কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জাগ্রত চৌরঙ্গী। ছবি : সংগৃহীত

‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ : মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য

আফসানা সুমী
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৩৮
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:৩৮

(প্রিয়.কম) আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চ, ১৯৭১। ২৬ মার্চকে তাই আমরা স্বাধীনতা দিবস বলি। কিন্তু অন্যায়ের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ তো আরও আগেই শুরু হয়ে গেছে! ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বলে দিয়েছেন “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ... তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে…” ডাক যেমন এসে গেছে, দেয়ালে যেমন পিঠ ঠেকে গেছে প্রতি বাংলাদেশির তেমনি শুরুও হয়ে গিয়েছিল প্রতিরোধ।

পাক-হানাদার বাহিনী জানত এই দেশ আর বেশিদিন তাদের দখলে নেই। অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল তারা। ষড়যন্ত্র চলছিল বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্র করার। ১৫ মার্চ ১৯৭১-এর মধ্যে সকল অস্ত্র বেঙ্গল রেজিমেন্টের রাইফেল সদর দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বাঙালিরা স্পষ্টই ধরতে পেরেছিল পাকিস্তানিদের এই চাতুরী। আর তাই তারা অস্ত্র জমা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। 

পাকিস্তানের ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব দলবলসহ চলে আসেন জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ির দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যান্টনমেন্টে। দিনটি ছিল ১৯ মার্চ, ১৯৭১। খবর পেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জয়দেবপুর ও টঙ্গীর শ্রমিক-জনতা। তাদের যার কাছে যা ছিল তাই নিয়েই এগিয়ে আসেন তারা। চান্দনা-চৌরাস্তা ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ইট, গাছের গুঁড়ি, ঠেলাগাড়ি দিয়ে প্রায় ৪০/৫০টি ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। জয়দেবপুর বাজার বটতলায় বিশাল জমায়েত হয় সাধারণ জনতার। নেতৃত্বে ছিল মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ। জনতার হাতে ছিল লাঠি, রামদা, কার্তুজ/বন্দুক, হকিস্টিক, তীর ধনুক ও বল্লম।

বিপুলসংখ্যক মানুষের এই প্রতিরোধ পাকিস্তানি হানাদারদের বাধ্য করে পিছু হটতে। অস্ত্র না নিয়েই ফিরতে বাধ্য হয় তারা। ফেরার পথে জয়দেবপুর রেললাইনের অবরোধ সরাতে গেলে সংঘর্ষ হয় জনতার সাথে। পাক সেনাদের গুলিতে শহিদ হন নেয়ামত আলী ও মনু খলিফা নামের দুই সাহসী যুবক। আহত হন ডা. ইউসুফ ও সন্তোষসহ আরও কয়েকজন। এরপরই ফুঁসে ওঠে জনতা। একে একে জড়ো হতো থাকে তারা। ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।

উপায় না দেখে মাইকে কারফিউ ঘোষণা করে পাকিরা। লাভ হয় না তাতে। চান্দনা চৌরাস্তায় আবারও প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাকসৈন্যরা। জনতার ভিড়ে, অসংখ্য সাহসী তরুণের মাঝে একজন ছিলেন গাজীপুরের ফুটবল খেলোয়াড় ভোগরা নিবাসী চবেদ উল্লাহর ছেলে হুরমত ওরফে হুরমতুল্লাহ। তিনি খালি হাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন একজন পাক সেনার উপর। ছিনিয়ে নেন তার হাতের রাইফেল। এ সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া বলেন, ‘হুরমত জানতেন না কীভাবে রাইফেল চালাতে হয়। এটি দেখতে পেয়ে একজন পাক সেনা হুরমতকে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়।’ সে সময় ঘটনাস্থলে আহত হন কানু মিয়া, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 


গুগল ম্যাপে জাগ্রত চৌরঙ্গী

১৯ মার্চের সেই প্রতিরোধের স্মরণে নির্মিত হয় ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। ১০০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন ভাস্কর্যটি অনেক দূর থেকে চোখে পড়ে। ভাস্কর্যটির চারিদিকে আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৬ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ২০৭ জন বীর শহিদ মুক্তিযোদ্ধার নাম। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য এটি। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক

ভাস্কর্যটির অবস্থান : ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-জয়দেবপুরের সংযোগস্থল।

নির্মাণকাল : ১৯৭৩ সাল।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ডিজিটাল আর্কাইভে সংরক্ষণ করছে প্রিয়.কমমুক্তি পিন গাঁথুন, যুদ্ধকে জানুন।

 

প্রিয় ট্রাভেল/জিনিয়া/আজাদ চৌধুরী

প্রিয় ট্রাভেল সম্পর্কে আমাদের লেখা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে। যেকোনো তথ্য জানতে মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। ভ্রমণবিষয়ক আপনার যেকোনো লেখা পাঠাতে ক্লিক করুন এই লিংকে - https://www.priyo.com/post।