কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি কৃতজ্ঞতা: চিটাগং শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

'আমার কাজই একদিন আমার পরিচয় বহন করবে'

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৩
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৩

(প্রিয়.কম) পড়াশোনা শেষ করে একটা সময়ে জীবিকা অর্জনের জন্য কিছু করতে হবে- এটা বুঝে ওঠার পর থেকেই আমরা স্বপ্ন দেখি। নিজের জন্য পারফেক্ট একটা পেশার কথা ভাবি, যার সাথে জড়িয়ে থাকবে আমাদের ভালোবাসা, ভালোলাগা, অধ্যাবসায়। এই স্বপ্নটাকে ধরে রাখতে পারেন না অনেকেই, নেহায়েত পরিস্থিতির কারণে যেমন তেমন একটা পেশায় কাটিয়ে দেন জীবন। আজ আপনাদের বলব নাহিদা পারভীনের কথা, যে কিনা স্বপ্নটাকে হারিয়েও আবার খুঁজে পেয়েছেন, নিয়ে এসেছেন হাতের মুঠোয়। 

নাহিদা পারভীনের স্বপ্নও শুরু হয় ছোটবেলা থেকেই। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের “উত্তরা” সিনেমাটি তিনি দেখেন বিটিভিতে। তিনি এবং তার এক বন্ধু দুজনেই ভাবতেন, বড় হয়ে তারা এমন একটা সিনেমা তৈরি করবেন। কিন্তু সময়ের সাথে সেই স্বপ্ন আর সেই বন্ধু, দুটোকেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। 

কবিতা, গল্প লেখা এসবের মাঝেই সময় কেটে যায়। বাংলা সাহিত্য, চারুকলা বা সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পরিবারের সায় মেলেনি। শেষ পর্যন্ত নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পরিবারের পছন্দের একটি বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেন, চাকরিও পান ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে। 

আমাদের অনেকের জীবন চলে যায় এভাবেই। স্বপ্ন পূরণ হয়নি বটে, কিন্তু ভালো আছি তো!- এমন একটি ভাবনা নিয়ে। কিন্তু নাহিদা পারভীনের মনটা কেমন খাঁ খাঁ করতো। ভেতরে ভেতরে বিষণ্ণ হয়ে পড়ছিলেন তিনি।

“নিজের ভেতরের সেই বিষণ্ণ মানুষটার মুখোমুখি যখন দাড়াই তখন অজানা এক অসীম শূন্যতা আমাকে শুধুই গ্রাস করে। কি সেই শূন্যতা, কি সেই হাহাকার তার উত্তর খুঁজতেই নিজের ভেতরের যে আমি তার মুখোমুখি হই, বেরিয়ে আসে আমার ভেতরের সত্যিকারের মানুষটা,” এভাবেই অনুভূতিগুলোর কথা বলেন নাহিদা পারভীন। 

film festival

৩য় চিটাগং শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে নাহিদা পারভীন। ছবি কৃতজ্ঞতা: চিটাগং শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভাল

আর কত চেপে রাখা যায় নিজের ভেতরে? একদিন সবকিছুই খুলে বলেন জীবনসঙ্গীকে, নিজের সবচাইতে ভালো বন্ধুকে। তিনি বলেন, “নিজের মন যা চায়, তাই করো ।মনের উপর জোর চলে না।“

এই তো! এবারে মনের মাঝে ছোট্ট করে ভাঁজ করে রাখা স্বপ্নটাকে আবার মেলে ধরলেন তিনি। চাকরির পাশাপাশিই ভর্তি হলেন পাঠশালার ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের স্ক্রিপ্ট রাইটিং কোর্সে। 

ভর্তির সার্কুলারে উল্লেখ  ছিলো যে, যিনি স্ক্রিপ্ট রাইটিং কোর্সে প্রথম হবেন, তাকে পরবর্তী যেকোন কোর্সে ফুল ফ্রি স্কলারশিপ দেয়া হবে। নাহিদা পারভীন প্রথম হলেন, এরপর ফুল ফ্রি স্কলারশিপে শুরু করেন ফিল্ম ডিরেকশন কোর্স। 

“শিক্ষক হিসেবে সেই সময় পেয়েছিলাম জিকো ভাই, মেহেদী ভাই এবং সৈকত মল্লিকের মত গুণী মানুষদেরকে। মুলত উনাদের কাছেই আমার ফিল্ম মেকিং এর হাতেখড়ি,” জানান নাহিদা পারভীন। 

