কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ছবি: প্রিয়.কম

দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো || সবাই কী এখন সাংবাদিক?

মিজানুর রহমান
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০১৭, ২২:০২
আপডেট: ২৭ মে ২০১৭, ২২:০২

নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক সি. ডব্লিউ. অ্যান্ডারসন, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক লিওনার্ড ডাউনি জুনিয়র এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জার্নালিজমের অধ্যাপক মাইকেল শাডসন দ্য নিউজ মিডিয়া: হোয়াট এভরিওয়ান নিডস টু নো নামের একটি বই লিখেছেন। ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশ করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। বইটিতে লেখকরা সাংবাদিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন। সেই বই অনুসারে ধারাবাহিকভাবে অনুলিখন করছেন মিজানুর রহমান

আজকের বিষয়: সবাই কী এখন সাংবাদিক? 

(প্রিয়.কম) ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার আছে, এমন যে কেউই এখন নিউজ শেয়ার করতে পারে, সাংবাদিকতা করতে পারে। ডিজিটাল যুগের আগেও পাঠকদের সাংবাদিকতার সুযোগ ছিল, সিটিজেন জার্নালিজম। সিটিজেন জার্নালিজম করতে হলে তাকে সাংবাদিক হতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবে সে তার সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত। 

অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়মিত ও গভীরভাবে অনুসরণ করে, সেখানে ব্যাবহারকারীরা কী ছবি, ভিডিও ও তথ্য শেয়ার করে, সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করে। এমনকি কেউ যদি সরাসরিও তাদের কাছে কোনো তথ্য পাঠায়, তাহলে সংবাদমাধ্যম অত্যধিক গুরুত্বের সঙ্গে সেটি বিবেচনা করে, সেটির সংবাদমূল্য কতটা, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করে। এ বিশাল সংখ্যক পাঠক সবাই কোনো না কোনোভাবে সংবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট।

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা অলাভজনক ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম পো পাবলিকা  তাদের অনুসন্ধানের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বিশেষভাবে ব্যবহার করে। কোনো নির্দষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য পো পাবলিকা সামাজিক মাধ্যমে আলাদা কমিউনিটি গড়ে তোলে, যাতে তাদের অনুসন্ধানে সুবিধা হয়। যেমন অামেরিকার স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে প্রো পাবলিকা বেশ কয়েকবছর ধরে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে অাসছে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য সংবাদমাধ্যমটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলাদা কমিউনিটি গঠন করে, যেখানে কয়েক হাজার ব্যাবহারকারী প্রো পাবলিকার সাংবাদিকদের সাথে স্বাস্থ্য সেবার মান, নিরাপত্তা, সেবা ইত্যাদি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে। এ কমিউটিনিটি থেকে প্রো পাবলিকা ৫৬০ জন রোগীর কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানতে পেরেছে যারা সরাসরি ভুক্তভোগী এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী ১৫০ জনের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা ও রোগীর নিরাপত্তা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছে। এদের সবার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রতিষ্ঠানটির সাংবাদিকরা পুনরায় যাচাই বাছাই করে সেটি প্রকাশ করেছেন। 

মিনেসোটা ভিত্তিক আমেরিকান পাবলিক রেডিও  সংবাদ সম্পর্কে মানুষের মতামত ও তথ্যের এক অফুরন্ত আধার তৈরি করেছে, যার নাম পাবলিক ইনসাইট নেটওয়ার্ক (পিআইএন)। ওয়েবসাইটটির শুরুতেই পাঠকদের উদ্দেশে বড় করে লেখা আছে, ‘আপনার মতামত ও তথ্য সাংবাদিকদের আরও গভীরভাবে অনুসন্ধানে এবং সত্যকে উন্মোচন করতে সহায়তা করবে। যেগুলো হয়তো সাংবাদিকরা অন্য মাধ্যমে পেত না।’ ওয়াশিংট পোস্ট, মিয়ামি হেরাল্ড এবং শার্লোট অবজারভারসহ বহু গণমাধ্যম নিয়মিত পিআইএন অনুসরণ করে। এখানে যেকোনো একজন সাধারণ পাঠক যেমন যেকোনো তথ্য জানাতে পারে, একইভাবে কোনো সংবাদিকও একটি তথ্য দিয়ে পাঠকদের কাছে সংশ্লিষ্ট আরও তথ্য এবং কারও এ বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে কিনা, সেটি জানতে চাইতে পারেন। যেমন ফ্লোরিডার রাজ্য সরকারের শিশু স্বাস্থ্য ও স্বার্থবিষয়ক একটি ব্যর্থতার খবর মিয়ামি হেরাল্ড প্রথম পিআইএন-এ পেয়েছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে অনুসন্ধান করে সত্যতাও পেয়েছিল তারা এবং তাদের পত্রিকায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছিল। বহু গণমাধ্যম সংবাদের ট্রেন্ড, অালোচিত সংবাদ, গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ বাছাই করার জন্য পিআইএন অনুসরণ করে থাকেন। 

