ‘ধর্মঘট-সন্ত্রাস’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়কে প্রাণহানি কমাতে সরকার উপযুক্ত সড়ক পরিবহন আইন করতে চাইলেও এক দশক ধরে তা পারছে না। সড়কে শৃঙ্খলার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও রাজধানীতে গাড়ি বন্ধ রেখে ধর্মঘট ডাকারও নজির রয়েছে। পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চার দশক আগে থেকেই ধর্মঘটের নামে এই নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে পরিবহন খাতের শ্রমিকরা। পেছন থেকে তাদের মদদ দেন পরিবহন মালিকরা।

সর্বশেষ, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর নিহতের ঘটনায় মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া বাসচালক জামির হোসেন এবং সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ট্রাকচালক মীর হোসেন মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

এর আগেও দেখা গেছে, আদালত যেকোনো শাস্তি দিলেই পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ির চাকা বন্ধ করে দেয়। আবার অদক্ষ চালকদের পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স না দিলে কিংবা নিষিদ্ধ নছিমন-করিমন রাস্তায় চলতে না দিলেও ধর্মঘট শুরু করে তারা। জনদুর্ভোগ কমাতে সরকার পরে দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিলে ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয়।

জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে বর্তমানে দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায় মামলা করা হয়। বিচারও হয় এ ধারায়ই। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় আগে ৩০৪ ধারায় বিচার করা হতো। ১৯৮৫ সালে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আন্দোলন করার পর ৩০৪ ধারায় বিচার বন্ধ হয়। ৩০৪ (খ) ধারায় শাস্তির পরিমাণ ছিল সাত বছরের কারাদণ্ড। তাও কমিয়ে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান করে ওই আইন সংশোধন করা হয়। কিন্তু কোনো সংশোধনীতেই বলা হয়নি যে ৩০৪ ধারায় চালকদের বিচার করা যাবে না। অথচ ১৯৮৫ সালের পর সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এ ধারায় কোনো মামলাই করা হয়নি।

এরশাদ সরকারের সময় একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের গাড়ি ছড়াকার বাপি শাহরিয়ারকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছিল। তারপর সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছিল। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য ১৯৯০ সালের আগেও এক বছর সাজার বিধান ছিল। ১৯৯০ সালের এক সংশোধনীতে সাজা কমিয়ে ছয় মাস করা হয়ছিল। জরিমানা কমিয়ে করা হয়ছিল ৫০০।

সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত মামলায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এটি লঘু আইন। আইনে দোষী চালকদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা উচিত। ১৯৮৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের একটি প্রস্তাবও তৈরি করেছিল। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের চাপে ওই প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। ১৯৮৮ সালের মার্চে রাজধানীর ফার্মগেটে জিপযাত্রী বিমানবাহিনীর তিন কর্মকর্তা বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। এরপর তৎকালীন সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। একপর্যায়ে বাসের চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপারের ফাঁসির রায়ও হয়। প্রতিবাদে সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ লাগাতার আন্দোলনে নামে। একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে দণ্ড মওকুফ করিয়ে নেওয়া হয়।

দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শতকরা ৮৩ ভাগ অপরাধী দুর্ঘটনার পরই পালিয়ে যায় কিংবা পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ থাকে। তার নেপথ্যে থাকে পরিবহন নেতা ও পুলিশের ঘুষ-চুক্তি।

প্রিয় সংবাদ/আজাদ