কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

হাতীবান্ধা উপজেলার তালেব মোড় এলাকায় বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় এসব বসত বাড়ি। ছবি: প্রিয়.কম

লালমনিরহাটে বাঁধ ভেঙে লণ্ডভণ্ড বসতবাড়ি, মানবেতর জীবনযাপন বাসিন্দাদের

আসাদুজ্জামান সাজু
কন্ট্রিবিউটর, লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০১৭, ২১:৫৩
আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০১৭, ২১:৫৩

(প্রিয়.কম) লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেব মোড় এলাকায় স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের উদ্যোগে তিস্তা নদীর বাম তীরে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বন্যায় তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানির চাপে ভেঙে যায় ওই বাঁধটি। মুহূর্তের মধ্যে পানির ধাক্কায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ওই বাঁধের পাশের বসতবাড়িগুলো।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পার্শ্ববতী গড্ডিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিলেও এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষে বসতবাড়ি পুনর্নির্মাণ করে ঘরে ফেরা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থা লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার পরিবারের। তারা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সূত্র মতে, লালমনিরহাট জেলায় চলতি বন্যায় ৫টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ১ লক্ষ ২ হাজার ৭ শত ৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বসত বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও তাদের মাঝে অর্থ সংকটসহ দুর্ভোগ বেড়ে চলছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের মাঝে ২ শত ৪২ টন চাল ও ৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ত্রাণ হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।

ওই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানিক হোসেন ও কেতাবুর উদ্দিন বলেন, ৫ দিন আগে ভোর রাতে হঠাৎ করেই বাঁধটি ভেঙে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগে মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আমাদের বসতবাড়িগুলো। সব কিছু ফেলে জীবন বাচাঁতে আশ্রয় নেই গড্ডিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায়। আমরা পরিবার পরিজনদের নিয়ে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। আমরা নিম্ম আয়ের মানুষ। দিনে এনে দিনে খাই। বর্তমানে কাজ-কর্ম না থাকায় ধার-দেনা করে খেয়ে না খেয়ে আছি। বসতবাড়ি পুনর্নির্মাণ করব কীভাবে?

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী তালেব মোড় এলাকার রমজান আলী ও আব্দুর জলিল বলেন, হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় বসতবাড়ির সবই তিস্তার পানিতে ভেসে গেছে। এখন আমাদের আবারও নতুন করে সংসার সাজাতে হবে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আতিয়ার রহমান বলেন, আমি নিজ উদ্যোগে ওই বাঁধটি নির্মাণ করেছিলাম। ওই বাঁধ ভেঙে ১৮টি পরিবারসহ আমার ইউনিয়নে অর্ধ শতাধিক বসত বাড়ি বন্যায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। তাদের জরুরি পুনর্বাসন প্রয়োজন। তাদের ত্রাণ সহায়তা করা হচ্ছে। আমি স্থানীয় সংসদ সদস্যর সাথে কথা বলে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।

গড্ডিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, বেশ কিছু বন্যার্ত পরিবার বিদ্যালয়ের বারান্দা ও মাঠে অবস্থা নিয়েছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তাদের বসতবাড়ি পুনর্নিমাণ না হওয়া পর্যন্ত তারা থাকবে। তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে। হাতীবান্ধা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে আমরা ত্রাণ সহায়তা দিতে চেষ্টা করছি। যাদের বসত বাড়ি ভেঙে গেছে তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল অরিফ জানান, চলতি বন্যায় লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার ৩৫ ইউনিয়নের ১ লক্ষ ২ হাজার ৭ শত ৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আমরা প্রতিটি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিতে চেষ্টা করছি।

লালমনিরহাটের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন বলেন, প্রতিটি বন্যার্ত পরিবারকে পুর্নবাসনে সহায়তা দেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসাবে তার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

প্রিয় সংবাদ/শান্ত