সাধারণ পাঠকদের কীভাবে সংবাদের সঙ্গে আরও বেশি সংযুক্ত করা যায়, সেটি নিয়ে অনেক গণমাধ্যমই বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। যেমন শিকাগোর অনেক পাবলিক রেডিও তাদের শ্রোতাদের কাছে সরাসরি জানতে চেয়েছে, তারা কোন কোন বিষয়ের সংবাদ পেতে চায়। এমনকি তারা সংবাদ বিষয়ক একটি ভোটের আয়োজনও করে, যাতে তারা শ্রোতাদের চাহিদা বুঝতে পারে এবং তাদের সাংবাদিকদের সেসব নিউজের বিস্তারিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দিতে পারে। শিকাগোর অনেক রেডিও স্টেশন পাঠকদের কাছ থেকে এভাবে পাওয়া নিউজ আইডিয়া থেকে বানানো নিউজ নিয়ে সাপ্তাহিক আলাদা অনুষ্ঠানও করে। 

নিউ ইয়র্কের ডব্লিউএসওয়াসি রেডিও স্টেশনটি নিউ ইয়র্ক শহরের মানুষদের সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য অনুদান পেয়েছে। নাইট ফাউন্ডেশন থেকে ৩.৯ মিলিয়ন ডলার অনুদান পেয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমস ও অলাভজনক প্রযুক্তি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান মজিলা যৌথভাবে নাইট-মজিলা ওপেন নিউজ নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যেটি সংবাদ নিয়ে অালোচনা সমালোচনা করা জন্য পাঠকদের জন্য একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম। লাইফস্টাইল এবং স্থানীয় ইস্যুতে পাঠকদের ব্লগ ও ছবি প্রকাশ করা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিল দ্য ডালাস মর্নিং নিউজ। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালে এ কাজের পাশাপাশি বিশেষ করে হিস্পানিক জনগোষ্ঠিকে আরও বেশি সাহায্য করার জন্য এবং সামাজিক মাধ্যমের আরও যথোপযুক্ত ব্যবহারের জন্য প্রতিষ্ঠানটি নাইট ফাউন্ডেশন থেকে আড়াই লাখ ডলার অনুদান পায়। 

সংবাদিকতার পরিসর বড় করতে সাধারণ পাঠকদের ওপর নির্ভরশীল হতে অনেকে আবার কোনো অর্থও খরচ করছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। যেমন হাফিংটন পোস্ট, ফোর্বস, মিডিয়াম কিংবা রেডিট’র মতো সাইটগুলোর বিশাল পাঠকগোষ্ঠী আছে। এরা পাঠকদের ব্লগ এবং লেখা প্রকাশ করে, কিন্তু এর বিনিময়ে তাদেরকে কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। ডিগিডে.কম এর তথ্য অনুসারে ২০১৪ সালে মিডিয়াম যত কন্টেন্ট প্রকাশ করেছে, তার শতকরা ৯০ ভাগই ছিল অানপেইড কন্ট্রিবিউটরদের। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের কম অর্থ পরিশোধ করার জন্য হাফিংটন পোস্ট এর সমালোচনা অাছে। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে আনপেইড কন্ট্রিবিউটরদের যেসব কন্টেন্ট ছাপা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভুল, স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও যৌনতার উপাদান এবং ভালোভাবে সম্পাদিত নয় বলে অভিযোগ আছে।

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরও অনেকভাবে পাঠকের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক দিনকে দিন আরও নিবিড় হচ্ছে। অথচ একসময় তাদের ভূমিকা শুধু পাঠক ছাড়া আর বেশি কিছু ছিল না।