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেষ্টিভালের, সপ্তম সিনে ওয়ার্কশপে অংশগ্রহন করেছিলেন তিনি। সেখানে ওয়ার্কশপের অংশ হিসেবে একজন ইরানী ফিল্ম ডিরেক্টরের সাথে কাজ করার সুযোগ পান। কর্মশালা শেষে তাদের তৈরি শর্ট ফিল্মটি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেষ্টিভালে প্রদর্শীত হয়। সেইসময় নাহিদা পারভীন ধীরে ধীরে ফটোগ্রাফির প্রতিও ঝুঁকে পড়েন। কিছু বেসিক কোর্স এবং ওয়ার্কশপ করার পর ভর্তি হন পাঠশালার ফাউন্ডেশন কোর্সে। সেই সাথে চলছিল শর্ট ফিল্ম নির্মাণ।

নাহিদা পারভীনের তৈরি প্রথম স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলো ‘কনটেমপ্লেশন’। তা ৩য় চিটাগং শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে মনোনীত হয় এবং বেস্ট ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ড পায়। এখানে দেশ বিদেশ থেকে মোট ৮৪টি চলচ্চিত্র জমা পড়ে, ২০টি মনোনীত হয় যার মাঝে কনটেমপ্লেশন একটি। 

contemplation

নাহিদা পারভীনের শর্ট ফিল্ম কনটেমপ্লেশন।

“কনটেমপ্লেশন মূলত একটি মেয়ের গল্প বা আমার জীবনের অভিজ্ঞতার গল্প অথবা হাজার হাজার মেয়ের গল্প, যারা নানান প্রতিকুলতার মাঝে থেকেও জীবনযুদ্ধে হার মেনে না নিয়ে বরং সামনে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখে এবং সাহসের সাথে সামনে এগিয়ে যায়,” জানান নাহিদা পারভীন। এর গল্প, স্ক্রিপ্ট তারই তৈরি। ঢাকায় কয়েক জায়গায় প্রদর্শনী হলেও ঢাকার বাইরে এই প্রথম। তার তৈরি আরেকটি শর্ট ফিল্ম মুভিয়ানা আয়োজিত নতুন চলচ্চিত্র, নতুন নির্মাতা উৎসবে ঢাকা শিল্পকলায় প্রদর্শিত হয়।  

চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে যুক্ত হয়ে নিঃসন্দেহে কিছু বাঁধার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। অনেকেই তার মত নবীন নির্মাতার সাথে কাজ করতে আগ্রহী হন না। আবার নারী নির্মাতা বলেও অনীহা দেখান অনেকেই। নাহিদা পারভীন তার লক্ষ্যে অটল ছিলেন বলেই কখনো প্রতিকূলতাকে গুরুত্ব দেননি। বরং নিজের কাজটাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। 

“আমি বিশ্বাস করি, আমার কাজই একদিন আমার পরিচয় বহন করবে। আমি চাই আমাদের দেশের মেয়েরা আরো বেশী বেশী এই সেক্টরে এগিয়ে আসুক। ফিল্ম ডিরেকশন, সিনেমাটগ্রাফি, এডিটিং ইত্যাদির সাথে মেয়েরা আরো বেশী যুক্ত হোক,” জানান নাহিদা পারভীন। 

মুভিয়ানা

মুভিয়ানা আয়োজিত নতুন চলচ্চিত্র, নতুন নির্মাতা উৎসবে নাহিদা পারভীন।

তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো ফিল্ম নিয়ে আরো বেশী পড়াশুনো করা। বর্তমানে তিনি শর্ট ফিল্মের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখছেন। ভবিষ্যতে অভিজ্ঞতার ঝুলি আরো সমৃদ্ধ হলে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবতে পারেন। ফিল্মের পাশাপাশি ফটোগ্রাফি এবং পেইন্টিং নিয়েও কাজ করতে চান তিনি। এছাড়া কবিতা, আবৃত্তি, রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রতি আছে তার আকর্ষণ। “আমি যখন এই সকল সৃষ্টিশীল কাজের সাথে যুক্ত থাকি, তখনই আমি সবচাইতে বেশী আনন্দে থাকি, শান্তি এবং স্বস্তিতে থাকি, নিজেকে খুঁজে পাই,” বলেন তিনি। 

“আমি মনে করি জীবনে যেমন বাঁধা থাকবে , তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও বাঁধা আসতেই পারে। কিন্তু সেই সেই বাঁধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন এবং সাহস নিজের মনের মাঝে থাকতে হবে।স্বপ্নটাকে নিজের ভেতর লালন করতে হবে। সেই সাহসী স্বপ্নটাই একদিন মানুষকে তার সঠিক পথে নিয়ে যায়।“

প্রিয় লাইফ/ আর বি